মিজান রহমান, ঢাকাঃ টাঙ্গাইল-৮ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী আবদুল লতিফ মিয়া। মনোনয়নপত্র পূরণ করার সময় বানানে ভুল হওয়ায় নিজের নাম ও আসন নম্বর ফ্লুইড দিয়ে মুছে শুদ্ধ করেছিলেন তিনি। এতেই বাধে বিপত্তি। ফ্লুইড দিয়ে মুছে পরিবর্তনের কারণ দেখিয়ে তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের মনোনয়নপত্রটিও বাতিল করা হয়েছে। তার মনোনয়নপত্র বাতিল করার কারণ হিসেবে জেলা প্রশাসক তথা রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেছেন রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে প্রার্থী ঘষামাজা করেছেন। শুধু এই দুইটি আসনেই নয়, এমন ঠুনকো সব কারণে বাতিল করা হয়েছে শত শত মনোনয়নপত্র। গত ১০ই নভেম্বর রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একটি পরিপত্র জারি করে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বলা হয়েছিল—ছোটখাটো ত্রুটির জন্য কোনো মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না।
যদি বাছাইয়ের সময় এমন কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি নজরে আসে যা তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন সম্ভব তা হলে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীর দ্বারা তা সংশোধন করিয়ে নিতে হবে। ইসির এই নির্দেশনা সত্ত্বেও প্রার্থীর স্বাক্ষর নেই, টিপসই নেই, স্ট্যাম্প সংযোজন না করা, শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমান না দেওয়া, আয়কর রিটার্ন জমা না দেওয়া ইত্যাদি নানা কারণে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
এ বিষয়গুলোর আইনি ভিত্তি নিয়ে ইসি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এটি ঠিক হয়নি। ছোটখাটো ভুলের জন্য কারো মনোনয়নপত্র বাতিল না করে প্রার্থীকে ডেকে এনে সংশোধন করিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রার্থীরা আপিল করলে এসব কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তার মনোনয়ন বাতিলের সিদ্ধান্ত টিকবে না।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, আপিলে সবার প্রতি মেরিট দেখে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। কোনো ধরনের পক্ষপাত করা হবে না। গত ২ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাইয়ে ২ হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ ও ৭৮৬টি অবৈধ বলে ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা। এগুলোর মধ্যে বিএনপির ১৪১টি, আওয়ামী লীগের ৩টি এবং জাতীয় পার্টির ৩৮টি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ৩৮৪টি। অবশ্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ৫৪৩ জন প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছেন।
এর মধ্যে গতকাল বুধবার আপিলের শেষ দিনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সহ ২২২টি আপিল আবেদন জমা পড়েছে। এর আগে প্রথম দিন ৩ ডিসেম্বর ৮৪টি এবং দ্বিতীয় দিন ৪ ডিসেম্বর ২৩৭টি আপিল আবেদন জমা পড়ে। এসব আপিলের শুনানি আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে। এজন্য নির্বাচন ভবনের ১১তলায় ট্রায়াল রুম তৈরি করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ অন্যান্য কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। আজ সকাল ১০টা থেকে শুনানি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা।
এছাড়া তারা আরও জানান, শুনানিতে আপিলকারীরা তাদের আইনজীবী নিয়ে আসতে পারবেন। সেখানে আদালতের বেঞ্চের মতো করেই তারা মুভ করবেন। শুনানির প্রথম দিন আজ বৃহস্পতিবার ১ থেকে ১৬০, দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ১৬১ থেকে ৩১০ এবং তৃতীয় দিন শনিবার ৩১১ থেকে ৫৪৩ ক্রমিকের আপিলের শুনানি হবে।