মিজান রহমান, ঢাকাঃ বাংলাদেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে খেলাপি ঋণ প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে তা দাঁড়িয়েছে ৯৯৩.৭ বিলিয়ন টাকায়। ঋণের বিপরীতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১১.৪৫ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণের পরিমান ৯৯ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেছেন, এত বিপুল পরিমান খেলাপি অর্থনীতির জন্যে অশনিসংকেত।
গত বছর সেপ্টেম্বরে এ খেলাপি ঋণের পরিমান ছিল ৮০ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশে খেলাপি ঋণের পরিমান প্রায় ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এক বছরেই খেলাপি বেড়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি বা ২৫০.৬৭ বিলিয়ন টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর তদারকির পরও খেলাপি ঋণের পরিমান বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচনের পর আগামী সরকারের বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে খেলাপি ঋণ হ্রাসের ব্যাপারে। কারণ অব্যাহতভাবে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এরফলে পুরো অর্থনীতির ওপর খেলাপির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ব্যাংককিং খাত সংকটে পড়ছে।
তৃতীয় প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ শতাংশ যা টাকার অঙ্কে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে ৯ মাস আগেও ‘ক্লাসিফাইড’ বা শ্রেণীবিন্যাসকৃত ঋণের পরিমান ৯.৩১ শতাংশ থাকলেও তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১.৪৫ শতাংশে। ঋণ নিয়ে তা সঠিকমত পরিশোধ না করা অর্থনীতিতে এক অপসংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে সিনিয়র ব্যাংককাররা বলছেন। বড় আকারের ঋণ নিলেও তা পরিশোধ করছেন না ঋণগ্রহীতারা। ফলে আগের খেলাপির ওপর তা আরো চাপ সৃষ্টি করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ১১টি ব্যবসায়ী গ্রুপকে ঋণ পরিশোধের স্পষ্ট নির্দেশনা দিলেও তা কোনো কাজ করেনি এবং এসব গ্রুপ ঋণ নিয়েছে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি (১৫৩.২৬ বিলিয়ন টাকা)। এর আগে ২২টি বাণিজ্যিক ব্যাংক তাদের ঋণগ্রহীতাদের জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ঋণ পুনর্গঠনের অনুমোদনের প্রস্তাব পাঠায়।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সেরাজুল ইসলাম বলেছেন, সর্বশেষ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমান কমবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো খেলাপি আদায়ে সারাদেশে জোরদার তদারকি শুরু করবে। এদিকে ৯টি বিদেশি বাণিজ্যি ব্যাংকের খেলাপি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি (২৩.৮২ বিলিয়ন টাকা)। গত বছর চতুর্থ প্রান্তিকে এর পরিমান ছিল ২১.৫৪ বিলিয়ন টাকা। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস-এর চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেছেন, চতুর্থ প্রান্তিকে খেলাপি আদায় জোরদার করায় এর পরিমান কমবে। সাধারণত শেষ প্রান্তিকেই খেলাপি কিছুটা কমে আসে।