বেঙ্গলটুডে প্রতিনিধি, ঢাকাঃ দেশের আর্থিক খাতের বিরাজমান অব্যবস্থাপনা দূর করতে চায় সরকার। আর আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যেই ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) গঠন করা হয়েছে। তাই আর্থিক খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এ খাতের অব্যবস্থাপনা দূর করতে এফআরসি কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান সি কিউ কে মুসতাক আহমেদ। ২০শে জুলাই, শুক্রবার ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত "আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির ধারণাগত কার্যপ্রণালি" শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সেমিনার সঞ্চালনায় ছিলেন আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসান খসরু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইসিএবির প্রেসিডেন্ট দেওয়ান নূরুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া। আলোচক ছিলেন হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির পার্টনার সাব্বির আহমেদ, পরিচালক অডিট অ্যান্ড অ্যাডভাইজরি শেখ তারিকুল ইসলাম এবং মাহফেল হক অ্যান্ড কোম্পানির পার্টনার ওয়াসিকুল হক রিগান।সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন কালে স্নেহাশীষ বড়ুয়া আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির বিদ্যমান ও নতুন কার্যপ্রণালির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় তিনি সম্পদ, দায়, আয় ও ব্যয়, গোয়িং কনসার্ন, রিপোর্টিং পদ্ধতি, সমন্বিত ও একক বিবরণী, আর্থিক প্রতিবেদনের উপাদান, লাভ-ক্ষতির বিবরণী এবং অন্যান্য আয়ের ওপর তুলনা মূলক আলোচনা করেন। রাজস্ব নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনেক সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভ্যালুয়েশন এবং হিসাবমান অনুসারে ভ্যালুয়েশনের মধ্যে পার্থক্য দেখা যায়।
এক্ষেত্রে সমন্বয়ের মাধ্যমে এ ধরনের বিষয় নিষ্পত্তির পরামর্শ দেন তিনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফআরসির চেয়ারম্যান বলেন, আগামীতে যেসব হিসাবমান প্রচলন করা হবে, সেগুলো নিয়ে এখন থেকেই কার্যপ্রণালি তৈরির কাজ শুরু করেছে আইসিএবি। দেশের অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ডের তুলনায় আমরা অনেকাংশেই পিছিয়ে থাকি। কিন্তু আইসিএবি এক্ষেত্রে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে, এজন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। আর্থিক খাতের বিরাজমান আস্থা সংকটের বিষয়টি তুলে ধরে সি কিউ কে মুসতাক আহমেদ বলেন, একবার আস্থা সংকট তৈরি হলে সেটা ফিরিয়ে আনা কষ্টসাধ্য। দ্বাররক্ষক যদি সৎ না হয়, তাহলে যেকোন জায়গায়ই আস্থার সংকট তৈরি হবে। তাই আমরা এমনভাবে শুরু করতে চাই, যাতে সবার আস্থা অর্জন করতে পারি। এরই মধ্যে এফআরসিতে দুজন নতুন নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে, যারা আইসিএবিরই সদস্য। আরও দুজন নির্বাহী পরিচালক নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা মেধাবীদের এখানে আসতে উৎসাহিত করছি, যাতে আর্থিক খাতের উন্নয়নে তাদের কাজে লাগানো যায়। প্রয়োজনে দেশের বাইরে থেকেও পেশাদার কর্মী নিয়োগ করা হবে। অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাজের পরিধি বিস্তৃত হলেও এফআরসি শুধু আর্থিক প্রতিবেদন-সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা একা কাজ করে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনতে পারব না। পেশাদার হিসাববিদদের সংগঠন হিসেবে আইসিএবিকেও ভূমিকা রাখতে হবে। দেশের নিরীক্ষা খাতে সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে। আর তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির অবস্থা তো আরও শোচনীয়। তাই এফআরসিকে আমরা এক্সট্রা অর্ডিনারি হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছি, যাতে এর ওপর জনগণ নির্দ্বিধায় আস্থা রাখতে পারে। আইসিএবি প্রেসিডেন্ট দেওয়ান নূরুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক বোর্ড কর্তৃক প্রণীত আর্থিক প্রতিবেদন কার্যপ্রণালিতে বেশ কিছু গুরুত্ব বিষয় অনুপস্থিত, যা ব্যাপক ভাবে সমালোচিত হয়েছে। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ কার্যপ্রণালি পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি।