সন্দীপ ঘোষ, ঝাড়গ্রাম:
নবম স্থান অধিকার করেছে ঝাড়গ্রামের কেকেআই ইন্সটিটিউশনের ছাত্র অর্পন দ্বিবেদী। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলে উৎফুল্ল অর্পন। অর্পন ভালো চিকিৎসক হয়ে দুঃস্থ মানুষজনদের সেবা করতে চাই। তার মা ও স্বপ্ন দেখেন ছেলে চিকিৎসক হয়ে দুঃস্থ মানুষের সেবা করবে। তাই সকাল দশটা থেকে টিভির পর্দায় চোখ রেখে বসেছিলেন তাঁর মা। এই বুঝি ছেলের নাম ঘোষনা হবে। মাধ্যমিকে হয়নি এবার উচ্চমাধ্যমিকে হবে মনেতে এই জোর কাজ করছিল অপর্না দেবীর।
অবশেষে টিভির পর্দায় ভেসে উঠল বহু কাঙ্খিত তার নাম। সেই মুহুর্তের আনন্দ অপর্না দেবী ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিলেন না। ঝাড়গ্রাম শহরের কুমুদ কুমারী ইন্সটিটিউশনের ছাত্র অর্পন দ্বিবেদী এবার উচ্চ মাধ্যমিকে বিঞ্জান বিভাগে ৪৮২ নম্বর পেয়ে রাজ্যে মেধা তালিকায় সাম্ভাব্য নবম স্থান অধিকার করেছে। গনিতে অর্পন একশো নম্বর পেয়েছে। রসায়নে ৯৯, ভৌত বিঞ্জানে ৯৮, বায়োলজিতে ৯৭ পেয়েছে। অর্পনের একান্ত ইচ্ছা আগামীতে ভালো চিকিৎসক হয়ে ঝাড়গ্রাম জেলার দুঃস্থ মানুষের সেবা করা। ঝাড়গ্রাম শহরের বামদা এলাকার বাসিন্দা অর্পনের বাবা সোমনাথ দ্বিবেদী বেলপাহাড়ি এসসি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সোমনাথ বাবু নিজে শিক্ষক হয়েও ছেলেকে পড়াতে সাহায্য করত না পারলেও রাত জাগতেন ছেলের সঙ্গে।
অন্যদিকে অপর্না দেবী অর্পনের হাতে খড়ি থেকে শুরু করে ছোট বেলা থেকে একমাত্র সন্তান কে ঘরে থাকতেন। সপ্তম,অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত ছেলের পড়াশুনায় সাহায্য করতেন। কিন্তু পরে ছেলে নিজেই পড়াশুনা উদ্যোগ নিয়ে করে গিয়েছে। তার আট জন গৃহ শিক্ষক ছিল। তার বাইরেও দিনে রাতে সাত আট ঘন্টা পড়ত সে। মাধ্যমিকে আশা করেও মনের মতো ফল হয়নি এবার ছেলে ভালো ফল করায় বলতে বলতে খুশিতে আখি ছলছল হয়ে গেল ”
সোমনাথ বাবু বলেন, “ আমি এক জন বাবা নয় শিক্ষক হিসেবে বলতে পারি কোন ছাত্র নিজে চেষ্টা করলে কোথায় যেতে পারে । অর্পন নিজের পড়াশুনা নিজেই করেছে। আমি হয়তো রাত জেগেছি ওর সাথে কিন্তু নিজের পড়া ও নিজেই করেছে।”
অপরদিকে অর্পন এক মাত্র চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চায়।মায়ের স্বপ্ন স্বার্থক করতে চায়। সে বলে "গ্রামীন এলাকায় এখনো চিকিৎসা একটি ব্যয়বহুল ব্যাপার। আর সেই জায়গা থেকেই আমি আমার মায়ের স্বপ্নকে স্বার্থক করে তুলতে চাই। চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।” অবসরে টিভিতে ফুটবল খেলা দেখা তার বড় পছন্দ। এবার বিশ্ব কাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনার হয়ে মেসির পায়ের যাদু দেখতে চায় অর্পন।
প্রসঙ্গগত খবর পেয়েই ঝাড়গ্রামের ডাক্তার সাংসদ উমা সরেন শুভেচ্ছা জানান। তিনি নিজে দিল্লিতে থাকার জন্য, রামগড় পলিটেকনিকের প্রিন্সিপাল পার্থব্রত মাইতির মাধ্যমে তার হাতে পুষ্পস্তবক ও মিষ্টি সহ শুভেচ্ছা বার্তা পাঠান। সাংসদের শুভেচ্ছা পেয়ে অনুপ্রানিত হয়ে, আগামী দিন আরো ভালো করার অঙ্গিকার করে অর্পন।