রাজীব মুখার্জী, রানী রাসমণি রোড, কলকাতাঃ আজকের রানী রাসমণি রোডের সভা থেকেই এবার একলা চলার ডাক দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। গত লোকসভা নির্বাচন থেকেই এ দেশে সব থেকে জনপ্রিয় শব্দ "আচ্ছে দিন’'। আসমুদ্র হিমাচল আন্দোলিত করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে এসেছিলো বি. জে. পি.- র সরকার। মাঝে কেটে গেছে চারটে বছর।
একটানা জিতে আসা বি. জে. পি. র বিজয়ী রথের চাকা থেমে দাঁড়ালো সদ্য সমাপ্ত ৫ রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচনে। এই ফলাফলের প্রত্যাশা বি. জে. পি. কোনো বিরোধী কংগ্রেসও করতে পারেনি। বুথ ভিত্তিক সমীক্ষাকে ভুল প্রমান করে বি. জে. পি.- র হাতছাড়া হয়েছে তিনটি বিধানসভা, যেখানে তাদের সরকার ছিল। সেখানে সরকার গর্তে চলেছে কংগ্রেস। স্বভাবতই বি. জে. পি. নেতৃত্বের কপালে ভাঁজ,তাহলে "আচ্ছে দিন" কি এবার গেলো? আর এই ভোটের ফলাফল কংগ্রেসকে জুগিয়েছে নতুন অক্সিজেন, নতুন আশার আলো"।
শিবসেনা প্রধান রাজ ঠাকরে বলেন, "পাপ্পু এখন পরম পূজনীয়"। রাহুল গান্ধী কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর থেকে একের পর এক নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি তাঁর নেতৃত্ব প্রদানের যোগ্যতার উপরেই প্রশ্ন চিহ্ন করে তুলেছিল সেখানে তাঁর সভাপতি হওয়ার বর্ষপূর্তির দিনই তিন রাজ্যে ক্ষমতা দখল করল কংগ্রেস। যদিও কংগ্রেসের হাত থেকে মিজোরাম ছিনিয়ে নিয়েছে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট, তবু রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশে সরকার গড়বে তারা। স্বাভাবিক কারণেই এই জয়ে খুশি রাজ্য কংগ্রেসের নেতারাও। ফল এতটাই আশানুরূপ হয়েছে যে কর্মিদের চাঙ্গা করতে একদিনের ডেডলাইনেই সভা ডেকে ফেলেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। রান রাসমণি রোডের এই সভা থেকেই এবার আত্ম প্রত্যয়ী প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা একলা চলার ডাক দিলেন ।
[espro-slider id=16106]
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাইকমান্ডের সঙ্গে যতই যোগাযোগ রাখুক ভোটের বিষয়ে প্রদেশ কংগ্রেসের কথাই শুনবে শীর্ষ নেতৃত্ব, আশাবাদী প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতো নেতারা। প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরি, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান-সহ দীপা দাশমুন্সিরাও জোর গলায় এখন বলছেন রাজ্যে কংগ্রেসের একলা চলার ক্ষমতা আছে। তৃণমূল ত্যাগী প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রদেশ সভাপতি সেমেন মিত্রও এদিনের সভায় খুললাম খুল্লা দাবি করেন, তাঁরা একলা লড়াই করারই পক্ষে।
আজকের রানি রাসমণি রোডের সভায় দেখা গেল অন্য রাজ্যের ভোটের ফলাফলে বেশ উজ্জীবিত প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। রাজস্থান, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশে একলা লড়ে যে ফল কংগ্রেস করেছে, সেই ফল বাংলাও করতে পারে, এমনই দাবি করেছেন সোমেন-অধীর-মান্নানরা। সমঝোতাতো দূর, অধীর রঞ্জন চৌধুরি তো তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি তোপই দেগে বসেন।
প্রসঙ্গত এখন রাজ্য রাজনীতিতে কানাঘুষো শুনতে পাওয়া যাচ্ছে যে অধীর চৌধুরী শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চলেছেন। দিল্লিতে হাত ধরে বিজেপি বিরোধিতা করলেও রাজ্যে তাঁদের লড়াই যে শাসক দলের বিরুদ্ধেই তা আরও একবার পরিষ্কার করে দিলেন তিনি। বুধবারের সভা মঞ্চে দাঁড়িয়েই ‘সারদা-নারদা’র বিরুদ্ধে লড়ার কথা জানিয়েছেন অধীর। একই সঙ্গে মমতা বন্দোপাধ্যায়কে সরাসরি নিশানা করে তিনি বলেন, “দিদি, দিল্লি যাওয়ার আগে বাংলা সামলান। দিল্লির চেয়ার রাহুল গান্ধীর জন্য স্থির হয়ে গিয়েছে, সেখানে আর কারোর জায়গা হবে না।” একই সুরে তৃণমূলকে বেঁধেন বিধানসভায় কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক তথা মালদার বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তীও।
আজকের সভা শেষে সোমেন মিত্র জানান, " আমরা এই রাজ্যে একক শক্তিতে লড়বো।" তাঁর সুরে সুর মিলিয়েছেন দীপা দাশমুন্সি, প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতো নেতারাও। আজ বহু জায়গা থেকে মিছিল করে কংগ্রেসের সমর্থকেরা রানী রাসমণি রোডের সমাবেশে যোগ দেন ।
এই নির্বাচনী ফলাফলের উপরে দাঁড়িয়ে আগামী দিনে কংগ্রেসের কি সত্যিই "আচ্ছে দিন " আসছে কিনা তাঁর উত্তর এই দেশের সাধারণ মানুষ দেবেন ২০১৯- এর লোক সভা নির্বাচনের ভোটের মাধ্যমে।