রাজীব মুখার্জী, নবান্ন, হাওড়াঃ স্কুল শিক্ষা দফতর বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, এই রাজ্যের বেসরকারি প্রাইভেট স্কুলের মাসিক টিউশন ফিস সংক্রান্ত নতুন খসড়া প্রস্তাব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে পাঠানো হয়েছে এবং এই প্রস্তাবটি মূলত এই রাজ্যে প্রাইভেট স্কুল গুলোর ক্রমবর্ধমান অস্বাভাবিক স্কুল ফিস নিয়েই। এই প্রস্তাবে যথেষ্ট উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং এই স্কুল ফ্রিজ কিভাবে কম করা যায় সেই সংক্রান্ত প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
নবান্ন সূত্রে জানানো হচ্ছে, এই প্রস্তাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সম্মতি দিলেই তা খুব শীঘ্রই ক্যাবিনেট বৈঠকে পেশ করা হবে এবং পরবর্তীকালে বিধানসভায় এই সংক্রান্ত বিলটি পাস করানো হবে জানান রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী। যেটা ২০১৯ সালের এই রাজ্যের সমস্ত প্রাইভেট স্কুল গুলোর স্কুল ফিস অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করতে সহায়ক হবে। এই খসড়া প্রস্তাবে বহু কিছু বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। মূলত যে রিপোর্টটি জমা করা হয়েছে তাতে রাজ্যের সমস্ত স্কুলগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
মূলত বিভাগ গুলো হলো তাদের বর্তমান স্কুল ফ্রিজ কি আছে। কতদিন পুরনো স্কুল। কোথায় অবস্থিত। কত জন্য শিক্ষক আছেন ও শিক্ষক -ছাত্র অনুপাত কত। কতজন নন - টিচিং স্টাফ আছেন স্কুলে। নন - টিচিং স্টাফ ও শিক্ষকদের মাইনে কত। স্কুলের বিল্ডিং এর অবস্থা কেমন। ক্লাস রুমের পরিস্থিতি কেমন। কি কি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে স্কুলের থেকে। স্কুলে লাইব্রেরী আছে কিনা। স্কুলে ল্যাবরেটরি আছে, নাকি না। যারা শিক্ষকতা করছেন তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটা। এই সমস্ত বিষয় গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এই খসড়া প্রস্তাবে। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। এখানে প্রস্তাবে বলা হয়েছে বছরে একবারই স্কুল গুলিকে টিউশন ফিস বাড়ানোর অধিকার দেওয়া হবে।
বছরের মাঝখান থেকে কোনো স্কুলকে টিউশন ফি বাড়াতে দেওয়া যাবে না। স্কুল গুলি কতটা টিউশন ফিস বাড়াবে তা সরকার নিযুক্ত কমিটির সাথে আলোচনা করেই বাড়াতে হবে বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি। তাঁর মতে রাজ্যের প্রাইভেট স্কুলগুলি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি অতিরিক্ত স্কুল ফিস নিচ্ছে। স্কুল শিক্ষা মন্ত্রক থেকে এই রিপোর্টে একটি নির্দিষ্ট স্কুল ফিস পরিকাঠামোও তৈরি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যেটা প্রতিটি স্কুলকে মেনে চলতে হবে। গোটা রাজ্যজুড়ে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত স্কুল ফিস নেওয়া চলছে তা অবিলম্বে বন্ধ হওয়ার দরকার এবং তা বন্ধ করতে এই মর্মে একটি বিল বিধানসভায় পাস করানো হবে।
[espro-slider id=14947]
যথেচ্ছ হারে ফি বৃদ্ধি, ছাত্রছাত্রীদের উপর 'নিপীড়নে'র অভিযোগ পেয়ে এবার বেসরকারি স্কুলের উপর এভাবেই নিয়ন্ত্রণ আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই মর্মে গত সোমবারও বিধানসভায় সেকথা জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশি ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বেসরকারি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলির জন্য নিয়মাবলী বেঁধে দেওয়ারও পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার।
এই দিন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান রাজ্যে বেসরকারি স্কুলগুলির বাড়বাড়ন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, "রাজ্যে বেসরকারি স্কুল ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়ছে, সরকারি স্কুলে ছুটি বাড়ছে অথচ বেসরকারি স্কুলে বাড়ছে না কেন? " বিরোধী দলনেতার প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "বেসরকারি স্কুলের নামে অন্য কিছু চলছে কিনা তা দেখতে হবে। এরা স্কুল খোলার সময় কেন্দ্রের অনুমোদন নিচ্ছে কিন্তু রাজ্যের কাছ থেকে আর কোনও ছাড়পত্র নিচ্ছে না। সেখানে আদৌ কেমন পঠন-পাঠন হয়, স্কুলের পরিবেশ কেমন, সেসব বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হবে। একজনের নাম করে স্কুল খুলছে আর অন্যজনের নাম দিয়ে চালাচ্ছে। ব্যাঙের ছাতার মতো ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো গজিয়ে উঠছে। অথচ ভিতরে কী চলছে তা কেউ জানতে পারছে না। এবার বেসরকারি স্কুলের উপর নিয়ন্ত্রণ আনবে সরকার।"
প্রসঙ্গত বেসরকারি স্কুলের স্বেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের অভিযোগ আগেও উঠেছিল, মূলত অভিযোগ ছিল - যখন ইচ্ছা ফি বৃদ্ধি, ডোনেশনের জন্য চাপ দেওয়া, ছোট ছোট শিশুদের নিরাপত্তায় গাফিলতি। সম্প্রতি শহরের একাধিক নামি দামি স্কুলেও খুদে পড়ুয়াদের শ্লীলতাহানিরও অভিযোগ উঠেছে। শীঘ্রই বেসরকারি স্কুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিধানসভায় বিল আনার ইঙ্গিতও দিয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
ওই দিন বিধানসভায় শিক্ষামন্ত্রীকে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করেন কংগ্রেস বিধায়করা। তাদের প্রশ্নের উত্তরে পার্থবাবু জানান, গত একবছরে রাজ্যে স্কুলছুটদের সংখ্যা কমেছে। শিক্ষক নিয়োগেরও সদিচ্ছা রয়েছে রাজ্যের। তবে বিরোধীদের বাধার জন্যই তা করা সম্ভব হচ্ছে না। নিয়োগ করতে চাইলেও আদালতে গিয়ে তা আটকে যাচ্ছে। " স্কুল ফিসের সাথে সাথে পড়াশোনার যে চাপ খুদে বাচ্ছাদের উপরে চাপানো হচ্ছে সেই নিয়েও আগামীদিনে সরকারের ভাবনা আছে বলে জানান শিক্ষা মন্ত্রী। সিলেবাস নতুন করে পর্যালোচনা করার বিষয়েও রাজ্য সরকার চিন্তা ভাবনা করছে বলে মন্ত্রক সূত্রের খবর।