পিতৃ-মাতৃকুলের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
রোটারিয়ান স্বপন কুমার মুখোপাধ্যায়
আমার পিতৃদেব স্বর্গীয় অক্ষয় কুমার মুখোপাধ্যায় হলেন আমার পিতামহ ডাক্তার নরেন্দ্র কুমার মুখোপাধ্যায়ের ও পিতামহী নিভাননী দেবীর মেজ ছেলে। আমার পিতার জন্ম হয় ১৯০০ খ্রিস্টাব্দের মাঘী পূর্ণিমার দিন ঢাকা শহরে। আমার পিতা বহুবিধ গুনের অধিকারী ছিলেন। ঢাকার সরকারি পোগোস স্কুল থেকে ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ম্যাট্রিক পরীক্ষায় দশটা বিষয়েই প্রথম স্থান অর্জন করে দশটা সোনার মেডেল অর্জন করে সসম্মানে উত্তীর্ণ হন। তারপর হুগলী জেলার চুঁচুড়ার মহসীন কলেজের আই.এস.সি.-তে ভর্তি হয়ে দু’বছর পর অর্থাৎ ১৯১৯ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই.এস.সি. পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এই পরীক্ষায় তাঁর নম্বর ছিল অঙ্কে ২০০-এর মধ্যে ২০০, রসায়নে ২০০-এর মধ্যে ১৯৫, পদার্থ বিদ্যায় ২০০-এর মধ্যে ১৮৭ এবং ইংরাজিতে ৮৬%। আই.এস.সি. পাশ করার পর কলকাতার সরকারি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন বি. এ. ক্লাসে। ওনার পাঠ্য বিষয় ছিল ইংরাজি অনার্স ও অঙ্ক এবং অর্থনীতি।
তদানীন্তনকালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে কলা বিভাগে ছাত্র হলে তৃতীয়বর্ষে কলাবিভাগের কোন পাঠ্য বিষয় পরীক্ষা দিতে হত। আমার পিতা সংস্কৃত পাঠ্যবিষয়ে ১৯২০ সালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়ে সংস্কৃত পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর ১৯২১ সালে বি.এ.-এর ফাইনাল পরীক্ষায় অনার্সে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং বিগত দশ বছরের ওই পরীক্ষায় প্রত্যেকটি প্রথম স্থান অধিকারীর উত্তরপত্র পরিক্ষার পর পিতৃদেবকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হওয়ার পর তাকে লাহা স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এরপর ১৯২৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজিতে এম.এ.ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেনিতে প্রথম স্থান অধিকার করে তাঁর অনবদ্য মেধার পরিচয় দেন। তদানীন্তনকালে মেধাবী ছাত্র ও বিত্তবান ঘরের ছেলেরা বিলেত যাত্রা করে আই.এস.সি. (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস ) পরীক্ষা দিতেন এবং সাফল্য লাভ করলে, ভারতে প্রত্যাবর্তন করে পরাধীন ভারতে সরকারের নিয়োজিত কোনো জেলাশাসক অথবা সরকারি উচ্চপদে নিয়োজিত হতেন। কিন্তু ওই পরীক্ষায় সাফল্যলাভ না করলে লন্ডনে আইন পরীক্ষয় পাশ করে ব্যারিস্টার হয়ে কোনো প্রাদেশিক উচ্চ আদালতে আইনজীবী হতেন।
আমার পিতারও তাই ইচ্ছা ছিল কিন্তু আমার পিতামহীর আপত্তি থাকার জন্য তাঁর বিলাত যাওয়া হয়নি। কিন্তু তিনি বি.সি.এস. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে আদালতে সরকারি কর্মচারী হন কিন্তু পরাধীন ভারতে ইংরেজ জেলাশাসকের সঙ্গে তীব্র মতবিরোধের ফলে ব্রিটিশ সরকারের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেন এবং কলকাতা বঙ্গবাসী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধক্ষ্যের (গিরীশ বসু) অনুরোধে কিছুদিন ইংরাজি সাহিত্যের অধ্যাপকের কাজ করেন। পরবর্তী কালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এল. পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে হাওড়া জেলা আদালতে ভারত বিখ্যাত আইন ব্যবসায়ী বরোদাপ্রসন্ন পাইনের কাছে তাঁর জুনিয়ার হয়ে আইন ব্যবসায়ে নিজেকে নিয়োজিত করেন এবং স্বল্পকালের মধ্যেই বিশিষ্ট আইনজীবী হিসাবে নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।
ছাত্র অবস্থায় আমার পিতৃদেব বহুবিধ গুনের পরিচয় দেন। তিনি কালীঘাট স্পোর্টস ও বেহালা স্পোর্টসে নানা ইভেন্টে যোগদান করে চ্যাম্পিয়ন আখ্যালাভ করেন। কলকাতা গ্রিয়ার স্পোর্টিং ক্লাব একবারই বাইটন হকি কাপ চ্যাম্পিয়ন হয় এবং সেই টিমের সেন্টার হাফ ছিলেন আমার পিতৃদেব। আমার পিতৃদেব ও ব্যায়ামাচার্য বিষ্ণুচরন ঘোষ একসঙ্গে গোয়াবাগানের অধিবাসী এশিয়া চ্যাম্পিয়ন কুস্তীগীর গোবরবাবুর কাছে কুস্তিশিক্ষা নেন। রাষ্ট্র গুরু সুরেন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে ছোটভাই কানাই বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন ভারতশ্রেষ্ঠ লাঠি ও ছোরা খেলোয়াড়। আমার পিতা তাঁর কাছে লাঠি ছোরা খেলায় বুৎপত্তি লাভ করেছিলেন কলকাতা নিউমার্কেটের বিখ্যাত Flower Stall-এর মালিক শিয়ালদার ডিক্সন লেনের অধিবাসী ধিরেন মুখার্জি ছিলেন পিত্রিদেবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ওঁরা দুজনে মিলে “শিয়ালদা স্পোর্টিং ক্লাব” প্রতিষ্ঠা করেন। এই ক্লাবে নিজস্ব “ব্যায়ামাগার” ছিল আর এদের মূল উদ্দেশ্য ছিল-“Tag of war”event-এ Bengal Champion Army Team “Royal Gunners”-কে পরাজিত করে আমার পিতার অধিনায়কত্বে Sealdah Sporting Club “Tag of War” Event-এ Bengal Champion হয়।
কলিকাতা বিশ্ব বিদ্যালয়ে এম.এ. ও ল’ পড়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন Hardenge Hostal-এ পিতৃদেব বসবাস করেন। সেই সময় বাংলার বাঘ স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ছিলেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। স্যার আশুতোষ আমার পিতৃদেবকে তাঁর বহুবিধ গুনের জন্য খুব স্নেহ করতেন ও সর্দার বলে সম্বোধন করতেন। হোস্টেলের একতলায় যে ব্যায়ামাগারটি আজও আছে সেটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আমার পিতৃদেব। এখনও তাঁর ছবি ওই ব্যায়ামাগারে শোভা পাচ্ছে। স্যার আশুতোষ ওই ব্যায়ামাগার প্রতিষ্ঠার সময় ৫০০ টাকা দান করেন। আমি যখন ১৯৬০ সালে আইনের ছাত্র ছিলাম তখন ওই হোস্টেলে যাই-তখন ওই হোস্টেলের ব্যায়ামাগারের দায়িত্বে ছিলেন বিশ্বশ্রী মনোতোষ রায়। ওই সময় মেজর পি.কে. গুপ্ত-র (যাদের গুপ্ত প্রেস পাঁজী) Wrist Strength-এর Bengal Record আমার পিতৃদেব ভেঙ্গে দেবার জন্য মেজর গুপ্ত Y.M.C.A-এর Overtoon Hall.-এ (কলেজ স্ট্রিট)তাঁকে সম্মানিত করেন।
১৯২১ সালে অধ্যাপক ও নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ীর দক্ষ পরিচালনায় “ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট” হলে “চন্দ্রগুপ্ত” নাটকটি মঞ্চস্থ করা হয়। কলকাতার কলেজগুলি থেকে ছাত্রদের এই নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করার জন্য শিশিরবাবু নির্বাচিত করেন। ওই নাটকের প্রধান চরিত্র “চানক্য” চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আমার পিতৃদেবকে নির্বাচিত করা হয় এবং শিশিরবাবুর বিচারে আমার পিতৃদেবের ‘চানক্য’ চরিত্রটি শ্রেষ্ঠ অভিনীত চরিত্ররূপে নির্বাচিত হন। পরবর্তীকালে আমার পিতা তাঁর অভিনয় দক্ষতার জন্য শিশির বাবু, নরেশ মিত্র, মনরঞ্জন ভট্টাচার্য, তিনকড়ি চক্রবর্তীর মত দিকপাল অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগলাভ করেন। ১৯২২ সালে দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই কন্যা রমা ও চিত্রা প্রেসিডেন্সি কলেজের ইংরাজি অনার্স নিয়ে বি.এ. ক্লাসে ভর্তি হন। সেইসময় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি বিভাগের অধ্যাপক ও ভাষাতত্ত্ববিধ ডা. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেন রমা ও চিত্রাকে পড়ানোর জন্য কিন্তু উনি গবেষণার কাজে খুব ব্যস্ততার জন্য রবীন্দ্রনাথের কাছে আমার পিতৃদেবকে পাঠান এবং সঙ্গে তাঁর সম্বন্ধে একটি লিখিত পরিচয়পত্র দেন। কবি গুরু আমাদের পরিবারের পরিচয় এবং পিতৃদেবের অসাধারন পান্ডিত্যের কথা জেনে প্রীত হন। এই রূপে রমা ও চিত্রার গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হয়ে ক্রমে ঠাকুরবাড়ির গুরুজন ও ছেলেমেয়েদের সান্নিধ্যলাভ করেন। একাধিকবার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্যদের সঙ্গে বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করার সুযোগলাভ করেন।
আমার পিতৃদেব কন্ঠসঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীতেও সমান পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের মধ্যে খেয়াল, ঠুংরী, ধ্রুপদ, টপ্পা ও বাঙ্গলা রাগ সঙ্গীত এবং বাজনার মধ্যে তবলা বাজাতেন। আমাদের পৈতৃক বাড়ি বালিতে প্রতি শনিবার রাত্রি, রবিবার সারাদিন ও রাত গানবাজনার আসরে যারা নিয়মিত আসতেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ওস্তাদ জ্ঞানেন্দ্রপ্রসাদ গোস্বামী, কাশীনাথ চ্যাটার্জি, সত্যেন ঘোষাল, ভীষ্মদেব চ্যাটার্জি, শচীনদাস মতিলাল, ধীরেন মিত্র, কালীপদ পাঠক (টপ্পা), অমর ভট্টাচার্য (ধ্রুপদ), ওস্তাদ মজিদ খান (তবলা), ওস্তাদ আলী আমেদ খাঁ (সেতার), হীরু গাঙ্গুলি (তবলা), কেবলবাবু (পাখোয়াজ), সাগীরুদ্দীন খাঁ (সারেঙ্গী), মন্টু ব্যানার্জি (হারমোনিয়াম), তারাপদ চক্রবর্তী, রাইচাঁদ বড়াল, পঙ্কজ মল্লিক আরও অনেকে। সবার নাম আমার মনে নেই। যদিও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির নাম ছিল “মহর্ষি ভবন” কিন্তু ওই বাড়ির সংলগ্ন সামনের বিশাল জমির উত্তরদিকে মূল বাড়িটিকে পরবর্তীকালে বর্ধিত করে ওই নতুন অংশের নামকরন হয় “বিচিত্রাভবন”। ওই বাড়ির দোতলার হলঘরে যেখানে বর্তমানে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি-বিজড়িত বহু উপকরন সাজিয়ে মিউজিয়াম করা হয়েছে সেখানে রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় প্রতি বুধবার বিকেলে কবিগুরুর সভাপতিত্বে সাহিত্যের আসর বসতো। বাংলা-সাহিত্যের দিকপাল ব্যক্তিত্বরা সেখানে অংশগ্রহন করতেন। রবীন্দ্রনাথের আনুকূল্যে সেই আসরেই আমার পিতৃদেবের সঙ্গে অনেকের পরিচিতি ঘটে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আমার বালির বাড়িতে যাতায়াত করতেন যথা কথা-সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র, কাজী নজরুল ইসলাম, সৌমেন ঠাকুর, গুরুসদয় দত্তর স্ত্রী সরলাবালা দেবী, আরও অনেকে কিন্তু তাঁদের নাম আমার মনে নেই।
আমাদের বালির বাড়িতে বিরাট মাঠ, বাগান, পুকুর, গোরু, কুকুর, বেড়াল, হরিন ও কাকাতুয়া ছিল। এদের আমি দেখেছি। প্রচুর কাঁঠাল গাছ, বেলগাছ, একাধিক নারিকেল গাছ, বাতাবীলেবুর গাছ, পেয়ারা গাছ, জামরুল গাছ, নিমগাছ, পাতিলেবুর গাছ ছিল। পুকুরে প্রচুর মাছ ছিল। বালির যুবকদের শরীরচর্চার জন্য বাড়িতে ব্যায়ামাগার তৈরি করেছিলেন আমার পিতৃদেব।
আমাদের বালির বাড়ি থেকে হাওড়া জেলা আদালতে যাতায়াতের সুবিধার জন্য তাঁর জীবনের একটা সময়ে একেবারে একলা ওই বাড়িতে বসবাস করতেন। কারন আমার পিতামহ সেসময়ে চুঁচুড়ার বাসাবাড়িতে তাঁর অবসরপ্রাপ্ত জীবনে রোগীদের চিকিৎসা করে নিজেকে হুগলী জেলার শ্রেষ্ঠ চিকিৎসকরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। পিতামহের বড় ছেলে ড. সতীশচন্দ্র ছিলেন সরকারি ডাক্তার। আমার জন্মের সময়ে তাঁর পোস্টিং ছিল অবিভক্ত বাংলার ময়মনসিংহে। পিতৃদেব হাওড়া জেলা আদালতে ওকালতি করতেন বলে বালির বাড়িতে থাকতেন। তিনি প্রতি শনিবার চুঁচুড়ার বাড়িতে আসতেন এবং রবিবার রাত্রে বালির বাড়িতে ফিরে যেতেন। মা ও আমি ও আমার বোনেরা চুঁচুড়ায় থাকতাম। সেজকাকু আলিপুর জেলের জেলার ছিলেন এবং কাকিমা ও তাঁর দুই মেয়ে টুনি আর বেনুকে নিয়ে জেলের চৌহদ্দির মধ্যে সরকারি কয়াটারসে বসবাস করতেন। ন’কাকু তখন ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজের ছাত্র এবং কলেজ হস্টেলে থাকতেন। আর ছোটকাকু ক্যালকাটা সেন্টপলস কলেজের Intermediate Arts এর প্রথম বার্ষিকীর ছাত্র এবং কলেজ প্রাঙ্গণের মধ্যে অবস্থিত “জ্ঞানী আলী” হস্টেলের বোর্ডার। পিসিদের মধ্যে বড় পিসিমার বিয়ে হয়ে গেছে। উনি তখন চুঁচুড়ার পিপুলপাতি মোড়ের কাছে “দি আশ্রম” নামে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করেন। মেজ পিসিমার বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি চুঁচুড়ার হাসপাতালের কাছে সুজন বাগানের শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করতেন। সেজ পিসিমার বিয়ে হয়েছিল হাওড়ার কালিবাবুর বাজারের কাছাকাছি রাজবল্লভ সাহা লেনে। তিনি সেখানে কিছু মাস বাস করলেও- ওদের পারিবারিক অশান্তির কারনে বাপের বাড়ি অর্থাৎ চুঁচুড়ার বড়বাজারের বাড়িতে চলে আসতে বাধ্য হন ও আজীবন বাবা-মায়ের কাছে ছিলেন। ন’পিসিমার বিয়ে হয়েছিল এঁড়েদার ঘোষাল পরিবারের সন্তান ড. অমর ঘোষালের সঙ্গে এবং তাঁরা বাস করতেন কলকাতার আমেদ ডেন্টাল হাসপাতালের লাগোয়া উত্তরদিকের বাড়িটায়। ছোট পিসিমার তখনও বিয়ে হয়নি। উনি চুঁচুড়া আদালতের দক্ষিনদিকের বিশাল মাঠের ধারে “বানী মন্দির গার্লস স্কুলের” ছাত্রী ছিলেন। সুতরাং চুঁচুড়ায় বড়বাজারের বাড়িতে আমার পিতামহ, পিতামহী, সেজ ও ছোট পিসিমা, আমার মা, মেজদি, আমি, আমার সেজ বোন ও পিতামহীর এক ভাইপো। আমার বড়দিদি দাদামশাই-এর কাছে বড়িশা সাবর্ণপাড়ায় ছেলেবেলা থেকে বড় হতে থাকে। ১৯৩৯ সালে আমার ন’বোনের চুঁচুড়ায় জন্ম হয়।
এই পরিস্থিতে পিতৃদেব আমার বালির বাড়িতে বসবাস করতেন এবং ১৯৩০ সাল থেকে “বালি মিউনিসিপ্যালিটির” কমিশনার নির্বাচিত হন ও পরবর্তীকালে ডেপুটি চেয়ারম্যান হন যখন আনন্দগোপাল মুখোপাধ্যায় ওই মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। বালি, বেলুড় ও লিলুয়া নিয়ে হল ওই মিউনিসিপ্যাল এলাকা। বেলুড় মঠের তদানীন্তন মহারাজদের মধ্যে ভরত মহারাজ আমাদের বালির বাড়িতে প্রায়ই আসতেন আমার পিতৃদেবের কাছে। আমার পিতৃদেব ওনার খুব স্নেহধন্য ছিলেন। শুনেছি সেইসময় পিতৃদেব বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনকে ব্যক্তিগতভাবে এবং মিউনিসিপ্যালিটির পক্ষ থেকে প্রচুর আর্থিক সহায়তা দিতেন মিশনের সেবামূলক কাজের জন্য।
ক্রমশ….