মিজান রহমান, ঢাকা:
প্রস্তাবিত বাজেটের অনেক কিছুই আছে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো। আবার যে দিকগুলোতে ব্যবসায়ীদের আপত্তির সুযোগ আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা সরকারে উচ্চ মহলের সঙ্গে বসে আলোচনা করে ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করব। তাই এই বাজেটকে ভালো-খারাপ বলে মন্তব্য করেতে চাই না। অন্যদের মতো গরিব মারার বাজেট কিংবা উচ্চাভিলাষী বাজেটও আমরা বলতে চাই না। ৯ ই জুন শনিবার বাংলাদেশের রাজধানীর ফেডারেশন ভবনে আয়োজিত বাজেট পর্যালোচনায় এসব কথা বলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতৃবৃন্দ। এফবিসিসিআই সভাপতি মো. সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সম্মেলনে জাতীয় বাজেটের ওপর লিখিত মতামত উপস্থাপন করেন। সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, সহ-সভাপতি মো. মুনতাকিম আশরাফ সহ অন্যান্য পরিচালকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাজেট বাস্তবায়নে অর্থায়ন ও অর্থব্যয় সঠিকভাবে করতে না পারার উপর জোর দিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং তদারকের মান নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকার যে এক লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে, তাতে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেদিকে সরকারের দৃষ্টি চেয়েছেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, মুষ্টিমেয় স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন বজায় রাখতে এদের শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি। এফবিসিসিআই সভাপতি আরও বলেন, ব্যাংকের টাকা জনগণের আমানত। এই টাকা যারা লুট করে, এফসিসিআই তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেসি করবে না। সফিউল ইসলাম বলেন, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যে গতিতে বাড়ছে, রাজস্ব আয় যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই হারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়নি। এনবিআর এর সক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেছেন, বিচারাধীন কোনও বিষয়ে মন্তব্য করবো না। যারা ব্যাংকের টাকা লুট করেছে, আমরা তাদের শাস্তি চাই। সবার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যদি কেউ কোনও বিশেষ সুবিধা নিয়ে কাজ না করে তা দেখার দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের।
পোশাক শিল্পের কর্পোরেট কর বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য কর্পোরেট করের হার ১৫ শতাংশ নির্ধারণের ঘোষণা দিয়েছেন যা বর্তমানে ১২ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রিন কারখানার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ১২ শতাংশ যা বর্তমানে ১০ শতাংশ। কর্পোরেট করহার বৃদ্ধির কারণে তৈরি পোশাক শিল্পে পুনঃবিনিয়োগের অর্থের যোগানে স্বল্পতা সৃষ্টি হবে- যা এ শিল্পের বিকাশে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে পোশাক খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে কর্পোরেট হার ১২ শতাংশ ও সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে পূর্বের ন্যায় ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করছি। বিগত অর্থ বৎসরে পোশাক খাতে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ০.০২% হয়েছে। পোশাক শিল্প খাত অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স সহ আন্তর্জাতিক চাহিদা পূরণকল্পে মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে কমপ্লাইন্স ইন্সু পূরন করেছে। এতে পোশাক খাতের শিল্পগুলো আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। গত দুই বছরে কস্ট অব প্রোডাকশন বেড়েছে ১৮%। তাই বর্তমান বাজেটে পোশাক খাতে কর্পোরেট কর বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে এ খাতের বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত ও প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে। রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে সে সময়ে উৎসাহব্যঞ্জক প্রণোদনা না দিয়ে কর্পোরেট করহার বৃদ্ধি বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত এবং বাধাগ্রস্ত করবে।