শান্তনু বিশ্বাস, বনগাঁ :
প্রেম অনন্ত, প্রেম ঐশ্বরিক, প্রেমে কোন দেনা পাওনা থাকে না, প্রেমে নিজেকে একে অপরের জন্য বিলিয়ে দিয়েই প্রেমিক-প্রেমিকারা সার্থকতা খুঁজে পায়। কিন্তু প্রেমে কখনই কিছু না পেয়ে নিজের জীবন ত্যাগ করে না আর তাই যদি করা হয় তাহলে প্রেমের সার্থকতা নিয়েই প্রশ্ন থেকে যাবে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ভ্যালেন্টাইন্স ডে কি তা জানতে হলে জানতে হবে ঠিক কি হয়েছিল ২৭৮ খ্রিষ্টাব্দে? ২78 খ্রিস্টাব্দে, সম্রাট মারকোস অরেলিয়াস ক্লডিয়াস গথিকস উর্চ ক্লডিয়াস ২-এর কাছে তার সেনাবাহিনীতে যোগদানের পক্ষে পুরুষদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে গিয়েছিল এবং বিশ্বাস করা হয়েছিল যে তাদের স্ত্রী ও পরিবারের সাথে তার দৃঢ় সম্পর্ক ছিল। তাই রোমীয় সম্রাট সবচেয়ে লজিক্যাল জিনিস একটি করেছিলেন। তিনি পুরোপুরিভাবে বিয়ে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। ক্লডিয়াস মনে করেছিলেন এটি একটি আদর্শ বিশ্বের একটি স্মার্ট পদক্ষেপ হয়েছে।
অপরদিকে সেন্ট ভ্যালেনটাইন, যিনি এই আইনের অবিচারকেই মান্যতা দিয়ে এই আইনের বিরুধ্যে কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে সম্রাটের আদেশ উপেক্ষা করে প্রেমীদের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন, গোপনে সেই সব প্রেমিক- প্রেমিকাদের একে অন্যের সাথে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলেন যখন বিয়ে করা শাসক সরকার দ্বারা নিষিদ্ধ ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, যখন ক্লডিয়াস দ্বিতীয় এই সম্পর্কে জানতে পারেন, তিনি ভ্যালেনটাইন কে প্রথমে ধরে কারাগারে নিক্ষেপ করেন অবশেষে, শিরশ্ছেদ করেন।
আর সেই ভ্যালেন্টাইনের প্রেম দিবসে প্রেমে প্রত্যাখাত হয়ে গলায় দড়িঁ দিয়ে আত্নহত্যা করল ইন্দ্রজিৎ পাল(১৭) নামে এক যুবক। বনগাঁ শক্তিগড় হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিল ইন্দ্রজিৎ৷ ঘটনায় প্রকাশ গতকাল রাত ১০টা নাগাদ ইন্দ্রজিৎ এর বাবা বিশ্বজিৎ পাল ঘরের পাশে বাথরুমে যাবার পথে দেখে ছেলে একটি বাঁশে গলায় চাদর দিয়ে ঝুলে আছে, এরপর বনগাঁ মহাকুমা হাসপাতালে আনা হলে ডাক্তার মৃত বলে ঘোষনা করে ৷ মৃতের পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানাযায় বনগাঁ থানার অন্তর্গত শক্তিগড়ে বাড়ি ইন্দ্রজিৎ পাল (১৭) তার ক্লাসের এক সহপাঠিনীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ভালবাসার সম্পর্ক ছিল৷ সম্প্রতি মেয়েটি জানিয়ে দেয় ওর পক্ষে আর সম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব নয়৷ তারপর থেকেই ছেলেটি মানসিক অবসাদে ভুগছিল। গতকাল রাতে তাই আত্নহত্যা করে৷ ইন্দ্রজিতের পকেট থেকে উদ্ধার হয় প্রেমিকার উদ্দেশ্যে লেখা একটি চিঠি। ইন্দ্রজিৎ পালের জ্যাঠা ধীরেন পাল বলে ওর ক্লাসের স্থানীয় একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ক বিচ্ছেদ হওয়ার কারনে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে আত্নহত্যা করেছে। মেয়েটি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে এবং বলে "ওর সাথে আমি দুইমাস হয়েছে কথা বলিনা, যখন কথা বলতাম বন্ধু ভেবে বলতাম।" ওর সাথে কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিলনা। ঘটনার তদন্তে পুলিশ বনগাঁ থানা।
কিন্তু এই ঘটনাই বর্তমানে সকলের মনে একটি প্রশ্ন তুলে দিল, যে মানুষটি প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রেমের সার্থকতার জন্য নিজের আত্মবলিদান দিয়েছিলেন তার আত্মবলিদান কি আজকের প্রজন্ম বোঝে? যদি বুঝতো তাহলে নিশ্চিত এই মহান প্রেমের দিনে বনগাঁয়ে আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা বনগাঁ বাসীর সাথে সারা পশ্চিমবঙ্গকে দেখতে হতো না।