অরিন্দম রায় চৌধুরী, ব্যরাকপুরঃ
যখন সেল ফোন বা নিয়মিত ফোন, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য সিস্টেমগুলি ডাউন বা ওভারলোড হয়, অ্যামেচার রেডিও তখনও বার্তালাভ করতে পারে। এই মাধ্যমকে একটি শখ হিসেবে রেডিও প্রযুক্তি দ্বারা যারা উপভোগ করে তাদের রেডিও আমেচার, বা "হ্যামস" বলা হয়। কিন্তু অপরদিকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা যা অনেক জীবন বিগত দিনে ও বর্তমানেও বাঁচিয়ে চলেছে যখন যেখানেই নিয়মিত যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে। এই হাম রেডিও অপারেটর, মুভি স্টার, মিশনারি, ডাক্তার, ছাত্র, রাজনীতিবিদ, ট্রাক ড্রাইভার এবং সাধারণ মানুষও হতে পারে। আগের থেকে এখন অনেক এলাকাতেই সরকার দ্বারা স্বীকৃত লাইসেন্সযুক্ত অপেশাদার রেডিও অপারেটর রয়েছে।
উল্ল্যেখ্য এই রেডিও দ্বারা যে কোন আপাতকালিন অবস্থায় দিব্যি বার্তালাপ চালিয়ে যাওয়া যায় এবং এতে সেই সময় প্রচুর মানুষের সাহায্যে আসা যায়। প্রসঙ্গত ১৮৯৭ এ মার্কোনির ওয়্যারলেস আবিষ্কারের ৩(তিন) বছর আগে ১৮৯৪ সালে, কোলকাতা টাউন হলে তদানীন্তন লেফটানেন্ট গভেরনর স্যার উইলিয়াম ম্যাকেঞ্জির উপস্থিতিতে বেতার যোগাযোগের জনক আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু আবিষ্কার ও দেখিয়েছিলেন ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক তরঙ্গের অস্তিত্বকে। সেই সময় ভারতের প্রথম দুটি অপেশাদার রেডিও অপারেটর কলকাতা থেকেই এসেছে। তারা হলেন শ্রী অমরেন্দ্র চন্দ্র গোপতু (Callsign-2JK) এবং শ্রী মুকুল বোস (2HQ)। এনারাই প্রথম ২১ শে জুন ১৯২১ সালে তাদের অপেশাদার রেডিও অপারেটরের লাইসেন্স পেয়েছিলেন এবং প্রথম দুটি উপায়ে হ্যাম রেডিও যোগাযোগ কলকাতায় করেছিলেন (১৯২৯ সালে ভারতে VU প্রিফিক্স কার্যকর হয়)।
তারপর গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক জল। দিনে দিনে বাঙালি আরও উন্নত হয়েছে, শিক্ষিত হয়েছে, শিখেছে কি ভাবে আপাতকালিন পরিস্থিতিতে যখন আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের দান সেল ফোন, নিয়মিত ফোন, ইন্টারনেট এবং অন্যান্য সিস্টেমগুলি ডাউন বা ওভারলোড হয়, তখন কিন্তু এই রেডিও তরঙ্গই প্রচুর প্রান বাচাতে পারে আর তাই অপেশাদার রেডিও কনভেনশন এবং কনফারেন্স সমিতির (1961 সালের পশ্চিমবঙ্গ অ্যাক্ট XXVI এর অধীনে নিবন্ধিত) কলকাতার অপেশাদার রেডিও উৎসাহীদের দ্বারা অপেশাদার রেডিও অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচী এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং কার্যক্রমগুলি সারাবছর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
[espro-slider id=4807]
এবার ব্যারাকপুরে সেই গঙ্গার তীরবর্তী গান্ধী স্মারক সংরহালয় প্রাঙ্গণে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত হল হ্যাম রেডিওর মক ড্রিল ও যোগাযোগ পরীক্ষা শিবির। এই শিবিরে একদিকে যেমন ছিলেন হ্যাম রেডিও অপারেটররা আবার অপরদিকে হাজীর ছিলেন ব্যারাকপুরের মহকুমা শাসক পীযুষ গোস্বামী ও ভারতীয় বায়ু সেনার এয়ার চিফ মার্শাল (রিটায়ার্ড) অরূপ রাহা। এইদিন ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের সদস্য-সদস্যা-রা প্রথমে ব্যারাকপুর গান্ধী স্মারক সংরহালয় প্রাঙ্গণে হাজীর হয়ে তাদের রেডিও যোগাযোগ ব্যাবস্থা পরখ করে দেখেন। সেখান থেকে ব্যারাকপুর ধোবী ঘাটে গিয়ে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে বেশ কিছুক্ষণ বার্তালাপ চালান রেডিওর মাধ্যমে। হুগলী নদীতে যে কোন সাইক্লোন কিংবা প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে কেমন করে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে তারই মহড়া দিল এন.ডি.আর.এফ , রাজ্য সরকার এর বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ,ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যামেচার রেডিও ক্লাবের সদস্যরা । রবিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই মহড়া চলে দুপুর পর্যন্ত। গোটা মহড়ায় ছিল কোন সময় লঞ্চ থেকে কোন যাত্রী জলে পড়ে গেলে তাদের কি করে উদ্ধার করতে হয় কিংবা নৌকো উল্টে গেলে কেমন করে যাত্রীদের উদ্ধার করতে হবে কিংবা বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা যোগাযোগ পরিষেবা ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেলে সেই সময় রেডিও মাধ্যমে কেমন করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সমন্বয় সাধন করা যাবে তাও দেখানো হয় এই মহড়ায়। গোটা মহড়ায় উপস্থিত ছিলেন ব্যারাকপুর এর মহকুমাশাসক পিযূষ গোস্বামী । শিবিরে হাজীর অরুপ বাবু বেঙ্গল টুডেকে বলেন "এখানে এসে এদের এই কর্মকাণ্ড দেখে আমি খুবই খুশি। এদের সকলের এই হ্যাম রেডিও নিয়ে আগ্রহ দেখে আমার অন্তত মনে হচ্ছে যে এখনকার যুব সমাজ খুবই দশের জন্য ভাবনা চিন্তা করে। এরা যে দশের ও দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে তাতে মনে হচ্ছে আমাদের দেশ ঠিক দিশায় এগিয়ে যাচ্ছে।" তিনি আরও বলেন "একটি দেশ এগোতে পারে তার যুব সমাজের অগ্রগতির উপর নির্ভর করে, আর এখন তো বিজ্ঞানের যুগ, তাই এরা আরও বিজ্ঞান ভিত্তিক ভাবে এই রেডিওকে জনসেবায় নিয়োজিত করুক এটাই চাই।" এদিন এই শিবিরে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের তরফ থেকে ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাস উপস্থিত সকলের সামনে ভারতীয় বায়ু সেনার এয়ার চিফ মার্শাল (রিটায়ার্ড) অরূপ রাহা কে তাদের ক্লাবের আজীবন সদস্যপদ প্রদান করেন।