সন্দীপ ঘোষ, ঝাড়গ্রাম:
বনদফতরের নিষেধাজ্ঞা জারিকে তোয়াক্কা না করে রুজি রুটির টানে এক প্রকার বাধ্য হয়েই জঙ্গলে যাচ্ছেন জনতা। পশ্চিম মেদিনীপুরের বাঘঘোরার পর ৩১শে মার্চ লালগড়ের রাঙামেটিয়ার জঙ্গলে রয়েল বেঙ্গলকে দেখেছেন বলে দাবি স্থানীয় মানুষজনদের। দেখা মিলছে বাঘ, বাঘের পায়ের ছাপের। তবুও রুজির উৎসের খোঁজে দরিদ্র মানুষজনদেরকে যেতে হচ্ছে জঙ্গলে। তাদের পরিস্কার কথা ভয় নিয়ে থাকলে পেট ভরবে না। তাই জঙ্গলে তাদের যেতেই হবে। জঙ্গলে কচি শাল পাতা তোলর এটাই মোক্ষম সময়। এই সময় পেরিয়ে গেলে আর পাওয়া যাবে না নতুন শাল পাতা। বাজারে কচি শালপাতার চাহিদা রয়েছে যথেষ্ট। এখন লালগড় সহ জঙ্গলমহলে শাল গাছ গুলিতে নতুন পাতা গজাচ্ছে। শুধুকি পাতা তোল? দরিদ্র আদিবাসী পরিবার গুলি ছাগল পালন করে ব্যবসা করে সংসার চালান। বাঘের ভয়ে জঙ্গলে ছাগল চড়ানো বন্ধ ছিল। কিন্তু ঘরে রেখে এই সব গবাধি পশুদের পেট ভর্তি খাওায়ার দেওয়া সম্ভব নয় গরিব মানুষ গুলির পক্ষে। আর ছাগল গুলিকে ঘরে বাইরে মাঠে নিয়ে গেলেই কচি পাতার লোভে ছুটছে জঙ্গলে। আর এই পরিস্থিতিতে রুজির টানে লালগড়, ধেড়ুয়া, শালবানি রাঙামেটিয়া, মধুপুর সহ সমস্ত জঙ্গল লাগোয়া গরীব মানুষ গুলি যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
গত প্রায় দুমাস ধরে লালগড়ের জঙ্গলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখা মেলার পর থকে এখনো পর্যন্ত বাঘ ঘিরে এক ব্যাপক আতঙ্কের রয়েছে লালগড় এলাকায়। আর এই আতঙ্কের আবর্তে আটকা পড়ে গিয়েছেন বনচারী,বনের উপর নির্ভরশীল সাধারণ দরিদ্র মানুষ জন। বনদফতরের পক্ষ থেকে বারংবার মাইকিং করে জঙ্গলে প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। সেই নিষেধে এত দিন এলাকার মানুষ সাড়া দিয়ে জঙ্গলে না গেলেও এখন তারা শাল গাছের কচি পাতা সংগ্রহ করতে জঙ্গলে যাচ্ছেন।
উল্লেখ্য ৩০শে মার্চ ধেড়ুয়াতে বাঘের হানায় জখম হওয়ার ঘটনার পরেও ৩১শে মার্চ লালগড়ের রাঙামেটিয়ার জঙ্গলে মিলেছে তাজা পায়ের ছাপ। তারপরেও এদিন লালগড় এলাকার বিভিন্ন গ্রামের সাধারন মানুষ জঙ্গলে গিয়েছেন পাতা,কাঠ সংগ্রহ করতে। লালগড়ের পডিহা, রাঙ্গামাটিয়া, মধুপুর এই সব এলাকার শ্রীমতি শবর, অঞ্জনা শবররা বলেন, "ভয় থাকলেও ভয় করে লাভ নেই। জঙ্গলে না আসলে খাব কি। সংসার চলবে কি করবে। এখনই তো জঙ্গলে কচি শাল গাছের পাতা মেলে। আর তো পাব না। এছাড়া ঘরের ছাগল গুলিকে কি খাওয়াব। ঘরে বসিয়ে খাওয়ানোর ক্ষমতা আমাদের মতো গরীব মানুষদের নেই। তাই আমাদের ভয় পেলে চলবে না।" ৩০শে মার্চ বাঘের দেখা মেলার পর থেকে জঙ্গলে শিকারে যাওয়ার ভাটা পড়লেও রুজির টানে মানষ জন জঙ্গলে যাচ্ছেনই ভয় উপেক্ষা করে।
মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্র নাথ সাহা বলেন, "বনদফতরের পক্ষ থেকে আমরা বারে বারে জঙ্গলে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ কোনও বাধা না মেনে জঙ্গলে ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বনদফতর আর কি বা করতে পারে।"