অরিন্দম রায় চৌধুরী, ব্যারাকপুরঃ প্রথমে একটি বাইক আরোহীকে ধাক্কা আর সেই ঘটনা থেকে নিজেকে বাঁচাতে বেসামাল জোরে গাড়ী চালিয়ে পালানোর সময় পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা এক সাইকেল আরোহী স্কুল ছাত্রকে। বারাকপুর কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে ১০৭ গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত স্কুলছাত্র। পথে এর আগে একটি টোটকেও ধাক্কা মারে এই ঘাতক ১০৭ গাড়ীটি বলেও অভিযোগ। সেই ক্ষেত্রে টোটো সওয়ার তিনজন আহত বলে খবর।
আজ সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ স্থানীয় উমাশশী উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র শ্রী হরি কবিরাজ সাইকেল করে স্কুলে আসার পথে পেছন থেকে ধাক্কা মারে একটি ছোট হাতি ১০৭ গাড়ি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ব্যারাকপুর বিএন বসু মহাকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ও পড়ে অবস্থার অবনতি হওয়ায়ে আর জি কর হাঁসপাতালে রেফার করা হয়।
[espro-slider id=12759]
হাসপাতাল রেফার করলে কি হবে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যেতে তো লাগবে একটি অ্যাম্বুল্যান্স। কোথায় সেই অ্যাম্বুল্যান্স? সকলের চোখেমুখে তখন চিন্তা আর ঠিক সেই সময় ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ট্র্যাফিক বিভাগ পাসে এসে দাঁড়ায়। সংগে সংগে হাজীর হয়ে পুলিশের অ্যাম্বুল্যান্স। শুধু অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েই তাদের দায়ীত্ব শেষ করে নি ব্যারাকপুর ট্র্যাফিক বিভাগ সাথে সাথে ব্যারাকপুর থেকে যাতে আর জি কর হাসপাতাল যেতে রাস্তায় কোন অসুবিধা না হয় তার জন্য পুরো রাস্তাই গ্রিন করিডরে পরিনত করে দেন হাজীর থাকা ট্র্যাফিক আধিকারিকরা যাতে খুব তারাতারি রুগি নিয়ে পৌছাতে পারে গন্তব্যে। এ যেন সেই "ট্র্যাফিক" হিন্দি সিনেমার দৃশ্য ভাসছে সকলের চোখের সামনে। ছায়াছবিতে যেমন একটি জীবন বাঁচাতে এবং ইতিহাস তৈরি করতে 150 মিনিট সময় নিয়েছে তেমনই এখানেও মাত্র ৩৫-৪০ মিনিটে রুগীকে নিয়ে গন্তব্যে পৌছে যায় অ্যাম্বুল্যান্স। পৌঁছানোর খবর পাওয়ার পর দেখা গেল কর্তব্যরত ট্র্যাফিক আধিকারিক ব্যারাকপুর ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি বিজয় ঘোষের মুখে প্রশান্তির রেশ। মুখে কিছু না বললেও বেশ বোঝাই যাচ্ছিল যে তিনি যেন বলতে চাইছেন, অবশেষে পারলাম ছোট্ট ছেলেটিকে সময় মত তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাওয়ার ব্যাবস্থা করতে। এই ক্ষেত্রে দেখা গেল ব্যারাকপুর ট্র্যাফিক গার্ডের ওসি বিজয় ঘোষের নেতৃত্বে এ এস আই সঞ্জীব নস্কর থেকে শুরু করে এ এস আই কাঞ্চন বিশ্বাস ও সোদপুর থেকে শুরু করে ডানলপের প্রতিটি পুলিশ আধিকারিকের এক আপ্রাণ প্রচেষ্টা ছাত্রের প্রাণ বাঁচানোর। যাদের রাস্তাই ঘর দুয়ার তাদের কাছ থেকে তো এটাই আশা করে মানুষ। রাস্তায় চলাচল কারী সকল মানুষই এদের পরিবার আর তাই তো এদের এই প্রচেষ্টা। সত্যিই সকলের মুখে হোক এনাদের জয় জয়কার আর ফিরে পাক নব জীবন সেই স্কুলছাত্র।
ইদানীং দেখা যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী যতই আন্তরিক ভাবে চান রাস্তায় দুর্ঘটনার মতন ঘটনা কমাতে, কিন্তু মনে হয় কোথাও এই ক্ষেত্রে বাঁধ সাধছে স্থানীয় গাড়ীর ইউনিয়নগুলি। কোন যানকে প্রশাসন যখনই দেখা যায় বাগে আনার চেষ্টা করে তখনই স্থানীও ইউনিয়নের দশ বারোজন সদস্য সেই বেখেয়ালি গাড়ীর চালক ও গাড়িটিকে ছাড়াতে রে-রে করে ছুটে যায় কর্তব্যরত পুলিশ আধিকারিকের দিকে। ফলে সেই গাড়ীর চালকের সাহস আরও বেড়ে যায় তা বলাই বাহুল্য। এই ইউনিয়নগুলি যদি একটু মানবিক বোধ ও একটু সচেতন হত তাহলে হয়েতো এই ঘটনার বারং বার পুনরাবৃত্তি হত না এমনটাই মনে করছেন নিরীহ এলাকাবাসী।
এমনকি এই মুহূর্তে ব্যারাকপুর শহর জুড়ে যে ভাবে টোটোর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে তা নিত্যান্তই প্রশাসনের কপালে চিন্তার ভাজ ফেলছে। যত্র তত্র রাস্তার ধারে সার দিয়ে দাড় করিয়ে রাখা টোটোর কারণে অতি অবশ্যই এস এন ব্যানার্জি রোড ও তার সংলগ্ন ঘোষপাড়া রোড সহ বারাসাত রোড ও কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে দেখা যাচ্ছে দিনের পর দিন সরু হয়ে যাচ্ছে আর তারপর গোদের উপর বিষ ফোড়ার মতন রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ানো হেলমেট হীন বাইক বাহিনীর উপদ্রপ। এই ক্ষেত্রে যে কোন দিন একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়া যে কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় তা এক বাক্যে স্বীকার করে নিচ্ছে যান নিয়ন্ত্রে রাখতে গিয়ে হিমশিম খাওয়া পুলিশ আধিকারিকরাও। তাই এই অবস্থার যদি এখনই হাল না ধরা যায় তাহলে যে আগামী দিনে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণই যে হাতের বাইরে চলে যেতে পারে তা বলাই বাহুল্য।