বেঙ্গলটুডে প্রতিনিধি, ঢাকা:
টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে ব্যাংক লুণ্ঠনকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এ দাবি জানিয়েছেন সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। ১০ ই জুন রবিবার চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁরা এই দাবি জানান। দুই দিন বিরতির পর আজ রবিবার সকাল ১১টায় অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে ২০১৭-১৮ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু করেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আলী আশরাফ। আলোচনায় আরো অংশ নেন সরকারি দলের রমেশ চন্দ্র সেন ও সোহরাব উদ্দিন, বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, নূরুল ইসলাম ওমর ও পীর ফজলুর রহমান এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী।
অধ্যাপক আলী আশরাফ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ব্যাংকে জনগণের জমানো টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। জমি কমলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে। তবে পর্যটনে ব্যাপক সম্ভাবনা সত্ত্বেও তা কাজে লাগানো হচ্ছে না। পর্যটন ও বিমানের উন্নয়নে সুনির্দ্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী বিশাল বাজেট দিয়ে ভীষণ খুশি। কিন্তু বাস্তবতা ঠিক উল্টো। অগ্রগতি খুবই নগণ্য। আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার অভাব রয়েছে প্রচুর। কারণ সর্বক্ষেত্রে লুটপাট চলছে। সুশাসনের অভাব রয়েছে। ব্যাংকের টাকা লুট হয়ে যাচ্ছে। এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঢাকা শহর ডুবে যাচ্ছে। অর্থবছর শেষে খোড়াখুড়ি চলে। মানুষের দুর্ভোগের সীমা নেই। রাজধানীতে বাস ও নৌকা চলে।’
ফিরোজ রশীদ আরো বলেন, ‘পূঁজিবাজারে চরম অব্যবস্থাপনা চলছে। এই খাত থেকে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। এমপিওভুক্তির জন্য শিক্ষকরা রাস্তায় নামছেন। ছাত্ররা রাস্তায় রয়েছে। তাদের দাবি না মেনে ব্যাংক ডাকাতদের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।’ এই বাজেট ভোটের নয়, ভোট নষ্ট করার বাজেট বলে উল্লেখ করেন তিনি।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, অন্যদিকে কতিপয় ব্যক্তি অনিয়ম, দুর্নীতি ও গাফিলতির মাধ্যমে তাঁর প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো সত্ত্বেও ঘুষ চলছে। ঘুষ ছাড়া ভূমি জরিপ হয় না। বিদ্যুতের লাইনের জন্য ঘুষ দিতে হয়। এমনকি হাসপাতালসহ সেবা খাতেও ঘুষ চলছে।’ মাদকের বিরুদ্ধে অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে রুস্তম আলী ফরাজী উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে সুশাসন নিশ্চিত ও সন্ত্রাস-দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির বিষয়টি দ্রুত বিবেচনায় নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘দীর্ঘ ২০-২৫ বছর ধরে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা এক প্রকার না খেয়ে আছে। বেসরকারি খাত থেকে পাওয়া সামান্য অর্থ দিয়ে তাদের দিন চলে। শিক্ষার উন্নয়নের স্বার্থে এ বিষয়ে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।’ বিদ্যুৎ খাতের অভূতপূর্ব উন্নয়নে সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী ২০২০ সালের মধ্যে সরকার ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। আর সেটা হলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় দ্রুত পৌঁছে যাবো।
নূরুল ইসলাম ওমর বলেন, প্রত্যেকটি ভালো কাজের সঙ্গে একটি খারাপ বিষয় যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণে তেমনটি হয়েছে। তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলো নিয়ম মানছে না। অনেকেই বরাদ্দের টাকা খরচ করতে পারেন না। কিন্তু টাকা ধরে রাখেন। খরচ না করতে পারলে টাকা ফেরত দিন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ব্যাপক পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে যাদের কোনো কাজ নেই। আবার আমার বগুড়া জেলা পরিষদে দীর্ঘদিন ধরে সচিব নেই। তাহলে এই প্রতিষ্ঠানটি চলবে কিভাবে?’ যেসব মন্ত্রণালয় ব্যর্থ হচ্ছে তাদের সম্পূরক বাজেট অনুমোদন না দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘বড় বাজেট নিয়ে আত্মতুষ্টির কিছু নেই। কারণ গড় মাথাপিছু আয় ৭০০ ডলার থেকে বেড়ে এক হাজার ৭০০ ডলার হলেও সুনামগঞ্জের সাধারণ মানুষের আয় কত? আয় কমেছে। মানুষে মানুষে বৈষম্য বেড়েছে। অনেকেই সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। ধনী ও বিত্তশালীরা ফুলে ফেপে বড় হচ্ছে। আর গরিব আরো গরিব হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি তদন্তে ব্যাংক লুটকারীদের নাম উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে বাজেট বরাদ্দের সুবিধা প্রান্তিক জনগণের কাছে পৌঁছাতে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বেসরকারি স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্তিতে বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবি জানান সরকারি দলের সদস্য সোহরাব উদ্দিন। তিনি ব্যাংকখাতের লুটপাটকারীদের শাস্তির পাশাপাশি মানি লন্ডারিং বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।