অরিন্দম রায় চৌধুরী, ব্যারাকপুরঃ
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
সমাজে সঙ্ঘবদ্ধ মানুষ দৃঢ় সংকল্পে আসীন থাকলেই যে সব সময়ই সাফল্যের চুড়ায় উঠতে পারে, তারই জ্বলন্ত উদাহরণ দেখা গেল ব্যারাকপুর মহকুমার মুক্তপুকুর এলাকায়। এক দল মানুষ সংঘবদ্ধ হয়ে গত ১৬ বছরই একই ব্রতে ব্রতি হয়ে করে চলেছে মানব সেবা। মানুষের ডাক্তার দরকার হয় সব সময়ই, তাই শুধু মাত্র ২০টাকার বিনিময় এই কটি মানুষই দিয়ে চলেছেন সকলের জন্য ডাক্তারি সেবা। কার বাড়ীতে কার ছেলে বা মেয়ে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত, রক্ত না পেলে জীবন আক্রান্ত হতে পারে। এই মানুষগুলো জানতে পারলেই সেই রক্ত নির্দ্বিধায় পেয়ে যাবে সেই আক্রান্তের পরিবার। শুধুই জানার যে সময় লাগে সেই টুকুই যা অপেক্ষা। এমনকি এনারা বানিয়ে ফেলেছে আস্ত একটি প্যাথলজির পরীক্ষাগারও কারণ যাতে স্বল্প পয়েসায় সাধারণ মানুষ পেতে পারে এই পরিষেবা। এই মানুষগুলো যেমন, সুব্রত ঘোষ, অভ্র দে, কনক সরকার, শেখ আফরোজ ও চিরঞ্জজিব রায়দের দল নিজেদের বলে তারা “মেড ইন ইন্ডিয়া পরিবার”। ১০ই জুন, রবিবার সন্ধ্যের দিকে এনারাই মুক্তপুকুর এলাকায় আয়োজিত করে এক রক্ত দান শিবির।
স্বভাবতই এই রক্তের খরার মরশুমে যখন প্রায় সর্বত্রই আয়োজিত হয় এই রক্ত দান শিবির, তাহলে এনাদের আয়োজিত রক্ত দান শিবিরের তাৎপর্য আলাদা কি? এই প্রশ্নই ওঠা স্বাভাবিক। হ্যাঁ, আলাদা, কারণ এই রক্তদান শিবিরে যারাই আজ রক্ত দিলেন তাদের একটা নির্দিষ্ট লক্ষ পরিলক্ষিত হল। এদের স্লোগান “স্নেহেতার জন্য রক্ত”-ই জানান দেয় এরা কি বা কিসের জন্য এই রক্তদান শিবির আয়োজিত করেছে।
উল্লেখ্য স্নেহেতা একটি মেয়ে, বয়েস মাত্র ১৯ বছর। ব্যারাকপুর মহাদেবানন্দ মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী। কিন্তু এই ছোট্ট বয়েসেই সে বুঝে গিয়েছে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হলে কি কষ্ট হয়। বেঁচে থাকার জন্য বছরে তার যে চাই ৪০ বোতল রক্ত। এতদিন কোন ভাবে জোগাড় করে চালিয়ে নিয়েছে, কিন্তু এই গরমের মরশুমে যখন চারিদিকে রক্তের খরা চলে, কিন্তু চাহিদা অনেক বেশী থাকে তখন কোথা থেকে পাবে বেচারি রক্ত? দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে যখন স্নেহেতার বাবা হয়রান তখন এগিয়ে আসে লাইফকেয়ার ব্লাড ব্যাংকের সহযোগিতায় এই “মেড ইন ইন্ডিয়া পরিবার”। ব্যাস, সঙ্গে সঙ্গে আয়োজন এই রক্তদান শিবিরের যেখানে ৪৭জন রক্ত দাতা দান করলেন তাদের রক্ত। কথা হয় সারা বছর এই মেয়েটিকে রক্ত যোগান দেবে লাইফকেয়ার ব্লাড ব্যাংক, আর তাই রক্ত দান করা হল এক সুনির্দিষ্ট লক্ষের উদ্যেশে।
[espro-slider id=8766]
এই রক্তদান শিবিরে ব্যারাকপুর লাটবাগান পুলিশ আবাসনের এক পুলিশ কর্মীর গৃহিণী বেবি পাল যিনি রক্ত দান করতে এসেছিলেন, আমাদের বলেন, “আমি ভেবে আনন্দ পাচ্ছি আমি এই ছোট্ট মেয়েটির জীবনের জন্য আমার দেহ থেকে এই রক্ত দান করলাম। ও অনেকদিন বাঁচুক, বড় হোক, এই চাই। আজ এই সময় আমার মনে পড়ে যাচ্ছে ভুপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গানটির কথা, মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারে না? আপনি কি বলেন সাংবাদিক বন্ধু?”
নিশ্চিত ভাবে এটা বলাই বাহুল্য যে বেবি পালের প্রশ্নের উত্তরে প্রতিটি মানুষই একটি কথাই বলবে নিশ্চয় মানুষই তো মানুষকে বাঁচার সুযোগ করে দেবে আর এটাই তো মানবতা। আগামীদিনে নিশ্চয় এই “মেড ইন ইন্ডিয়া পরিবারের” এই পথকে অনুসরণ করে আরও কত মানুষ ঠিক এই ভাবে সুনির্দিষ্ট লক্ষের দিকে এগিয়ে যাবে ও আরও কত পরিবার দেখবে নতুন করে বাঁচার আলো।