মিজান রহমান, ঢাকা:
২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরে রাখা কঠিন হবে এবং রাজস্ব লক্ষ্য পূরণে করের বোঝা বাড়বে বলে মনে করেন গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ৮ ই জুন শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশের রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোর লাবিটা হলে আয়োজিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা পেশকালে এ মন্তব্য করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাটি।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরে রাখা কঠিন। গেল পাঁচ বছরে ভালো প্রবৃদ্ধি বাড়লেও আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। গরিব মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমেছে।’ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তিকর অপরিবর্তিত রাখার সমলোচনা করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই বলে আসছি। বাজেটে করমুক্ত আড়াই লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে তিন লাখ করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন ঘটেনি, আড়াই লাখ টাকাই রাখা হয়েছে। করমুক্ত হার ৩ লাখ টাকা করলে মানুষ সাশ্রয় পায়, বেশি পরিমাণ এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘করমুক্ত টাকা বাড়ানো হয়নি। কিন্তু যেটা বাড়ানো হয়েছে, সেটা হলো আনুতোষিক ব্যয়, যেটা ৭৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। এটা উচ্চবিত্ত মানুষেরা পাবেন। এটা আমার কাছে বৈপরীত্য মনে হয়েছে। কেননা যখন আপনি মধ্যবিত্তের জন্য কোনো সুযোগ দিচ্ছেন না, সেখানে আপনি উচ্চবিত্তের জন্য আনুতোষিক ব্যয় সুবিধা দেবেন। এটা অর্থনীতির সাম্যনীতিতে পড়ে না।’
তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত বাজেটে সম্পদের ভিত্তিতে যে সারচার্জ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেই সারচার্জের পরিমাণ ১০ কোটি টাকার উপরে। এটা ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাদের দুইটার বেশি গাড়ি আছে এবং ৮ হাজার স্কয়ার ফিটের বাড়ি আছে, তাদের ক্ষেত্রে এই সারচার্জ প্রযোজ্য হবে। এটা আমরা মনে করি ভালো দিক।’
তিনি কর্পোরেট ট্যাক্স কমানোর বিরোধিতা করে বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত ব্যাংক, বীমা কোম্পানি এবং ব্যাংক বহির্ভূত বাণিজ্যিক যেসব অর্থায়নের প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তাদের আড়াই শতাংশ হারে যে করপোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে, আমরা এটার বিরোধিতা করি। আমরা মনে করি, ব্যাংক খাতে যে ধরণের নৈরাজ্য চলছে, সেই নৈরাজ্যের কোনো সমাধান না করে মালিক পক্ষকে এই ধরনের সুবিধা দেওয়া। এটা একটা বিভ্রান্ত পদক্ষেপ। এটা দ্বারা ব্যাংকের তারল্য বাড়বে বলে মনে করি না। একই সঙ্গে উদ্যোক্তা শ্রেণি সুবিধা পাবে বলে মনে করি না।’