অরিন্দম রায় চৌধুরী, ব্যারাকপুরঃ
১০ই মে সকাল ১১:৩০ মিনিট থেকেই ব্যারাকপুর পৌরপ্রধান উত্তম দাসের নেতৃত্বে পৌরসভার আরও বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলার ও পৌরসভার ফুড ডিপার্টমেন্ট এর লোকজন এলাকার বিভিন্ন নামীদামী রেস্তরা ঘুরে তাদের রান্না ঘরে রাখা মাংসের নমুনা সংগ্রহ করে তা ল্যাব টেস্ট করতে পাঠানো হয়। আজকের এই চকিত অভিযানে প্রথমার্ধ এ এই সব রেস্তরায় দেখা যায় বেশিরভাগ জায়গাতেই সরু অল্প পরিসর জায়গায় মানুষজনের বসার জায়গা ও কোন অগ্নি-নিরবাপনের বন্দোবস্ত নেই, আর যেখানে আছে সেই সরঞ্জামও মেয়াদ উত্তির্ন। এমনকি নেই কোন আপাত কালিন বেরোবার রাস্তা। এই দৃশ্য দেখার পর একটি রেস্তরার মালিককে আজ পৌরসভায় ডেকে পাঠান পৌরপ্রধান। রেস্তরাগুলিতে মাংস নিয়ে অবশ্য তেমন কিছু না পাওয়া গেলেও পৌরপ্রধান সাংবাদিকদের বলেন, ” এই অভিযান যে শুধু আজকেই সিমাবদ্ধ থাকলো এমন মনে করার কোন কারন নেই, এই ধরনের অভিযান আগামী দিনেও পৌরসভাগত ভাবে হবে। ভাগাড় কান্ড সকলের চোখ খুলে দিয়েছে। ” উত্তম বাবু অবশ্য রেস্তরাগুলির অগ্নি নির্বাপক ব্যাবস্থা নিয়ে বেশ ক্ষুন্ন, এই বিষয় বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “অগ্নি নির্বাপণ ব্যাবস্থা অবশ্য পৌরসভার দেখার বিষয় নয়, এটা আমাদের অগ্নি নির্বাপণ দফতরের। তাই আমরা পৌরসভার থেকে তাদের কাছে এই বিষয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করবো।”
এরই মধ্যে গোপন সুত্রে খবর পাওয়া যায় ১৯ নং ওয়ার্ড এ মরা মুরগির কারবার করে চলেছে কিছু অসাধু ব্যাবসাদার। খবর পাওয়ার পরই কালবলম্ব না করে পৌরসভার দলটি গিয়ে পৌছায় ব্যারাকপুরের তালপুকুর বাজারে গৌতম দাসের মুরগির আরতে, আর সেখানে ডিপ ফ্রিজের ভেতর থেকে পাওয়া যায় প্রায় ২০ কিলো মাংস। সঙ্গে সঙ্গে সেইসব মাংস ল্যাব টেস্টের জন্য পাঠান পৌরপ্রধান। ল এবং ওই দোকানটিকে সিল করে দেন। এই বিষয় বলতে গিয়ে উত্তম বাবু জানান, “প্রায় ২০ কেজির মত মাংস গৌতম দাসের দোকানের ডিপ ফ্রিজ থেকে উদ্ধার করেছি, যা আমার মনে হয় এই মাংসই এলাকার কোন রেস্তরায় যেত। তবে এই মুহুর্তে এটা বলা যাবে না যে এই মাংস কত দিনের, তাই আমরা ওই সব মাংস ল্যাবে পাঠানোর ব্যাবস্থা করলাম আর দোকানটি সিল করে দিলাম।”
অপরদিকে দোকানদার গৌতম দাস এই বিষয় বলেন, “আসলে আজকাল খরিদ্দার ২৫০ গ্রাম মাংস নিলেও বলে আমার সামনে কেটে দাও, তাই বাকি মাংস ফ্রিজে রেখে দেই। সন্ধ্যের সময় বিভিন্ন রেস্তরায় চিলি চিকেনের অর্ডার ধরা থাকে তাই সেই সব হোটেল ও রেস্তরায় তা পাঠিয়ে দেই।” এই যুক্তি অবশ্য মানতে চাননি পৌরপ্রধান উত্তম দাস। উত্তম বাবুর বক্তব্য, “চিলি চিকেনের অর্ডারে আবার লেগ পিস থাকে নাকি? আসলে আমি যা বলেছি সেটাই ঠিক, এই প্রায় ২০ কেজি মাংস কি একদিনে মজুদ করেছে দোকানদার তাহলে বেচেছে কত? কিছুই কি বিক্রি হয়েনি? তাহলে এত মুরগি কাটলো কেন?”
এরপর দোকানদার গৌতম দাস অভিযোগ করেন পৌরসভা যেন আরও বাজারের আরতদারদের আরত পরিক্ষা করে দেখে কারন এই কারবার তিনি একা করেন না, বাকি সবাই করে কিন্তু তারা পৌরপ্রধানের অনুগত বলে তাদেরটা মাফ করে দিচ্ছেন পৌরপ্রধান।”
মোটের উপর এদিন সকাল থেকেই পৌরসভার এই ঝটিকা অভিযানের ফলে ব্যারাকপুর শহরের বিভিন্ন জায়গায় বেড়িয়ে পরে বেশ কিছু অনিয়ম যা আজ অবধি সকলের চোখ এড়িয়ে বেশ রমরমিয়ে চলছিল।