ওয়েবডেস্ক, বেঙ্গল টুডেঃ
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ঐতিহাসিক ‘লালকেল্লা’ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ায় দেশের প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেস তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই ঘটনাকে দেশের জন্য ‘কালো দিন’ বলে অভিহিত করেছেন।
প্রতি বছর ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে ঐতিহ্যবাহী লালকেল্লাতে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা সহ দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র রণদীপ সূর্যেওয়ালা এ ব্যাপারে দেশে ক্ষমতাসীন বিজেপির জাতীয়তাবাদ নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ” মিথ্যা জাতীয়তাবাদের বুলি আওড়ানো নরেন্দ্র মোদি (প্রধানমন্ত্রী)-অমিত শাহ (বিজেপি সভাপতি) কী লালকেল্লাকে বন্ধক রাখার আগে স্বাধীনতার ইতিহাসে তার গুরুত্বের কথা জানেন? এই লালকেল্লার র্যামপার্ট থেকেই ১৮৫৭ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। এখানেই আইএনএ-র (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি) ঐতিহাসিক বিচারপর্ব হয়েছিল। সেই লালকেল্লার দেওয়ালে এবার কর্পোরেট সংস্থার সাইনবোর্ড ঝুলবে! “
কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদি সরকারকে কটাক্ষ করে কংগ্রেসের প্রশ্ন ‘এবার কী তালিকায় সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনও থাকবে?’
এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “লালকেল্লা আমাদের দেশের একটা প্রতীক। স্বাধীনতা দিবসে এখানেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এটা ভাড়া দেওয়া হবে কেন? ইতিহাসের একটা কালো এবং অন্ধকার দিন।”
বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ এবং মুঘল সাম্রাজ্য বিশেষজ্ঞ উইলিয়ম ডারলিম্পল বলেছেন, “লালকেল্লার মতো একটি ঐতিহাসিক কেল্লাকে সংস্কার ও সামগ্রিক পরিচালনার জন্য কর্পোরেট সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার চেয়ে অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা করা উচিত ছিল।”
উল্লেখ্য মুঘল সম্রাট শাহজাহান ১৬৩৯ সালে লালকেল্লা গড়ে তুলেছিলেন এবং এরপর থেকে প্রায় ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে লালকেল্লা ছিল মুঘল সম্রাটদের প্রধান বাসস্থান। মুঘলদের যাবতীয় অমূল্য সম্পদ এবং এই কেল্লার অঙ্গ হিসেবে অপূর্ব মহামূল্যবান পাথর ছিল বিশ্বের বিস্ময়। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ সেনারা লালকেল্লায় তাণ্ডব চালিয়ে প্রচুর মূল্যবান সামগ্রী ধ্বংস ও লুট করেছিল।
এক্ষেত্রে সর্বভারতীয় ইমাম এসোসিয়েশনের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ সাজিদ রশিদি বলেন, “এটা বাস্তবিকই আমাদের সরকারের জন্য লজ্জা! ওরা একটি মুসলিম স্থাপত্য রক্ষণাবেক্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে যা আমাদের ইসলামী সংস্কৃতির অঙ্গ। দেশের অবস্থা কী এতই খারাপ যে, ওইসব ইসলামিক সৌধ রক্ষণাবেক্ষণে সরকার বছরে ৫ কোটি টাকাও খরচ করতে পারে না! সরকারি ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত।”
অবশেষে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী মহেশ শর্মা সাফাই দিয়ে বলেন, ঐতিহাসিক সৌধের প্রযুক্তিগত সংরক্ষণের দায়িত্ব থাকবে ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণ (আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া)-এর হাতেই। শুধু পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা, সাজসজ্জার কাজ সরকারি-বেসরকারি সংস্থার যৌথ উদ্যোগে হবে।