সন্দীপ ঘোষ, ঝাড়গ্রাম :
আন্ত:রাজ্য দু্ষ্কৃতী দলের ৮ জনকে গ্রেপ্তার করল ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ। অজস্র পোষ্টাল স্ট্যাম্প, স্পিড পোষ্ট স্ট্যাম্প, ডিডি ফর্ম, ডেবিট কার্ড, রিং উদ্ধার। ব্যারাকপুর, উড়িষ্যা থেকে দুস্কৃতিদের গ্রেপ্তার। সাধারন মানুষকে প্রলভনের ফাঁদে ফেলে লুঠ করত। এ প্রসঙ্গে প্রেস মিট করেন ঝাড়গ্রাম জেলার পুলিশ সুপার অমিত কুমার ভরত রাঠোর। মোবাইলে ম্যাসেজ এর প্রলভন দেখিয়ে রামবাবুর চার চাকা গাড়ি জেতার জন্য তাকে কয়েক হাজার টাকা দিয়ে সেই গাড়ি নিতে হবে। আর সেই প্রলোভনে পড়েই টাকা দিয়েছেন রামবাবু। আর এর পেছনেই রয়েছে একটা বিরাট প্রতারনা। সংবাদ মাধ্যমে এরকম ঘটনা হামেসাই চোখে পড়ে। তা সত্বেও মানুষ বারে বারে এই প্রলভনে প্রতারনার শিকার হচ্ছেন। কিন্তু এদিন ঝাড়গ্রাম জেলায় জেলা পুলিশের উদ্যোগে ব্যাতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশের উদ্যোগে একটা আন্তঃরাজ্য বিরাট প্রতারনা চক্রের পান্ডাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। দুঃস্কৃতিদের অধিকাংশই বিহারের বাসিন্দা।
পুলিশের গোপন সুত্রে জানা যায়, ওড়িশার রাউরকেল্লাতে একটি কল সেন্টার থেকে মোবাইলে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে মানুষকে ঠকাচ্ছিল দলটি। ২৭শে এপ্রিল ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠোর একটি সংবাদিক বৈঠকে জানান । পুরো এই চক্রের পান্ডাকে ওড়িশার রাউরকেল্লা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওড়িশার রাউরকেল্লাতে দুঃস্কৃতিরা একটি কল সেন্টার মতো অফিস তৈরী করে এই প্রতারনার চক্র চালাতো। ক্রমে এই চক্রন্ত ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী রাজ্য গুলিতে। ঝাড়খন্ড,বিহার,ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে এই প্রতারনার ব্যবসা ছড়িয়ে দিয়েছিল দলটি। ধৃত ৮ জনের মধ্যে রয়েছে বিহার, ওড়িশা,কলকাতার বাসিন্দা। এদের কলকাতা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রফতার করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন ১৮ই এপ্রিল গোপীবল্লভপুর থানা এলাকার এক ব্যক্তি থানায় অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগে তিনি জানিয়েছিলেন তার কাছে একটি এসএমএস আসে তিনি মারুতি গাড়ি জিতেছেন বলে। তাকে এও বলা হয় গাড়ি নিতে হলে প্রথমে কিছু টাকা দিতে হবে। আর নগদ অর্থ নিতে হলে কিছু কম টাকা দিতে। এরপর ওই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে বেশ কিছু টাকা চলে আসে। তার পর একটি গিফট ভাউচার আসে। তার স্ক্রেচ কার্ড এবং একটি সেনালী রংএর আংটি পাঠানো হয়। এরপর আবার টাকাও চাওয়া হয়। এই পুরো ঘটনায় অভিযোগকারীর সন্দেহ হয় এবং তিনি থানায় জানান। পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পরই বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে। তদন্তে পুলিশ বুঝতে পারে এর এই ঘটনার সাথে বড় একটি চক্র রয়েছে। পুলিশ তদন্তে নেমে প্রথমে কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে গৌরভ রায়, অর্নব বন্দ্যোপাধ্যায়, পিজুস দাসের গ্রেফতার করে। এদের বাড়ি উত্তর চব্বিশপরগনা এলাকায়। এদের জিঞ্জাসাবাদ করে পুলিশ বিহারের বাসিন্দা চক্রের মূল পান্ডা অনজনি কুমার গুপ্তাকে ওড়িশার রাউরকেল্লা থেকে গ্রেফতার করে। এর সহযোগী হিসেবে পুলিশ বিহারের বাসিন্দা বিমলেশ পাশোয়ান, বিকাশ কুমার, রাহুল কুমার এবং পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা আনন্দ শর্মাকে তাদের গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে। পুলিশ এদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিঞ্জাসাবাদ করে জানতে চাইছে এই চক্রের সাথে আরো কে কে জাড়িত আছে, সরকারি কোন কর্মী যুক্ত আছে কিনা। পুলিশ ধৃতদের কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল, অনেক বিভিন্ন ঠিকানার স্ট্যাম্প, ইমিটেশনের আংটি, অনেক ডেভিড কার্ড, স্ক্রাচ কার্ড উদ্ধার করছে। এছাড়ও মানি অর্ডারের কাগজ সহ পোস্ট অফিসের স্ট্যাম্প উদ্ধার হয়েছে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন প্রলোভন দেখিয়ে মূলত এই প্রত্যরনার ব্যবসা চালানো হচ্ছিল। পুলিশ আরো তদন্ত করছে।