ওয়েব ডেস্ক, বেঙ্গল টুডেঃ
স্কুলের ভিতর থেকে কর্মরত অবস্থায় সিপিএমের জেলা পরিষদের এক প্রার্থীকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তুলে নিয়ে অপহরণ করল একদল দুষ্কৃতী। ঘটনার জেরে গোটা স্কুল চত্বরে ছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিদের মধ্যে তীব্র আতংক ছড়িয়ে পড়ে। আবার এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও দুষ্কৃতীদের এই অন্যায় কাজের প্রতিবাদও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকাকেও বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দেয় দুষ্কৃতীরা। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই প্রকাশ্যে সকলের সামনে স্কুলে ঢুকে দুষ্কৃতীরা এই কান্ড ঘটিয়ে চলে যাওয়ায় রীতি মত তাজ্যব বনে যান সকলেই। এই ঘটনার পরেই স্কুলের ছাত্রী থেকে শুরু সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকা সকলেই তীব্র আতংকিত হয়ে পড়েন। জীবনে এই প্রথম এই স্কুলে এইধরনের ঘটনা প্রথম হল বলেই জানান শিক্ষিকারা। এর আগে কখনওই এই কান্ড ঘটেনি। যদিও স্কুল থেকে খানাকুল থানার একটি পুলিশ ফাঁড়ি অবস্থিত। এত কাছে এই ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কিছুই করেনি বলে অভিযোগ। পরে গ্রামবাসীদের প্রতিবাদে ও রুখে দাঁড়ানোয় খানাকুল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
২১শে এপ্রিল খানাকুলের পলাশ পাই বিজয় মোদক বালিকা বিদ্যালয়ে দুপুর দেড় টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। এদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অপহৃত সিপিএম নেতা তথা জেলা পরিষদের প্রার্থী হরি মোহন মানের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য যে হরি মোহন এই বালিকা বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেনীর একজন কর্মী। ঘটনার পরেই জানাজানি হতেই এলাকার সিপিএম কর্মী, সমর্থক ও গ্রামবাসীরা এক যোগে স্কুল ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পাশাপাশি সিপিএমের ওই নেতা ও প্রার্থী তথা স্কুলের কর্মীকে উদ্ধার করার দাবিতে তারা হাওড়া -- মুচিঘাটা পথ অবরোধ করে রাখেন। ঘটনার জেরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী হাজির হয় । অন্যদিকে ঘটনা স্থলে খানাকুল থানার পুলিশ হাজির হলে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী ও সিপিএম কর্মীরা তাদের ঘেরাও করেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পুলিশের সামনেই ক্ষুব্ধ জনতা স্কুলের প্রধান দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। কেন এই ঘটনা ঘটল সে বিষয়ে পুলিশের কাছেই প্রশ্ন তোলেন তারা। এই ঘটনার জন্য পুলিশ কেও দায়ী করেন ক্ষুব্ধ জনতা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সামনেই খানাকুল থানার পুলিশ ফাঁড়ি। তা সত্বেও কি করে এই রকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে। পাশাপাশি এদিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, স্কুল চত্বরে বহু লোকের জমায়েত। তারা প্রত্যেকেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ও অপহৃত এই কর্মী তথা সিপিএমের প্রার্থীকে উদ্ধার করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখচ্ছিলেন। স্কুলের ভিতরে তখনও শিক্ষিকা ও অন্যান্য কর্মীরা বসেছিলেন। প্রত্যেকের চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ। প্রকাশ্যে স্কুলে ঢুকে বন্দুক ঠেকিয়ে একজন যে তুলে নিয়ে গেল সে বিষয়ে বিস্মিত সকলেই। তখনও তারা ভয়ে আড়ষ্ট হয়েছিলেন। প্রত্যেকেই যেন বাক রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলেন।
খানাকুল ২ নং ব্লকের ৫০ নং আসনে সিপিএমের হয়ে প্রার্থী পদে মনোনয়ন জমা দেন হরিমোহন মান। তিনি এই এলাকার সিপিএমের এক জন এরিয়া কমিটির নেতা। আবার একই আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী পদে মনোনয়ন পত্র জমা ফেন রমেন প্রামানিক। সিপিএমের প্রার্থী হরিমোহন মানের ছেলে মানসের অভিযোগ, 'বেশ কয়েক দিন ধরেই তৃণমূলের লোকজন হুমকি দিচ্ছিল। আমার বাবা যাতে প্রার্থী পদ তুলে নেয়। বার বার এই হুমকি আসে। কিন্তু আমার বাবা তাতে নারাজ হন। তাই এদিন তৃণমূলের লোক জনই একটি টাটা সুমো করে এসে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে স্কুলের ভিতর থেকে অপহরন করে পালিয়ে যায়। প্রধান শিক্ষিকাকেও বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দেয় এই সব দুষ্কৃতী। আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। থানার ওসি কিছুই করেনি। তার স্ত্রী গোলাপ মান কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ঘটনার পরেই তিনি স্কুলে এসে হাজির হন। তখন থেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার একটাই অভিযোগ,তার স্বামী তো কারুর কোন ক্ষতি করেনি। তার এটাই অপরাধ যে তিনি ভোটে লড়াইয়ের জন্য দাঁড়িয়েছেন।'
এক্ষেত্রে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপা দত্ত বলেন, 'আমি কিছু বুঝে উঠতে না উঠতে ওরা হরি মোহন কে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গেল। আমি বাধা দিতে যাই। ফোন করতে গেলে ওরা আমাকেও বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দেয়। মেয়েরা ভয়ে আতংকিত হয়ে পড়ে। কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ে। আমি আর কিছু বলতে পারছিনা। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমার জীবনে এই ধরনের ঘটনা প্রথম ঘটল।'
যদিও তৃণমূলের প্রার্থী রমেন প্রামানিক বলেন, "আমি কিছুই জানিনা। আমি কলকাতায় ছিলাম। সবচেয়ে বড় কথা যেদিন থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ জারি হয় সেই দিন থেকে আমরাও আর কোন কাজ করিনি। না মিছিল, না মিটিং না দেওয়াল লিখন। এটা ওদের নিজেদের মধ্যেই গন্ডগোল করে হাইলাইট হবার জন্য এই ধরনের একটা নাটক করল। আমি কিছুই জানিনা। পুলিশ তদন্ত করুক না।"
আরামবাগের এস ডি পি কৃষাণু রায় বলেন, "আমরা দেখছি। এলাকায় পুলিশ আছে।" এই প্রত্যুত্তরে গ্রামবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আজ একজন কর্মীকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে অপহরণ করা হল, কাল একজন ছাত্রীকে করবে। তাহলে স্কুলের নিরাপত্তাটা কোথায়। অথচ স্কুল থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই অবস্থিত পুলিশ ফাড়ি। তাহলে তারা কি করছেন। আসলে খানাকুল থানার পুলিশ সব জেনেও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। এমনকি গ্রামবাসীরা খনাকুল থানার ওসি সুব্রত দাস -এর বিরুদ্ধেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সিপি এম নেতা ভজহরি ভুঁইয়া বলেন, "আপনারাই দেখুন, ওরা খেপে গেছে। ওরা স্থান কাল পাত্র দেখে না। ওরা কেবল ক্ষমতা দেখে। ওরা উন্নয়নের কথা বলে। এতই যদি উন্নয়ন, তাহলে কেন প্রার্থীকে অপহরণ করতে হচ্ছে। আসলে ওদের আর মানুষ চাইছে না। তাই জোর জবর দস্তি এই ভাবে অন্যায় করে বেড়াচ্ছে। আমরা সবাইকে জানিয়েছি। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।"