মিজান রহমান, ঢাকাঃ
রাজধানীর ফুটপাত যেন হকারদের দখলে। এছাড়াও ভাসমান দোকানে চারপাশে গাদাগাদি ভিড়। এসব দোকানের কোনো বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও অদৃশ্য শক্তির কারণে দোকান মালিকরা ব্যবসা করে যাচ্ছেন বুক উঁচিয়ে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন ঢাকায় বসবাসকারীরা। তাদের স্বাভাবিক চলাফেরায় বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তারা। এছাড়াও এসব দোকানের কারণে প্রায়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
আতাউর কাজল পেশায় একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। তিনি জানান, বছর খানেক আগে বিজয়নগরে রাস্তা পারাপারের সময় তিনি বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন এবং দ্রুত পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার একটি হাত কেটে ফেলতে হয়। তিনি আরো জানান, রাস্তা পারাপারের ওই সময় তিনি এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যেতে পারতেন যদি ফুটপাতে ভাসমান দোকান না থাকত। তিনি আরো জানান, সেসময় তিনি বিপদ টের পেয়ে দ্রুত ফুটপাতে উঠতে চেয়েছিলেন কিন্তু ফুটপাতে দোকান থাকায় তিনি আর ফুটপাতে উঠতে পারেননি। বর্তমানে কাজল বেকার জীবন পার করছেন।
এদিকে এসব ভাসমান দোকানের মালিকরা জানান, তারা স্থানীয় নেতাদের অনুমতি নিয়ে দোকান দিয়েছেন এবং প্রতিদিন তাদের নির্দিষ্ট পারিমাণ চাঁদা দিচ্ছেন। তারা জানান, ফুটপাতে বসতে অনুমতিদানকারী নেতারা প্রতিদিন ৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত টাকা নিয়ে থাকে। কথা হয় শান্তিনগরে ফুটপাতে বসে ভাজা খাদ্যপণ্য উৎপাদন ও বিক্রেতা মো. রাসেল হাওলাদারের সঙ্গে। তিনি জানান, মাসখানেক আগে গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগেছিল। তবে বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এছাড়া এমন আগুন মাঝে-মধ্যেই লেগে থাকে বলে তিনি জানান। পথচারী মো. ইকবাল হোসেন জানান, ফুটপাতে সারি সারি দোকান থাকার কারণে ঠিকমতো হাঁটা যায় না। মাঝে মাঝে ফুটপাতে মানুষের জ্যাম তৈরি হয়। তিনি আরো জানান, একবার মৌচাকে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার পথে মানুষের জ্যাম পড়ে তার মানিব্যাগ হারিয়ে যায়। মানিব্যাগে টাকা ছাড়াও মূল্যবান কাগজ ছিল। যা ফের উঠাতে তাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এমনকি ঢাকার ফুটপাত দখলমুক্ত করতে শুধু হকাররাই নয়, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও বড় বাধা, কিছু দিন আগে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়র এমনটাই দাবি করেছিলেন। যদিও সম্প্রতি প্রয়াত হন ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক।
অন্যদিকে বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র বলছে, পুলিশ ও প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা হকারদের সাহায্য করেন। তাদের সহায়তার কারণে ফুটপাত ও রাস্তা থেকে হকারদের উচ্ছেদ করার পরও তারা আবার তা দখল করে নেয়।
ফুটপাতে ব্যবসা চালানোয় পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সব পুলিশ নির্দোষ নয়। তবে বিষয়টি উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের নজরদারিতে রয়েছে। এ কাজে কোনো পুলিশ কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের চলাচল রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেট। গুলিস্তানের পরই সবচেয়ে বেশি মানুষের পদচারণা থাকে এখানে। দিন রাতের সব সময়ই গিজগিজ করে মানুষ। ফার্মগেটে এত পথচারী অথচ সেখানে ফুটপাত ধরে হেঁটে চলাচল করার কোনো সুব্যবস্থা নেই। দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি পাচ্ছে না ফার্মগেটের ফুটপাতগুলো। ফুটপাতজুড়েই গিজগিজ করছে দোকান। পথচারীদের হাঁটার জায়গা দখল করে নানা রকমের বাজার সাজিয়ে রেখেছে অবৈধ দখলদাররা। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার মতো পরিস্থিতি নেই সেখানে। তাই বাধ্য হয়ে পথচারীরা নেমে এসেছেন মূল সড়কে। যে কারণে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সেই সঙ্গে তো থাকছে পথচারীদের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকাজুড়ে ফুটপাতে দোকানের আধিক্য অসহনীয়। ফুটপাতগুলো হকাররা দখল করে ব্যবসা করলেও এর নেপথ্যে আছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট।