মিজান রহমান, ঢাকা:
সাজা খাটার ২৭ বছর পর প্রমাণিত হলো আসামি নির্দোষ। গরু পাচারের মামলায় ১৯৮৭ সালে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয় যশোরের শার্শা উপজেলার আবদুল কাদের ও মফিজুর রহমানকে। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সাজাও খেটেছিলেন তারা। কারাগারে যাওয়ার পর উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করেন দুজন। ২১ মার্চ বুধবার ওই মামলার নিষ্পত্তি করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে ওই দুই আসামিকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে রায় ঘোষণার আগেই মারা গিয়েছেন আসামি মফিজুর। জানা গেছে, অবৈধভাবে ভারত থেকে ছয়টি গরু পাচার করে আনার অভিযোগে ১৯৮৬ সালে যশোরের শার্শা থানায় আবদুল কাদের ও মফিজুর রহমানের নামে মামলা হয়েছিল। তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) ল্যান্স নায়েক আমির আলী এই মামলাটি করেছিলেন। যশোরের আদালত ১৯৮৭ সালে পাঁচ বছরের সাজা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠায়। ওই বছরই দুই আসামি সাজার বিরুদ্ধে তৎকালীন যশোর হাইকোর্টে খালাস চেয়ে আপিল করেন। পরে সে বছর দেশের বিভাগীয় হাইকোর্ট অবলুপ্ত হলে ওই আপিল মামলাটিও ঢাকার হাইকোর্টে চলে আসে। এর মধ্যে ১৯৯১ সালে কাদের ও মফিজুর কারাভোগ শেষে মুক্তি পান। কিন্তু খালাস চেয়ে করা আপিলের আর কখনো শুনানি হয়নি। এ বিষয়ে আর কোনো খোঁজ খবরও নেননি ওই দুজন। এরই মধ্যে মফিজুর মারা যান। মারা যান তাদের হাইকোর্টের আইনজীবী আবদুল ওয়াহ্হাবও। এদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা পুরাতন মামলা নিষ্পত্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করলে আপিল মামলাটি হাইকোর্টের কার্যতালিকায় আসে। পরে আইনজীবী মারা যাওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আসে। সে কারণে আইনজীবী নিয়োগ দিতে গত বছর হাইকোর্ট থেকে নোটিশ ইস্যু করা হয় আপিলকারীদের নামে। নোটিশ পেয়ে আবদুল কাদের হাইকোর্ট আসেন। পরে গত বছরের ৩০ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসের কাছে আইনজীবী নিয়োগের জন্য আবেদন করেন তিনি। তার কাছে হাইকোর্টের নোটিশ ছাড়া মামলার আর কোন কাগজপত্রও ছিল না। এ অবস্থায় লিগ্যাল এইড অফিস আইনজীবী কুমার দেবুল দেকে এই মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেন। ২১ মার্চ বিচারপতি মো: রেজাউল হক আপিলের শুনানি করে তাদের খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। সাজা খেটে বের হওয়ার এত বছর পর নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে বলেন, “কারাগার থেকে বের হওয়ার ২৭ বছর পর প্রমাণিত হয়েছে তারা নির্দোষ ছিলেন। এখন এ রায় হয়তো তাদের ক্ষেত্রে কোনো লাভ হলো না। তবে এতদিন তারা ছিলেন সাজাপ্রাপ্ত, কিন্তু এখন তারা নিজেকে নির্দোষ বলতে পারবে। এ রায়ে সমাজে তাদের ভাবর্মুর্তি উজ্জল হলো।”