শান্তনু বিশ্বাস, হাবরা:
কথায় বলে “অভাবে স্বভাব নষ্ট” হয় মানুষের, ও “লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু”। হাবড়া থানার অন্তর্গত মছলন্দপুরে জোড়া খুনের ঘটনায় এই দুই কথাই যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে কাঠ জাতিও কিছু দিয়ে নিজের বৌ ও মেয়েকে মাথায় আঘাত করে মেরে নিজেও আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন মছলন্দপুরের বাসিন্দা বছর চল্লিশের শেখর দেবনাথ।
সুত্র মারফৎ জানা যায় যে শেখর দেবনাথের একসময় ব্যাগ তৈরির কারখানা ছিল ও তা তৈরি করে দীঘায় বিক্রি করতেন শেখর দেবনাথ, কিন্তু পয়েসার অভাবে তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আবার বছর দেড়েক আগে রেডিমেড গার্মেন্টস সেলাইয়ের কারখানা করেন শেখর বাবু কিন্তু তাও অল্পদিনেই লাটে ওঠে। অপর দিকে বাড়ী তৈরির জন্য বাজার থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নিয়েছিলেন ফলে বাজারে ছিল প্রচুর ধার দেনা। তারপর পরে আবার ছিল লটারির বড়ো নেশা। এই নিয়ে কিছুটা সাংসারিক অশান্তি লেগে ছিল পরিবারের মধ্যে।
শেখর ও মিঠু দেবনাথের একটি মাত্র মেয়ে পূজা এবারই জীবনে প্রথম বার বড়ো পরীক্ষা দিচ্ছিল। শনিবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে আসার পর থেকেই আর দেখতে পাওয়া যায়নি ভূদেব স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়েরর ছাত্রী পূজা ও তার মা মিঠু দেবনাথকে। সোমবারও পরীক্ষা দিতে যায়নি পূজা। মঙ্গলবার পূজার কয়েকজন বন্ধুর তার সঙ্গে দেখা করতে যায়। সেখানেই বাধে গোল। পূজার বাবা শেখর দেবনাথের অস্বাভাবিক আচরণ লক্ষ্য করে তারা। বিষয়টি নজর এড়ায়নি প্রতিবেশীদেরও।আপাতত নিরীহ মানুষ বলেই এলাকায় পরিচিত শেখর। তবে লটারির অতিরিক্ত নেশা ছিল তাঁর। ইদানীং মদ্যপানেরও আসক্তি বাড়ে। লটারির জন্যই বাজারে শেখরের দেনা বাড়তে থাকে। কিন্তু তা থেকেই যে তিনি চরম পথ বেছে নেবেন, তা ভাবতে পারেননি কেউ। স্ত্রী-মেয়েকে খুন করেই আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন শেখর। কিন্তু স্থানীয়দের তৎপরতায় তা আর হয়নি। শেখরের তিন তলা বাড়ি। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, কতটা আর্থিক কষ্ট ছিল এই পরিবারে। সিঁড়ির নিচে এখনও দাঁড় করানো পুজার সাইকেল। স্কুল ব্যাগ, জুতো। সিঁড়ি দিয়ে উপরে যেতেই চোখে পড়ল মাস্টার বেডরুম। সেই ঘরেই খাটের নিচে প্লাস্টিকে মোড়া অবস্থায় পড়ে ছিল পূজা ও তার মায়ের মৃত দেহ।
ঘরের সাথেই কারখানা, কারখানার ঘরে যেতে দেখা যায় দুটি মদের বোতল, দুটি কাচের গ্লাস, একটি বিরিযানী প্যাকেজ সহ একটি বাটি। তবে পরীক্ষা চলাকালী কেন মেয়ে-স্ত্রীকে খুন করতে গেলেন শেখর দেবনাথ? মেয়েক নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তাঁর। প্রতিবেশীদের কথাতেই বারবার উঠে এসেছে সে বিষয়। কিন্তু কেন এভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীনই এই চরম পথ বেছে নিলেন শেখর? কেন এভাবে তাঁর সখের বলি হতে হল? শুধুই কি দেনা, নাকি অন্য কারণ? যে মানুষটা পাড়ার কোনও ঝামেলায় থাকত না, এত বড় পদক্ষেপ করতে কি একবার হাত কাঁপল না তাঁর? কীভাবে খুন করলেন তিনি? কেনই বা দুটি খুন হয়ে যাওয়ার দুদিন পরও টের পেলেন না প্রতিবেশীরা? কারখানার মেঝেতে পরে থাকা দুটো মদের বোতল ও দুটো গ্লাস কিন্তু ইঙ্গিত করে সেইদিন শেখর বাবুর সাথে আরও কেউ নিশ্চিত ছিলেন, তিনি কে?
শেখর দেবনাথকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করেছে হাবড়া থানার পুলিশ ও বারাসাত আদালতে পেশ করা হলে তাকে দুই দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। বর্তমানে হাবড়ার এই ঘটনার তদন্তে নেমে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে নিজে যান সঙ্গে ছিলেন হাবড়া থানার আধিকারি মৈনাক ব্যানার্জি। প্রাথমিক তদন্তের পর অভিজিৎ বাবুর বক্তব্য অভিযুক্ত কাঠ জাতীয় কিছু দিয়ে আঘাত করে খুন করেছে স্ত্রী ও মেয়েকে । দেনার দায়ে ডুবে মানশিক ভাবে ভেঙে পড়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ।
[espro-slider id=2604]
স্ত্রী ও মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেয়ে খুন কাণ্ডে ঘটনার পূননির্মাণ করলো হাবরা থানার পুলিশ, ২১শে মার্চ, বুধবার দুপুরে মছলন্দপুর, চাতরা, এলাকায় গিয়ে যে দোকান থেকে মদ, ছোলা, আঙুর কিনেছে ও মৃতদেহ ঢাকার জন্য মছলন্দপুরের যে দোকান থেকে প্লাস্টিক ও বিরিযানী কিনেছে সেই সব দোকান গুলি পুলিশকে দেখালো ধৃত শেখর দেবনাথ l