সন্দীপ ঘোষ, ঝাড়গ্রাম:
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
লালগড়ের পডিহাতে ঝিটকার গভীর জঙ্গল থেকে উদ্ধার দুই শিশু কন্যা । জঙ্গলে বাঘের আতঙ্ক থাকা সত্বেও পেট চালাতে জঙ্গলে কাঠ,পাতা কুড়োতে আসেন এক শবর দম্পতি। তখন প্রাথমিক ধারনায় শুকনো পাতাতে হাঁটার শব্দ শুনে আতকে উঠেন এই বুঝি এল বাঘ মামা। তবে একটু সাহস করে শবর দম্পতি কার্তিক শবর, সরস্বতী শবর এগিয়ে গিয়ে যা দেখলেন তাতে বিস্ময়ের শেষ ছিলনা। দুটি শিশু ইতস্তত ভয়ার্ত মুখ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই দম্পতি তাদের জড়িয়ে ধরে সব কিছু জানতে চাইলে রীতিমত কান্না কাটি শুরু করে শিশু দুটি।
২০ শে মার্চ লালগড়ের পডিহার জঙ্গল থেকে এই শবর দম্পতির মানবিক চেষ্টায় উদ্ধার হল দুটি শিশু। শনিবার থেকে শিশু দুটি কিছু না খেয়ে লালগড়ের এই গভীর জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। প্রায় তিনদিন কিছু না খেয়ে শিশু দুটি রাস্তা খোঁজার অক্ষম চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারা এই কদিন ধরে কিছুতেই রাস্তার খোঁজ পায়নি। কার্তিক এবং তার স্ত্রী সরস্বতী শবর শিশু দুটিকে উদ্ধার করে এদিন দুপুরে লালগড় থানায় নিয়ে আসে। থানা আসার পর থেকে কেবল কেঁদেই চলছিল তারা।
লালগড় থানার আইসি অরুন খানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল শিশু দুটিকে। অরুন বাবু প্রথম থেকেই শিশু দুটিকে খাওয়ানোর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন। ভাত,রুটি সবজি খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলেন।কিন্তু কিছুতেই তারা খায়নি। তবে পুলিশের একান্ত চেষ্টায় তারা চকলেট,বিসকুট খেয়েছে।
পুলিশ জানান, শিশু দুটিকে ঝাড়গ্রামের মহকুমা শাসকের মাধ্যমে মেদিনীপুর হোমে পাঠানো হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে শিশু দুটির বয়স এক জনের ৬ বছর। আরেক জনের সাত বছর। তারা আধো আধো উচ্চোরনে জানিয়েছে তাদের নাম সুকুরমনি হাঁসদা,সংক্রান্তী হাঁসদা। শিশু কন্যা দুটি জানিয়েছে তাদের বাড়ি মাজুগেড়িয়াতে। এদের বাবা মঙ্গল হাঁসদা ছোট বেলায় তাদের ছেড়ে চলে যায়। তাদের মা ফুলমনি হাঁসদার কাছেই তারা ছিল। শনিবার ফুলমনি হাঁসদা শিশু দুটিকে লালগড়ের পডিহার জঙ্গলে ছেড়ে যায় বলে শিশু দুটি পুলিশকে জানিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে বারিকুল থানার অধীন মাজুগেড়িয়া বলে একটি জায়গা আছে। পুলিশ সেই জায়গাতেও শিশু দুটির মা ফুলমনির খোঁজ চালিয়েছে। যদিও সেখানে এই নামের কাউকে এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।শিশু দুটির উচ্চারন খুব একটা পরিস্কার নয়। তাই ওই নামের কাছা কাছি মিল আছে এমন সব জায়গা গুলিতেও খোঁজ চালাচ্ছে পুলিশ। যেখানে লালগড় তথা পশ্চিম মেদিনীপুর,বাঁকুড়া জেলার জঙ্গল গুলিতে বাঘের আতঙ্গ তীব্র সেখানে কি ভাবে একজন মা এত ছোট্ট দুটি শিশুকে গভীর জঙ্গলে ছেড়ে গেল তা নিয়ে তদন্ত শুরু করছে পুলিশ। পাশাপাশি শিশু দুটির বক্তব্যও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
জানা যায়, লালগড়ের বাঘাখুলি গ্রামের বাসিন্দা কার্তিক শবর ও তার স্ত্রী সরস্বতী শবর অন্যান্য দিনের মতো জঙ্গলে কাঠ,পাতা সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন। তারাই লক্ষ করে ছিলেন গভীর জঙ্গলের ভিতর দুটি শিশু কান্যা চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই দম্পতিই নিজেরদের চেষ্টায় বাচ্চা দুটিকে পরম মমতায় উদ্ধার করে লালগড় থানার আইসি অরুন খানের হাতে তুলে দেন।পুলিশ জানিয়েছে শিশু দুটির চেহারায় অপুষ্টির ছাপ রয়েছে। খুবই দরিদ্র পারিবারের কন্যা সন্তান বলেই মনে হচ্ছে। কিভাবে তারা এত গভীর জঙ্গলে এসে পৌছালো সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক করছে। কেন তাদের মা জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে গেল অত্যন্ত আতঙ্কিত শিশু দুটি সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। এলাকার বাসিন্দারা মনে করছে শিশু দুটি জঙ্গলে থেকে গেলে বাঘ বা অন্য কোন বন্য জন্তুর দ্বারা আক্রান্ত হতে পারত। সবাই ধন্যবাদ জানাচ্ছে কার্তিক এবং সরস্বতী শবরকে।
লালগড় থানার আইসি অরুন খান বলেন “আমরা দুটি শিশুকে জঙ্গল থেকে পেয়েছি। একটি পরিবার তাদের উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল। আমরা শিশু দুটির প্রাথমিক চিকিৎসা করিয়েছি। তারা যে ঠিকানা জায়গার কথা বলেছে আমরা সেই জায়গাটি সনাক্ত করার চেষ্টা করছি। তার মধ্যে শিশু দুটিকে হোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।”