এই মুহূর্তে একদিকে মৃতদেহ রাখতে দৈনিক ভাড়া ৩০০০ টাকা, আবার হোটেলে থাকার খরচ ৩০০০ টাকা। এর ওপর রয়েছে খাওয়ার খরচ আর অজস্র নিয়মের গেরো। এর মধ্যেই গত ৩ দিন ধরে মৃতদেহ নিয়ে কলকাতায় আটকে তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ের পরিবার। অথচ করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট না দেখে কোনও বিমান সংস্থাই দেহ নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে না। অপরদিকে ময়নাতদন্ত হওয়া এই মৃতদেহের কোনও কোভিড রিপোর্টও নেই। এমত অবস্থায় কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে কলকাতা থেকে তামিলনাড়ুতে মৃতদেহ ফেরাতে কার্যত কালঘাম ছুটেছে এই পরিবারের।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
প্রসঙ্গত মৃত অ্যালেন কলকাতা ট্রাম কোম্পানির একজন ক্যাশিয়ার। ২২ সেপ্টেম্বর সকালে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক হয় তাঁর। সহকর্মীরা অ্যালেনকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের পর দেহ তুলে দেওয়া হয় মৃত অ্যালেনের সহকর্মীদের হাতে। বাড়িতে খবর পৌঁছলে তামিলনাড়ুর মাদুরাই থেকে অ্যালেনের একমাত্র সন্তান ইশাক এবং আত্মীয়রা কলকাতায় আসেন মৃতদেহ ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আর এরপরেই শুরু হয় এই সমস্য়া।
দেহ নিয়ে দমদম বিমানবন্দরে গেলে করোনার রিপোর্ট দেখতে চাওয়া হয়। আর তা না থাকায় দেহ সমেত ফিরিয়ে দেওয়া হয় মৃতের পরিবারকে। অ্যালেনের আত্মীয় প্রদীপ ওশান্তরয় বলছেন, “আমরা পোস্টমর্টেমের পর দেহ আমাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু এয়ারপোর্টের এয়ারলাইন্স কোম্পানি বলছে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট না হলে তাঁরা দেহ বিমানে তুলবেন না। পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট বলছে হার্ট অ্যাটাকেই মৃত্যু হয়েছে অ্যালেনের।”
মৃতের ছেলে ইশাক কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া। বাবার দেহ নিয়ে অসহায় ইশাকের আর্তি, আমরা এখন অথৈ জলে পড়েছি। কী ভাবে দেহ বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাব বুঝতে পারছি না। প্রশাসনের কাছে সাহায্য চাইছি।আমাদের টাকা পয়সা ফুরিয়ে আসছে। যেভাবে হোক দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরতে চাই।”
অন্যদিকে এসএসকেএম হাসপাতালের যুক্তি, পোস্টমর্টেমের পর নতুন করে করোনা পরীক্ষা করে কোনও সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে এসএসকেএম হাসপাতালে সুপার রঘুনাথ মিশ্র বলছেন, “ময়নাতদন্তের পর দেহ নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী দেহ প্যাক করে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে মৃতদেহের ময়নাতদন্তের পর নতুন করে আর কোন করোনা পরীক্ষা করার নিয়ম নেই। তাই এটা সম্ভব নয়। তা ছাড়া মৃতদেহ থেকে করোনা ছড়ায় না।”
আর এই সব একাধিক যুক্তির মাঝে পড়ে নাস্তানাবুদ অবস্থা ভিনরাজ্য়ের পরিবার ও কফিনবন্দি মৃতদেহ। রেখে দেওয়া হয়েছে ঠান্ডা ঘরে। প্রিয়জনের দেহ আগলে কলকাতায় পরে রয়েছেন। হোটেল ভাড়াও গুনছেন। ছুটে বেরাচ্ছেন হাসপাতাল থেকে বিমানবন্দর। প্রশাসনিক সাহায্য় চাইছে অসহায় পরিবার। উল্লেখ্য, আকাশ পথে ফেরার কোনও ব্যবস্থা না হলে সড়ক পথেই দেহ নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়েছে পরিবার।