অরিন্দম রায় চৌধুরী ও শান্তনু বিশ্বাসঃ
৮ই মার্চ বিশ্ব নারী দিবস, আর এই দিনটিকে মানুষ বেশ ধুমধামের সাথে পালন করলো বিশ্বের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন্য স্থানে। একদিকে যেমন দেখা গেল ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের উদ্যোগে ব্যারাকপুর সুকান্ত সদনে আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যারাকপুর এর নগরপাল ডাঃ রাজেশ কুমার সিং, রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লিনা গাঙ্গুলী, পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন অন্যান্য চক্রবর্তী, মনোবিদ ডাঃ সুভর্না সেন সহ বিশিষ্ট জনেরা। অনুষ্ঠানে নারী শক্তি বিকাশ সহ সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে আলোচনা করা হয়। উপস্থিত সকলের বক্তব্যর মধ্যে উঠে আসে বর্তমানে স্কুল গুলিতে শিশুদের যৌন হেনস্থার কথা এবং তার উপর আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির কথা। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের নগরপাল রাজেশ কুমার সিং বলেন স্কুল ও কলেজে ছাত্রীদের আত্বরক্ষা শেখানোর জন্য বিশেষ একটি দল তৈরী করা হয়েছে যে দলটি স্কুল কলেজে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু করেছে ।
[espro-slider id=1979]
অপরদিকে আজ সকাল থেকেই সাজ-সাজ রব দেখা যায় নেতাজী আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে রঙ্গারঙ এই অনুষ্ঠানে নারীদের প্রতি সম্মাননা দেখানো হয়ে উপস্থিত সকল মহিলার হাতে ফুলের স্তবক তুলে দিয়ে। এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়ে এয়ারপোর্ট অপারেটরস কমিটির তরফ থেকে। এই দিন এয়ারপোর্টের বিভিন্ন্য এজেন্সি থেকে আসা নারীদের প্রতিও সম্মান জ্ঞাপন করা হয়ে। নারী দিবসের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ডিসট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট অন্তরা আচার্য। নানা রঙ্গের নাচ-গানের মধ্যে সমগ্র নারী জাতীকে সম্মান জানায় একসাথে এয়ারপোর্টের ATC, AAI, CISF, AIRLINES IMMIGRATION ও CUSTOMS দফতরের কর্মীরা। এই অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থাপনার ভার সামলান IATA-র চেয়ারপার্সন ক্যাপ্টেন শর্বেশ গুপ্তা।
[espro-slider id=1987]
এত গেল নারীদের প্রতি সম্মান ও তাদের সমান অধিকারের কথা এবার যে খবর আমাদের চোখ কাড়লো তা দেখলে সমাজে নারীরা যে অপরিহার্য, সম্মানযোগ্য, সমান অবদানকারী তাই প্রমাণ করে। বেশী দূর নয় কোলকাতা থেকে মাত্র ৪৫ কিলোমিটার দূরে উওর ২৪ পরগনার বসিরহাটের মিনাখাঁর গোয়ালদহ গ্রামের ঘটনা। এলাকায় পুরুষ নেই বললেই চলে, থাকলেও অধিকাংশ সবাই কর্মহীন। কর্মহীনও বলা অবশ্য ঠিক হবে না। বলা যেতে পারে সবাই মৃত্যু পথযাত্রী। তাই এখানে বিলাসিতার কোন জায়েগা নেই তাই বিলাসিতার কথা ভুলে কোন রকমে পেট টুকু চালানোর জন্য সংসারের জাবতীয় দ্বায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে বাড়ীর নারীরা। সামান্য কিছু অর্থের জন্য ছোট বাচ্চার পেটের ক্ষিদের কান্নাও মায়ের কানে পৌঁছায় না। কারন মা যে শুধু ব্যাস্ত কিভাবে কিছু টাকা রোজগার করা যায় যাতে মুমুর্স স্বামী বা ছেলে মেয়ে দের পেটে অন্ন যোগাবে। ২০০৯ এর আয়লা ঝরের পর সব কিছু হারিয়ে এলাকার প্রায় অধিকাংশ পুরুষ লোকেরা কোন উপায় না দেখে পাথর খাদানে কাজ করতে যায় বেশী টাকা রোজগারের আশায়। কয়েক মাস কাজ করার পর প্রচন্ড কাশির উপসর্গ নিয়ে ফিরে আসে প্রায় সবাই। তারপর জানা যায় তারা সবাই “সিলিকোসিস” রোগে আক্রান্ত। এরই কিছুদিন পর থেকেই শুরু হয় এলাকায় মৃত্যুর মিছিল যা এখনও ২০১৮ সালেও অব্যহত। সংসারের উপার্যন কারীর মৃত্যুতে বা ওই রোগে আক্রান্ত হবার জন্য বাড়ীর মহিলারা বাধ্য হয়েই সংসারের কাজের সঙ্গে উপার্জনের রাস্তায় নেমে পড়েন। বাড়িতে শাড়ির উপর চুমকি,পুঁতি,জরী কাগজ দিয়ে হরেক রকমের ডিজাইন করে একটু রোজগার করে কোন রকমে পেট চালাচ্ছে। বাড়িতে ছোট বাচ্চা কিম্বা মুমুর্স রুগী ফেলে কোথাও যাওয়ার অবস্থায় না থাকার জন্য। তাই ব্যাধ্য হয়ে শরীরের ক্ষতি জেনেও এই ডিজাইনের কাজ বেছে নিয়েছে। আনোয়ারা বিবি,আমিনা বিবিদের মত অনেক গৃহবধূ বলেন “এই কাজ করে আমার উপার্জন করি মাসে প্রায় ১০০০-১৫০০। এই কাজ খুবই সুক্ষ। এতো সুক্ষ কাজ তার জন্য চোখ আর ঘাড়ের শিরা প্রচুর ভাবে ক্ষতি হয়। সবকিছু জেনেও দুটো পেটে খাওয়ার জন্য এই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছি। তাও আবার এই সব কাজ সব সময় হয়না।” এমত অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন ও তেমন কিছু সাহায্য করেনি। এই এলাকায় নারীরা যতক্ষণ উপার্জন করে ততক্ষণই সংসার চলে। এরই পাশাপাশী ওই এলাকায় একটি সংস্থার পক্ষ থেকে এলাকার মহিলাদের স্যানেটারী ন্যাপকিন দেওয়া হয় ও তার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করা হয়। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে এই এলাকাতেও আর পাঁচটা এলাকার মতই মিনাখাঁ যতীনন্দ্রনাথ বালিকা বিদ্যালয়ে নারী দিবস পালন করা হয়। নারীদের সচেতনতা নিয়ে বক্তব্য রাখেন বিডিও সৈঈদ আহমেদ।
এই ঘটনা সম্পর্কে ক্যাপ্টেন শর্বেশ গুপ্তা বলেন “এই একটি জায়েগাই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় সমাজে প্রতিটি সংসারে নারীদের অবদান ও তাই আর পাঁচজন পুরুষের পাশাপাশি এদেরকেও দেওয়া হোক যোগ্য সম্মান। আমার তরফ থেকে এই সব মা-বোনেদের আমার অন্তর থেকে সম্মান জানাই” ক্যাপ্টেন শর্বেশ গুপ্তার মত এমনটাই একই মত পোষণ করেন সমাজের আরও বিভিন্ন্য স্তরের মানুষজন। এই ক্ষেত্রে শুধু একটিই বাক্য সকলের মুখ থেকে বের হয়ে “তোমাদের শতকটি সেলাম”।।