মিজান রহমান, ঢাকাঃ দেশের শতকরা ৮৮ জন নারী রাস্তায় চলার পথে অপমানজনক মন্তব্যের মুখোমুখি হন। ৬ই মার্চ বুধবার ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে ‘শব্দে জব্দ নারী’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ‘সেইফ সিটিজ ফর উইমেন’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফলে এ তথ্য তুলে ধরেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কর্মকর্তা কাশফিয়া ফিরোজ।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটির গবেষণা অনুযায়ী, দেশের শতকরা ৮৮ জন নারী রাস্তায় চলার পথে অপমানজনক মন্তব্যের মুখোমুখি হন। ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশের সাতটি বিভাগে ৮০০ জন নারী ও ৪০০ জন পুরুষের উপর এই গবেষণাটি চালানো হয়। ফলাফলে বলা হয়েছে, ৮৬ শতাংশ নারী গাড়িচালক ও চালকের সহকারীর দ্বারা এবং শতকরা ৬৯ জন দোকানি ও বিক্রেতার মাধ্যমে যৌন নির্যাতনের শিকার হন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালমা আক্তার বলেন, “জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নারীকে শব্দজটে আটকানো হয়। গালাগালির ক্ষেত্রে অধিকাংশই নারীকেন্দ্রিক গালি।” গণমাধ্যম ও সাহিত্যে নারীকে দুর্বলভাবে উপস্থাপন করা হয় বলেও মনে করেন এই অধ্যাপক।
তিনি বলেন, “বিভিন্ন বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে নারীকে দুর্বল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। সাহিত্যের ক্ষেত্রেও নারীদেরই ত্যাগের মূর্তি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। ছেলেদের তুলনা করা হয় বাঘ, সিংহের সঙ্গে। আর নারীদের তুলনা করা হয় সাপ ও হরিণের সঙ্গে।”
ভাষাকে লিঙ্গ অনুযায়ী ব্যবহার করা হচ্ছে মন্তব্য করে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, “ঘরে-বাইরে নারীকে ভাষার মাধ্যমে হেয় করা হয়, যাতে সে মানসিক ও সামাজিকভাবে এগোতে না পারে।”
এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা বুঝে না বুঝে সবাই ভাষার মাধ্যমে নারীকে হেয় করি। এর পরিবর্তন আনতে নারীকেই প্রথমে নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে হবে।” শব্দ দিয়ে নারী-পুরুষে বিভেদ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন অধিকারকর্মী খুশি কবির।
তিনি বলেন, “সমাজে শব্দকে তৈরি করা হয় নারীর বিরুদ্ধে। শব্দকে লিঙ্গভিত্তিক করা হয়। শব্দকে নারী-পুরুষে বিভেদ করা যাবে না। কোনো শব্দের আলাদাভাবে মূল্যায়ন বন্ধ করতে হবে।”
নারীর প্রতি শব্দ প্রয়োগে বৈষম্যের সমালোচনা করে দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, “আমাদের সমাজ ব্যবস্থা অধিকাংশ নারীকে শব্দজটের মধ্যে আটকে রেখেছে। আমরা হয়ত অনেক কিছুই গুরুত্ব দিই না। “সংবাদ মাধ্যমেও নারীর প্রতি অসংবেদনশীল শব্দ ব্যবহার করা হয়। যদি এই বিষয়ক কোনো নীতিমালা থাকতো তাহলে বিষয়টি এতো হালকা হিসেবে দেখা হত না।”
“গণমাধ্যমে শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখন হয়ত কিছুটা পরিবর্তন আসছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার উল্টো চিত্র আমরা পাই। এই মাধ্যমে একজন নারীকে যেই পরিমাণ অবমাননাকর ভাষার মুখোমুখি হতে হয় তা বলার অযোগ্য।”
অনুষ্ঠানে নারীর প্রতি অপমানকর শব্দের প্রয়োগ বন্ধে শিশুদের ভাষার ইতিবাচক ব্যবহারের সচেতন করা, পাঠ্যপুস্তকে নারীকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিকীকরণের মধ্যে পরিবর্তন আনা, মানসিকতায় পরিবর্তন আনা, প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে ভাষার ব্যবহার বিষয়ক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি ও প্রয়োগ নিশ্চিত করা, নিয়মনীতি, আচার-আচরণ, সংস্কৃতি, পোশাক সহ সবকিছুতে পরিবর্তন এনে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়।