মিজান রহমান, ঢাকাঃ অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দেশের ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ১৮৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের খেলাপী ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এই ব্যাংকটির খেলাপী ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপী ঋণ থাকা ব্যাংক হলো জনতা ব্যাংক লিমিটেড। এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ২২ কোটি টাকা। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে লিখিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ তথ্য জানান। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের প্রশ্নের লিখিত জবাবে তিনি আরও জানান, বেসিক ব্যাংক লিমিটেডে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮ হাজার ৪৪১ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকে ৫ হাজার ৬৮৪ কোটি, রূপালী ব্যাংকে ৪ হাজার ৮৭০ কোটি এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭৭৯ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ কমানোর লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে বিদ্যমান আইন সমূহ পর্যালোচনা ও সংস্কারের নিমিত্তে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠিত হয়েছে। এছাড়া আইনি কাঠামোর আওতায় খেলাপি ঋণ আদায় প্রক্রিয়া গতিশীল করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের নিমিত্তে ইতোমধ্যে আইন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংকসমূহ এবং বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের মধ্যে সভা হয়েছে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
এই বিষয় তিনি আরও খোলসা করে বলে, ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট নীতিমালাগুলো পুনঃপর্যালোচনা করা হচ্ছে। নতুন নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে খেলাপী ঋণ অনেকাংশেই হ্রাস পাবে মর্মে আশা করা যায়। এছাড়া ঋণের বিপরীতে গৃহীত সহায়ক জামানত মূল্য নির্ধারণের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন এবং জামানত সংক্রান্ত তথ্য সিআইবি ডাটাবেইসে অন্তর্ভূক্তকরণের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশঃ সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, দেশে বর্তমানে (ডিসেম্বর, ২০১৮ ভিত্তিক) ঋণ খেলাপির সংখ্যা ২ লাখ ৬৬ হাজার ১১৮। তিনি ২০ শীর্ষ ঋণ খেলাপির নাম প্রকাশ করে জানান, মহামান্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকার কারণে উক্ত তালিকায় অন্তর্ভূক্তির যোগ্য কিছু সংখ্যক ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। দেশের শীর্ষস্থানীয় ২০ ঋণ খেলাপির মধ্যে রয়েছে-কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম লিমিটেড, সামানাজ সুপার ওয়েল লিমিটেড, বি আর শিপিং মিলস, সুপ্রভ ফুটওয়ার, রাইজিং স্ট্রিল, কম্পিউটার সোর্স লিমিটেড, বিনিটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, ম্যাক্স শিপিং মিলস, এস এ ওয়েল রিফাইনারী লিমিটেড, রুবিয়া ভেজিটেবল ওয়েল, আনোয়ারা শিপিং মিল, ক্রিসেন্ট লেদার মিলস, সুপ্রভ রোটর শিপিং, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ, চৌধুরী নিটওয়ারস, সিদ্দিক ট্রেডার্স, রুপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার, অ্যালপা কম্পোজিট টাওয়েলস এবং এম এম ভেজিটেবল ওয়েল প্রডাক্টস লিমিটেড।
বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকাঃ অপর এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বিগত অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ বাবদ এক হাজার ৪০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ ১১ হাজার ৬১০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। উক্ত পরিশোধিত অর্থের মধ্যে আসল বাবদ ৯ হাজার ১৪৩ কোটি এবং সুদ বাবদ ২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। তিনি জানান, বিগত অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরে পরিশোধিত ঋণ যথাক্রমে ২০১২-১৩ অর্থ-বছরের তুলনায় শতকরা ৩০ ভাগ, ২০১৩-১৪ অর্থ-বছরের তুলনায় ১৫ ভাগ, ২০১৪-১৫ অর্থ-বছরের তুলনায় ৩৬ ভাগ, ২০১৫-১৬ অর্থ-বছরের তুলনায় ৪১ ভাগ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় শতকরা ৩১ ভাগ বেশী।
বৈদেশিক ঋণ সাড়ে ৩৩ হাজার মিলিয়ন ডলারঃ সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলামের প্রশ্নের লিখিত জবাবে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল জানান, গত বছরের ৩০শে জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতির মোট পরিমাণ ৩৩ হাজার ৫১১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ২০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। এছাড়া এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক ৮ হাজার ৮৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, জাপান ৪ হাজার ৭১৫ মিলিয়ন, ইসলামী ব্যাংক ৫২১ মিলিয়ন, আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল ৪৫৩ মিলিয়ন, চীন এক হাজার ৯৯৭ মিলিয়ন, রাশিয়া এক হাজার ২০৫ মিলিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া ৪৩০ মিলিয়ন, ভারত ৩২৪ মিলিয়ন এবং অন্যান্য সংস্থার কাছে বৈদেশিক ঋণ স্থিতির পরিমাণ ৮২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।