রাজীব মুখার্জি, হাওড়াঃ মাঘ পূর্ণিমা মানে শুধুই সরস্বতী পুজো নয়। হাওড়া জেলার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক দেবীর পূজা। তিনি বসন্তের বিভিন্ন রোগ থেকে এলাকার মানুষকে শত শত বছর ধরে রক্ষা করে আসছেন। এমনটাই বিশ্বাস তাঁর অগণিত ভক্তের। তিনি হলেন হাওড়ার শালকিয়া অঞ্চলের ‘বড় মা’।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
উত্তর হাওড়ার এক ঘনজনবসতিপূর্ণ অঞ্চল। লৌকিক মতে এখানকার শীতলা দেবীরা সাত বোন। এঁদের মধ্যে হরগঞ্জ বাজার এলাকায় পাসে অরবিন্দ রোডের মন্দিরে রয়েছেন শীতলা দেবীর বড় বোন। যা ‘বড়মার মন্দির’ নামে খ্যাত। প্রতিদিন অগণিত ভক্ত সমাগম হয়। সাত বোনের মূর্তির কোনওটির কাঠ নির্মিত, কেউ হাঁড়িতে আঁকা। একমাত্র কয়েল বাগানের কয়েলেশ্বরী মা শীতলার মূর্তিটি পাথরের।
বড় মায়েরা আসলে শীতলা দেবী। তাঁরা গুটিদানা জনিত রোগ অর্থাৎ হাম,বসন্ত ইত্যাদি রোগের দেবী বলে বিশ্বাস। শীতলা দেবীর উল্লেখ রামায়ণ মহাভারতেও রয়েছে। কথিত আছে, বিরাট রাজার রাজ্যে একবার বসন্ত রোগ দেখা দিলে বিরাট রাজা শীতলা দেবীর পূজা দিয়ে রেহাই পান।
সেই সময় দেবী অনার্য সমাজের দেবী বলেই পরিচিত ছিলেন। পরে সকল সম্প্রদায়ের কাছেই তিনি বসন্ত রোগের দেবী রূপে পূজিতা হন। হিন্দুর কাছে তিনি ‘শীতলা’, মুসলিমদের কাছে ‘বুড়াবুবু’, বৌদ্ধের কাছে ‘হারিট’।
বসন্ত ঋতুতে পৃথিবী পৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে শুরু করে। ভক্তদের বিশ্বাস, এই সময় দেবী নিজে গঙ্গায় স্নান করে নিজে যেমন শীতল হন তেমনই পৃথিবীর মাটিকেও শীতল বা ঠাণ্ডা করেন। তাই শীতলা পূজার সঙ্গে বৎসরান্তে স্নান যাত্রার একটি পর্ব রয়েছে। এই স্নান যাত্রার প্রচলন সম্ভবত সালকিয়া অঞ্চলেই সিমাবদ্ধ।
সালকিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে এই স্নানযাত্রা এক অনন্য রূপ ধারন করে আসছে। মাঘী পূর্ণিমা তিথিতে উপেন্দ্র মিত্র লেনের শীতলা মা ছাড়া অন্যান্য বোনেরা বাদ্য, শং ও বিশাল শোভাযাত্রা সহ গঙ্গাস্নানে বের হন। সেই দিন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যে বিভিন্ন জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ভক্তদের সমাবেশ ঘটে। এই বছর ১৮ ফেব্রুয়ারী সোমবার শীতলা মায়ের স্নান যাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সালকিয়া অঞ্চলে মেলা বসে ও শীতলা মায়েদের স্নান শেষে এলাকায় ভোগ বিতরণ হয়। অনেকেই সম্পূর্ণ উপবাস করে মায়ের স্নান শেষে রাতে পুজো দিয়ে ফল মিষ্টি খান। উৎসবের দিনে উপবাসীরা নতুন জামা কাপড় আর গামছা পরে মায়েদের বাঁশের পালকি বা চতুর্দোলায় কাঁধ দেন,অনেকে গঙ্গাঘাট অর্থাৎ বাঁধাঘাট থেকে বড়মার মন্দির পর্যন্ত দণ্ডী কাটেন। পরের দিন ষোলো আনার পুজো দিয়ে ব্রত সম্পূর্ণ করেন।