মিজান রহমান, ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে অবশেষে কারাবন্দিদের খাবারের তালিকা পরিবর্তন হতে যাচ্ছে। এর ফলে প্রায় ২৭২ বছরের পুরাতন নিয়ম ভেঙে কারাবন্দিদের উন্নত মানের খাবার নিশ্চিত হতে যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত একটি চিঠি অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ে রয়েছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই বিষয়টি চূড়ান্ত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
সূত্র জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে ডায়েট স্কেল অনুযায়ী এতদিন করাবন্দিদের যে খাবার পরিবেশন করা হতো তা নিয়ে কারাবন্দিদের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ ছিল। তাদের খাবার তালিকা বিশেষ করে সকালে যে নাস্তা ছিল তা ছিল খুবই নিম্নমানের। নাস্তার তালিকায় ছিল আটার রুটি আর আখের গুড়। যা কারাবন্দিরা খেতে চাইতেন না। এ অবস্থায় রংপুর জেলা প্রশাসক ২০১৮ সালের ২৯শে মার্চ রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শনে গেলে কারাবন্দিরা তাদের দাবির কথা তুলে ধরেন। এসময় তারা সকালের নাস্তায় রুটি, হালুয়া, খিঁচুড়ি ও সবজি দেওয়ার দাবি জানায়। রংপুর জেলা প্রশাসক তার পাক্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি তাতে সম্মতি দেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেন। পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাটি কারা অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়।
এছাড়া আরও জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কারাবন্দিদের প্রতিদিনের আটার রুটি আর গুড়ের পরিবর্তে সপ্তাহে ২ দিন খিচুরি, একদিন হালুয়া রুটি ও চার দিন সবজি রুটি প্রদান এবং ‘৪৮৯১ খোরাকী ব্যয়’ খাতে ২০ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার ৭৭৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য কারা মহাপরিদর্শক ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ প্রস্তাব পাঠান। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য কারা অধিদপ্তরের ‘৪৮৯১ খোরাকী ব্যয়’ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দের জন্য ২০১৮ সালের ১৯শে জুন অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায়। কারা অধিদপ্তরের উক্ত খাতে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২২৪ কোটি ৪০ লাখ ৮ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় কারাগরের জন্য ৮৭ কোটি টাকা, জেলা কারাগারের জন্য ১৩৭ কোটি ৪০ লাখ ৮ হাজার টাকা রয়েছে।
সূত্র জানা যায়, বাজেট বরাদ্দের অতিরিক্ত ২০ কোটি ৪০ লাখ ৮০ হাজার ৭৭৫ টাকা বরাদ্দের জন্য অর্থমন্ত্রণালয়ের যে চিঠি দেওয়া হয়েছে তা পাওয়া গেলেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কারাবন্দিদের সকালের নাস্তার তালিকা পরিবর্তন করে নতুন তালিকা কার্যকর করা হবে।
এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যুগান্তরকারী এ ঘোষণা কার্যকর হলে কয়েকশ’ বছরের পুরাতন নিয়ম ভেঙে কারাবন্দিরা কারাগারে মানবিক সুবিধা পাবেন। এটি সময়ের দাবি ছিল। এর আগে কোনো সরকার বিষয়টিতে নজর দেয়নি। তিনি বলেন, কারাবন্দিরা অনেকেই নানা কারণে সকালের নাস্তায় রুটি-গুড় পছন্দ করেন না। এ নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। অনেক বন্দি পিসির মাধ্যমে বাড়ি থেকে টাকা এনে কারাগার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ক্যান্টিন থেকে উন্নত মানের নাস্তা খাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। কিন্তু এ সুযোগ সবার নাই আর সে সক্ষমতাও নাই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা কার্যকর হলেই সব কারাগারে একযোগে সকালের নাস্তার মেনু পরিবর্তন হবে। আশা করছি, বিষয়টি খুব শিগগিরই সুরাহা হবে।