শান্তনু বিশ্বাস, অশোকনগরঃ কোলের শিশু শৈশবে প্রবেশ করার আগেই পরিবার লক্ষ্য করে তাদের শারীরিক বিকাশ হলেও মানসিক দিক থেকে সেই শিশুই রয়ে গিয়েছে তারা। কারও বয়স ৭ আবার কারও বয়স ২৭। সবার আচরনে একটাই মিল তারা এখনও যেন দেড়-দু বছরের শিশু। নিজেদের একমাত্র সন্তানের এমন অবস্থায় হতাশাগ্রস্থ অনেকেই। তাদের শুশ্রসার চেষ্টায় অশোকনগরের রিসোর্স সেন্টারে নিয়ে আসে প্রত্যেকে। কারও বাড়ি চাঁদপাড়া, কেউ বা থাকেন বিড়া বা হাবড়া-অশোকনগর। রিসোর্স সেন্টারের একজন শিক্ষক আর মানসিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শিশুর সংখ্যা অনেকটাই বেশি । তাই অভিভাবকরা মনে করছেন ৫-৬জন পড়ুয়া পিছু দরকার একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকা। এখানে তা না পাওয়ায় কথা বলা তো দুরের কথা, অনেকে আকার ইঙ্গীতই সেভাবে বুঝতে পারছিল না। তাই অভিভাবকদের নিজেরাই যে যেমন পারে মাসিক ডোনেশন দিয়ে তৈরি করেন “অশোকনগর আশার আলো” সংস্থা। ২০১২সালের ৮ই আগস্ট এই সংস্থার পথচলা শুরু হয়।
বর্তমানে কল্যানগড়ে এক ব্যক্তির দান করা একটি জায়গায় চলছে এই সংস্থাটি। সপ্তাহে মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবার নিয়ম করে তিনদিন ক্লাস হয়। মানসিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করে এমন শিক্ষক-শিক্ষিকা তিনজন পড়ুয়াদের ক্লাস করাচ্ছেন। আশার আলোর সরকারি অনুমোদন থাকলেও সরকারি কোনও সাহায্য নেই নিজেরাই নিজেদের শিশুদের যত্ন নিচ্ছেন অভিভাবকেরা। আর তাতে ফলও মিলেছে হাতে নাতে।
কল্যানগড়ের বাসিন্দা তরুন মিত্র পেশায় প্রাণী চিকিৎসক। তাঁর একমাত্র মেয়ে বছর চোদ্দর কৃত্তিকা মিত্র , এখান থেকেই শিখেছে তার নাম ঠিকানা বলা, মানুষের সঙ্গে প্রাথমিক আলাপ চারিতার সাধারন নিয়ম। পেশায় বেসরকারি সংস্থার কর্মী রঞ্জন নাহার একমাত্র মেয়ে অনুস্কা নাহা, সেও সাধারন জ্ঞান নিচ্ছেন এখান থেকে। বছর চব্বিশের রাকেশ দেবনাথ বুঝত না আকার ইঙ্গীত না কাউকে কিছু বোঝাতে পারত। এখানে এসে এখন নিজের নাম পরিচয় বলতে পারছে সে।
এমনই ২০জন পড়ুয়া রয়েছে আশার আলোর আঙিনায়। আজ তাদের নিয়েই সম্প্রীতি অশোকনগরের একটি বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। ছিল বল ছোড়া , বালতিতে বল ছোড়া, হাটা, মালা গাথা এমনই সব খেলা। এক একজন প্রতিযোগী হাসিমুখে শুধু ভালো খেললই না, বরং আর পাঁচটা শিশুদের মত হাতছুড়ে উচ্ছাসও প্রকাশ করল। খেলায় প্রত্যেকেই দেওয়া হয় পিঠ ব্যাগ। এছাড়া প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় যারা হয়েছে তাদের জন্য পেন দেওয়া হয়।