হাওড়াবাসীর নানা রঙের দিনগুলি ভাগ-৫
রোটারিয়ান স্বপন কুমার মুখোপাধ্যায়
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
সেইসময় বিয়েবাড়ি ভাড়া করার বা ক্যাটারার দিয়ে আমন্ত্রিতদের আপ্যায়ন করা হত না। বেশিরভাগ পরিবার ছিল একান্নবর্তী। আত্মীয় -পরিজনরা বিবাহের কয়েকদিন আগেই বিয়েবাড়িতে পৌঁছে যেতেন। বিয়ের আগের দিন বাড়িতে হালুইকররা এসে ভিয়েন বসিয়ে মিষ্টি বানাতো। মিষ্টির মধ্যে দরবেশ, পান্তয়া অথবা রসগোল্লা আর সন্দেশ তৈরি হত। দই আসতো মিষ্টির দোকান থেকে, বাড়ির ছেলেরা আগের দিন কাঁচাবাজার করে আনতো। বাড়ির মেয়েরা প্রয়োজন ভিত্তিক আনাজ কাটতো, পান সাজতো, হালইকরদের জোগাড়েরা বাটনা বাটতো আর জল সরবরাহ করত। ডেকরেটর এসে প্যান্ডেল বাঁধতো আর বাসনপত্র, মাটিতে বসার আসন সরবরাহ করত। বাজার থেকে মাছওয়ালা বিশাল মাপের কাতলা মাছ এনে সামনে ওজন করে তারপর বড় বড় সাইজ করে মাছ কেটে দিত। বাড়ির ছেলেরা পরিবেশন করে খাওয়াতো। পিতামহ বিবাহের আগের দিন ভোর রাত্রে দেহত্যাগ করার ফলে বিবাহ বন্ধ হয়ে গেল। সকালে মাছওয়ালা এসে হাজির কিন্তু মাছ তো নেওয়া যাবে না। অনেক কথাবার্তার পর মাছের অর্ধেক দাম সহ সে মাছ ফেরত নিয়ে গেল। আত্মীয়স্বজনরা কয়েকদিন বালির বাড়িতে রয়ে গেল। ফলে তারাই আনাজ আর মিষ্টিগুলো উদ্ধার করল। এক গুরুজনকে সঙ্গে নিয়ে পিতৃদেব আমাকে পাঠালেন বরের বাড়ি শেওড়াফুলিতে পিতামহের হঠাৎ মৃত্যুর খবর দিতে। যাইহোক, ওই বছরেই সপিণ্ডকরন করে বড়দিদির ওই ১৯৫৫ সালেই পূর্ব নির্ধারিত পাত্রের সঙ্গে শুভবিবাহ সম্পাদন করা হয়। ১৯৫৬ সালে আমার পিতামহী নিভাননী দেবী পরলোক গমন করেন। আমি বি.এসসি পাশ করি ১৯৫৬ সালে। ওই সালেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্মলকুমার সিদ্ধান্তর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপিত হয় এবং ঐতিহাসিক শতবর্ষের ‘সেনেট হল’-এর অবলুপ্তি ঘটিয়ে বর্তমান বাড়িটি তৈরি হয়। বঙ্গবাসী কলেজে পড়ার সময়ে ওখানকার ব্যায়ামাগারের ভারপ্রাপ্ত ছিলেন সুবিখ্যাত ব্যায়ামবীর আয়রন ম্যান নীলমণি দাস। ওনার কাছে ব্যায়াম করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য ১৯৫৬ সালে পিতামহীর মৃত্যুর পর আমার পিতৃদেব নানা ব্যাধির কবলে পড়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন এবং ১৯৫৭ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি ইহলোক পরিত্যাগ করেন। তখন আমার বয়স ২২ বছর হবে। তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় হাওড়ার বাঁশতলা শ্মশান ঘাটে।
ক্রমশ…..