মিজান রহমান, ঢাকাঃ জয়বাংলা শ্লোগান আর ঢাক-ঢোলের বাদ্যে শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়, রাজধানী ঢাকার সব পথেই ছিল ১৯শে জানুয়ারি শনিবার উৎসবের আমেজ। একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় উদযাপনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় এ উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়। শনিবার বিকেলের এই জনসভায় যোগ দিতে সকাল থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতে শুরু করেন দলটির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা। অনুষ্ঠানের অনেক আগেই কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল। রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলো থেকেও আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। লাল-সবুজ টি-শার্ট ও মাথায় ক্যাপ, সামনে বড় ব্যানার হাতে নিয়ে কেউ পায়ে হেঁটে বা পিকআপভ্যান, ট্রাক ও বাসে চড়ে জয়বাংলা স্লোগানে অলি থেকে গলিপথ পাড়ি দিতে থাকে মানুষ আর মানুষ। আর সবার গন্তব্যস্থল ছিল একটিই- ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। ভিতরে যারা ছিলেন বিশেষ করে সঙ্গীত শিল্পীরা, সকালে অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দিয়েই গানে গানে আর স্লোগানে স্লোগানে রাঙিয়ে তোলেন মূলপর্ব বক্তৃতা অনুষ্ঠান শুরুর আগে পর্যন্ত।
শাহবাগ থেকে কাঁটাবন, এদিকে মৎস্যভবনের আগ পর্যন্ত ধ্বনিত হতে থাকে সব সূরের মূর্ছনা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী রফিকুল আলম, ফকির আলমগীর, জানে আলম, সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম, পথিক নবী, আঁখি আলমগীর, সালমা সহ অন্যান্য জনপ্রিয় সব সঙ্গীত শিল্পী এবং ব্যান্ড দল জলের গান তাদের পরিবেশনা দিয়ে মাতিয়ে রাখেন অনুষ্ঠানস্থলে আসা লোকজনদের। তারা গানে গানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা এবং গত এক দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন। এই গান শেষ হওয়ার পর শুরু হয় জনসভা। অনুষ্ঠানের মধ্যমণি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেলা ৩টার পরপরই অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন।এ সময় মুহুর্মুহু স্লোগানে আর জয়বাংলা ধ্বনিতে তাকে স্বাগত জানান নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আসন গ্রহণের পরেই সরোয়ার এবং জিএম আশরাফের গাওয়া এবারের নির্বাচনী থিম সংগীত জয়বাংলা, জিতবে আবার নৌকা শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন এবং জয় বাংলা জিতলো আমার নৌকা গানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো অনুষ্ঠানস্থল। উদ্যানের ভেতরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয় বিশাল মঞ্চ। মূল মঞ্চটি সাজানো হয় দলের এবারের ইশতেহারের মলাটের রঙে। বৈঠাসহ ছোট-বড় বেশ কয়েকটি নৌকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ফেস্টুনে সাজানো হয় সমাবেশ মাঠ। একই দৃশ্য ছিল উদ্যানের বাইরে বিভিন্ন সড়কে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে লেখা রং-বেরংয়ের ব্যানার-ফেস্টুন মূল অনুষ্ঠানে যোগ করে ভিন্নমাত্রা।
গত ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৫৭টি আসনে জয় নিয়ে টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। ভোটের ১৯ দিন পর আজ বিজয় উৎসব পালন করে আওয়ামী লীগ। মঞ্চে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ফারুক খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, দীপু মনি প্রমুখ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সহ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের নেতা ও মন্ত্রিপরিষদের বেশিরভাগ সদস্য এ সময় মঞ্চে ছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মূল অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন দলটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল এমপি।