হাওড়াবাসীর নানা রঙের দিনগুলি ভাগ-৩
রোটারিয়ান স্বপন কুমার মুখোপাধ্যায়
Thank you for reading this post, don't forget to subscribe!
১৯৪৮ সালে আমার উপনয়নের পরে ন’ বোন ঝরনা মাত্র নয় বছর বয়সে বালির বাড়িতে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পরলোকে গমন করে । ১৯৪৮ সালে হাওড়া ময়দানে এক বিশাল জনসভায় প্রথম পণ্ডিত জহরলাল নেহেরু ও ডক্টর রামমনোহর লোহিয়াকে দেখি । যথাসম্ভব ওই বছরেই হাওড়া ময়দানে নেতাজির আজাদ হিন্দ বাহিনীর কর্নেল শাহনওয়াজ খানকে নাগরিক সম্বর্ধনা দেওয়া হয় । পরিবর্তীকালে সালটা ঠিক মনে নেই, স্বাধীন ভারতে পশ্চিম বাংলার প্রথম রাজ্যপাল ছিলেন মাননীয় রাজাগোপালাচারি । উনি একবার হাওড়া গার্লস স্কুলের পুরস্কার বিতরণী সভায় প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন । আমার পিতৃদেব আমাদের পরিবারের সকলকে নিয়ে ওই অনুষ্ঠানে যান । ১৯৪৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন থামওয়ালা সেনেট হলে জীবনে প্রথম প্রবেশ করি এবং সেখানে স্যার সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণের ভাষণ শোনার সৌভাগ্য হয় যদিও তাঁর ইংরাজি ভাষণের মর্মার্থ আমার বোধগম্য হয়নি। ওই সালেই হাওড়া মিউনিসিপ্যালিটির প্রধান বাড়ির দোতলায় একটা বড় হল ছিল । আমরা বলতাম ‘হাওড়া টাউন হল’। ওই হলে প্রথম নেতাজিচন্দ্রের মেজদাদা প্রখ্যাত ব্যারিস্টার , দেশনেতা, ভারতের তৎকালীন আইনমন্ত্রী শ্রী শরৎচন্দ্র বসুর বাংলা ভাষায় বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়ে যাই । ওই সময়ে জাতীয় কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি পুরুষোত্তমদাস ট্যান্ডনের হিন্দি ভাষণ ওই টাউন হলেই শুনি। যতদূর মনে পড়ে ১৯৪৯ অথবা ১৯৫০ সালে ভারতীয় রেলের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে এক বিশাল ও অনুপম প্রধর্শনীর আয়োজন করা হয়-অত মনোমুগ্ধকর প্রদর্শনী মনে হয় আজও কলকাতায় আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। অবশ্য এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। ১৯৫০ সালে কলেজ স্ট্রিটস্থ YMCA-এর মেম্বার হয়ে বিশ্বশ্রী মনোতোষ রায়ের তত্ত্বাবধানে ওখানকার ব্যায়ামাগারে শরীর চর্চা করতাম। আর ওইখানেই প্রতি বুধবার ‘বিতর্ক প্রতিযোগিতা’য় অংশগ্রহণ করতাম। আর যাদের সঙ্গে ‘বিতর্ক’ করতাম তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এন বিশ্বনাথন, অধ্যাপক বুদ্ধ বসু, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা পরিমল মুখার্জি, সুধাংশু দাশগুপ্ত, লেডি রানু মুখার্জির কন্যা কেয়া মুখার্জি, সেন্টপলস কলেজের ছাত্র ই. এস. ব্ল্যানচার্ড, ইন্দিরা দেবী (বেতারকেন্দ্রের শিশুমহল পরিচালিকা), অধ্যাপক লেসলি বিশ্বাস, অধ্যাপক জে. এস. টারনার ইত্যাদি। ১৯৫০ সালে যতদূর মনে পড়ে, আমার জ্যাঠামশাই ডা. সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তখন হাওড়া জেলার সিভিল সার্জেন ছিলেন এবং কর্মরত অবস্থায় হঠাৎ সেরিব্রাল অ্যাটাকে তাঁর মৃত্যু হয়। সেইসময় তিনি ও তাঁর পরিবারবর্গ হাওড়া জেলখানার পাশেই বিশাল সরকারি প্রাসাদে বসবাস করতেন। তাঁর শবদাহ হয় হাওড়ার বাঁশতলা শ্মশানঘাটে।
ক্রমশ….