রাজীব মুখার্জী, রহড়া, উত্তর ২৪ পরগনাঃ “ঈশ্বরের তৈরি এই নশ্বর শরীর পঞ্চভূতে বিলীন হয়ে যায়। এটাই এই জগতের সত্যি”। এই কথাটি আমাদের দেশের সমস্ত অধ্যাত্বিকতার অন্তর সার। মানুষও ঈশ্বর হওয়ার বাসনা রাখে। বিগত ১০,০০০ বছরের মানব প্রযুক্তির উত্তরণ আজকে তাকে সেই স্থানে এনে রেখেছে যে তার তৈরি বস্তু এখন পঞ্চভূতে বিলীন হচ্ছে না। ভাবছেন কি সেটা? আর কিছুই নয়, এটা মানুষের তৈরি প্লাস্টিক দ্রব্য। এই বস্তুটি অবলীলাক্রমে এক হাজার অব্দি অবিকৃত অবস্থায় থেকে যায় প্রকৃতিতে, যা একটি অশনিসংকেত আমাদের বিশ্বের কাছে।
এই সমস্যার মোকাবিলাতে গোটা পৃথিবীতে পরিবেশবিদ থেকে শুরু করে বিজ্ঞানীরা যখন কপালে চিন্তার ভাজ ফেলছেন তখন সেখানেই এলো স্বস্তির নিঃস্বাস। এই ভয়াবহ ক্ষতির হাত থেকে পরিবেশ কে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন উত্তর ২৪ পরগণা খড়দহের এক বাঙালি বিজ্ঞানী সমাধান নিয়ে। তাঁর হাত ধরেই ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের মাধ্যমে পঞ্চভূতে বিলীন হচ্ছে প্লাস্টিকজাত দ্রব্য। না এটা কোনো গল্প কথা নয়। এটা বাস্তব। যেকোনো প্লাস্টিকজাত দ্রব্যকে ধ্বংস করার ফর্মুলা এবং ১৫টি প্রজাতির নতুন ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক আবিষ্কার করেছেন উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহের এই বাঙালি বিজ্ঞানী। যার নাম অধ্যাপক ডা: স্বপন কুমার ঘোষ।
স্বপন বাবু এখন উত্তর ২৪ পরগনার খড়দার রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন শতবার্ষিকী কলেজের বোটানির অধ্যাপক এবং ক্যান্সার গবেষক হিসাবে কাজ করছেন। এরই মধ্যে ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করার নতুন প্রতিষেধক আবিষ্কারের চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন এই বাঙালি গবেষক। রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী কলেজের ল্যাবরেটরিতেই গবেষনা করে প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ধ্বংসকারী ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক আবিষ্কার করেছেন এই বাঙালি বিজ্ঞানী স্বপন কুমার ঘোষ।
স্বপন বাবু দাবি করেছেন, ৫০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিকজাত যেসব দ্রব্য প্রকৃত অর্থে পরিবেশকে দূষিত করে বা যা মাটিতে মেশে না, সেই সব প্লাস্টিকজাত দ্রব্যকে মাত্র ১৫০ দিনে তার তৈরী ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ধ্বংস করে পঞ্চভূতে বিলীন করে দুটি পারেন তিনি। ২০১২ সাল থেকে ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক নিয়ে গবেষনা করছেন উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহের এই বাঙালি বিজ্ঞানী। ইতিমধ্যেই তার এই আবিষ্কার স্বত্ব কিনে নেওয়ার জন্য এক ফরাসি ব্যবসায়িক সংস্থার প্রতিনিধিরা যোগাযোগও করেছিলেন তার সঙ্গে কিন্তু তিনি তাঁদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে চাননি। বরং এই বাঙালি বিজ্ঞানী বাংলার জন্যই, দেশের জন্য কাজ করতে চান।
[espro-slider id=15949]
স্বপন বাবু আমাদের বললেন, “আমার আবিষ্কার প্রকৃত একটি পরিবেশ বান্ধব পন্থা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহারকারী ক্যারিব্যাগ থেকে জলের বোতল, এমনকি ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ বা স্যালাইনের বোতল সবই ধ্বংস করতে সক্ষম আমার আবিষ্কৃত এই ব্যাকটেরিয়া। আমার ব্যাকটেরিয়া মাত্র ১৫০ দিনেই প্লাস্টিকজাত দ্রব্যকে পঞ্চভূতে বিলীন করে দেবে আর তাঁর জন্য এক হাজার বছর অপেক্ষা করতে হবে না। আমাদের রাজ্যের পৌরসভাগুলি পরীক্ষামূলকভাবে আমার আবিষ্কৃত ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ব্যাবহার করলে সুফল পাবে। যা সমাজের তথা পরিবেশের পক্ষে উপকারী হবে।” তাঁর চোখে ফুটে উঠছিলো এক আত্মবিশ্বাস ও আত্ম তৃপ্তি, যেটা গোটা বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীকে পেছনে ফেলে দিয়ে নিজের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার সফল ফলাফলের জয় ঘোষণা করছে।
শিক্ষার্থী হিসাবে আমেরিকা থেকে পাশ করা স্বপন বাবু সব সময়ই চান বাংলার জন্যই কাজ করতে, তাঁর বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। স্বপন বাবুর যুগান্তকারী প্লাস্টিকজাত সামগ্রী নিশ্চিহ্ন করার এই আবিষ্কার নিঃসন্দেহে গোটা বিশ্বের কাছে একটি দৃষ্টান্ত। প্রসঙ্গত সারা বিশ্বে যখন বিজ্ঞানীরা পরিসংখ্যান দিচ্ছেন যে মোট উৎপন্ন প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের মাত্র ৯ শতাংশ পুনঃ ব্যবহার যোগ্য, ১২ শতাংশ নষ্ট করে দেওয়া সম্ভব এবং ৭৯ শতাংশ অবিকৃত অবস্থায় পড়ে থাকে সেখানে এক অনামী বাঙালি বিজ্ঞানীর এই দাবি নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের দাবি রাখে। যেখানে গবেষকরা জানাচ্ছেন ৮.৩ মিলিৰ টন প্লাস্টিকজাত দ্রব্য তৈরি হচ্ছে ১৯৫০ সালের পর এবং এই মুহূর্তে বছরে আমরা ৩.৪০ মিলিয়ন যা এই মুহূর্তে বজ্য হিসাবে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে।
এছাড়া তিনি আরও বলেন, “এই পরিস্থিতিতে দেশের সরকার যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমার তৈরি এই প্রক্রিয়া দেশের প্লাস্টিকজাত সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। আগামী প্রজন্মকে আমরা দিয়ে যেতে পারবো এক দূষণহীন পরিবেশ তাদের বেঁচে থাকার জন্য। ” তাঁর চোখের তারায় সেই স্বপ্ন ভেসে উঠছিলো পরিষ্কার ভাবেই আর তাঁর আত্মবিশ্বাস নতুন এক প্রকৃতি দিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর।