অর্ণব মৈত্র, ভাঙড়ঃ বাংলায় ধর্ম নিরপেক্ষতা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও দৃঢ় ভাবে ধরে রেখেছে তার নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাম্প্রদায়িক মোদি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বলে আজ সেন্ট্রাল এজেন্সি লেলিয়ে দিয়ে তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় দেখানো হচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। মমতাকে মাথা নিচু করানো যায় না, তাঁকে মেরে ফেলে দেওয়া যায়। এক মাত্র উপরওয়ালার সামনে ছাড়া মাথা নিচু করিনা। মোদির সামনে আমাদের জীবন থাকতে মাথা নিচু করব না। ২৫শে নভেম্বর ভাঙড়ে তৃণমূলের এক সমাবেশে এমনটাই জানালেন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম।
মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর ডাকা ব্রিগেড সমাবেশকে সামনে রেখে এদিন বিকালে ভাঙড়ের ঘটকপুরে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, জেলা তৃণমূল কংগ্রেস এর সভাপতি তথা রাজ্য সভার সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী, রাজ্য সভার আর এক সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান সহ উপস্থিত ছিলেন, ভাঙড়ের প্রাপ্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম, ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা কাইজার আহমেদ, অহিদুল ইসলাম, আব্দুর রহিম, বাহারুল ইসলাম সহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। বাসন্তী রাজ্য সড়কের পাশে ঘটকপুকুরে তৃণমূলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে রিতিমত সেজে উঠেছিল ভাঙড়। কাটআউট, ফ্লাগ, ফেস্টুনে মুড়ে ফেলা হয় সভাস্থল। একেবারে সাংস্কৃতিক আঙ্গিকে তৃণমূলের সমাবেশ মন কাড়ে জনতার। তার উপর কলকাতার ভাবী মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিম এর আগমনের খবর চাউর হতেই উৎসুক জনতা ভিড় জমান সভাস্থলে।
এদিন কাটফাটা দুপুর আড়াইটা নাগাদ সভা শুরু হতেই একে একে তৃণমূল নেতৃত্ব সভাস্থলে উপস্থিত হন। চলে বক্তব্য পর্ব, তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলাম, অহিদুল ইসলাম আব্দুর রহিমারা ঐকবদ্ধ হয়ে লড়াই সংগ্রামের ডাক দিয়ে জনতাকে মুগ্ধ করেন। এরই মাঝে রাজ্য সভার সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে জ্বালাময়ি বক্তব্য দিয়ে জনতার হৃদয় জিতে নেন। এরপর ঠিক দুপর সাড়ে ৩ টে নাগাদ ভিড় ঠেলে সভাস্থলে উপস্থিত হন ফিরহাদ হাকিম। চলে সংবর্ধনা পর্ব। এদিন ফিরহাদ হাকিম বক্তব্য দিতে গিয়ে সভাস্থলে উপচে পড়া ভিড় দেখে আপ্লুত হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই চালিয়ে খেলতে শুরু করেন। তিনি স্পষ্টতই বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলার রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। মমতা কে মাথা নিচু করানো যাবে না। তাকে মেরে ফেলে দেওয়া যায়। আমরা এক মাত্র উপরওয়ালার সামনে ছাড়া আর কারো কাছে মাথা নিচু করিনা। মোদির সামনে আমাদের জীবন থাকতে মাথা নিচু করব না ।”
এদিন ফিরহাদ বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলে আরো বলেন, “যখন বাংলা শান্তি পূর্ণ আছে, যে বাংলায় ডাঙ্গা হয় না সেই বাংলায় উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা চলছে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। এ বাংলা শান্তি সম্প্রীতির বাংলা।”
ফিরহাদ আরো বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদি সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বলে আজ সেন্ট্রাল এজেন্সি লেলিয়ে দিয়ে তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় দেখানোর চেষ্টা চলছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভয় দেখিয়ে কোন লাভ হবে না। মমতা কারো কাছে মাথা নত করে না।”
এদিন তিনি মুকুল-এর নাম না করে বলেন, “একটা গদ্দার আছে ভয় পেয়ে পাল্টি খেয়ে চলে গেছে। এদিন তিনি বিজেপির রথ যাত্রা কে কটাক্ষ করে বলেন, বিজিপির ফুর্তি করার রথ যাত্রা যা ঢং এর রথ যাত্রা, এই রথ কে বাংলার মানুষ পাত্তা দেয় না। একদিন এই রথ শব যাত্রায় পরিনত হবে”।
এর পাশাপাশি সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী বলেন, “বাংলার দায়িত্ব আমরা বুঝে নেব, ভারতবর্ষের দায়িত্ব আপনি নিন দিদি। বিজেপি জাতের নামে বজ্জাতি করছে, বিজেপি একটা বজ্জাদ দল। ওদের এবার দেশ ছাড়া করতে হবে।”
সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান বলেন, “এই সভা শান্তি ও সম্প্রীতির সভা আর আজ অযোধ্যায় লক্ষ লক্ষ লোক জড়ো হয়েছে, তারা সুপ্রিম কোর্টের রায় কে না মেনে বলছে আমরা এখানে রাম মন্দির বানাবো। সুপ্রিম কোর্ট যদি বলে রাম মন্দির হবে তো হবে না হলে হবে না। কিন্তু তারা ওখানে মানুষের মধ্যে যে ভৃতীর আবহ তৈরি করছে তা অশনী সংকেত।”
আহমেদ সাহেব আরো বলেন, “আমরা আমাদের দেশকে কিছু আগাছার হাতে ছেড়ে দেব না। আজ মমতা বাংলা, দার্জিলিং ও জঙ্গল মহলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছে এই বাংলার শান্তিকে ব্যাহত করার জন্য রথ যাত্রার কথা বলা হচ্ছে। রথ যাত্রা করো আর যাই করো বাংলার হিন্দু মুসলিম কখনো সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে যাবে না। ওদের হাতে একটাই ইসু আছে সাম্প্রদায়িকতা, ওরা ডাঙ্গা বাঁধতে চায়। আমরা এক সঙ্গে হিন্দু মুসলিম ব্রিগেড ভরাব”।
এদিন কাইজার আহমেদ বলেন, “আজকের সভায় মানুষ যেভাবে মিছিল করে পায়ে হেঁটে উপস্থিত হয়েছে তাতে এই সভা স্বার্থক রুপ নিয়েছে। ভাঙড় থেকে লক্ষাধিক মানুষ নিয়ে আমরাই ব্রিগেড ভরিয়ে দেব”।