Tuesday, March 28, 2023
spot_img

বাংলাদেশের যমুনার দুর্গম চরাঞ্চলবাসীর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার

 

মিজান রহমান, ঢাকাঃ বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের সদর ও কাজিপুর উপজেলার যমুনা নদীর পূর্বপাড় দুর্গম চরাঞ্চলের শত শত নারী–পুরুষ বিভিন্ন কাজে ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার নদী পাড়ি দিয়ে জেলা-উপজেলা শহরে আসেন প্রতিদিন। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলা ও উপজেলা শহরের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় ধূ ধূ বালুর চর পেরিয়ে নৌকাযোগে এই যমুনা নদী পাড়ি দেন। এ পারাপারে যাত্রীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছাড়াই নৌ-মালিকরা তাদের পারাপার করছেন যুগ যুগ ধরে।

জানা গেছে, নদীর পূর্বপাড় চরাঞ্চলে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এ ২টি উপজেলার কাওয়াখোলা, মেছড়া, নাটুয়ারপাড়া, খাসরাজবাড়ী, মনসুরনগর, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, মাইজবাড়ী, শুভগাছা ইউনিয়নের ২ শতাধিক গ্রাম পুরোপুরি যমুনা নদীবেষ্টিত। এসব এলাকার মানুষের দৈনন্দিন কাজ সহ উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে হয় জেলা ও উপজেলা সদরে। জেলা ও উপজেলা সদরে যোগাযোগের একমাত্র বাহন হচ্ছে তাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এ কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারী-পুরুষ, শিশু, এমনকি গবাদিপশু সহ নানা পণ্যসামগ্রী ইঞ্জিনচালিত নৌকায় পারাপার করতে হয়। কিন্তু এসব নৌকায় নেই কোনো বসার ব্যবস্থা এবং নেই ছাউনি কিংবা লাইফ জ্যাকেট। বৃষ্টি, ঝড়-তুফানের মধ্যেও প্রতিদিনই দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে তাদের নিজ গন্তব্যে পৌঁছান বলে অভিযোগ করেন।

এ দুটি চরাঞ্চলের অনেক ব্যবসায়ীই জানান, বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতিদিন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চরাঞ্চলের মানুষকে বাধ্য হয়ে এসব নৌযানে চলাচল করতে হয়। ব্যবসায়ী ছাড়াও প্রতিদিন সাধারণ মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও ঝুঁকি নিয়ে এভাবে প্রতিনিয়ত নদী পার হন। প্রতিদিন শত শত যাত্রী যাতায়াত করে নাটুয়ারপাড়া, মেঘাই, কায়াকোলার ঘাট, মেছড়ার ঘাট, মতিন সাহেবের ঘাট, গোইটার চর নৌঘাট দিয়ে। এসব ঘাটের শতাধিক নৌকা মাঝি পরাপারে জনপ্রতি ভাড়া নেন ৩০/৪০ টাকা। সেইসাথে ১০ কেজির বেশি মালামাল নিলেই তার জন্য আলাদা ভাড়া দিতে হয়।

এখাবেই প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যমুনা পার হয়ে চরাঞ্চলের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে হয়। ভুক্তভোগী অনেক শিক্ষক বলেন, প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষক নিয়মিত নৌকাঘাট দিয়ে চলাচল করছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু উভয়পাড়ে নৌকাঘাটে ন্যূনতম যাত্রীসেবা নেই। নৌকার নির্ধারিত যাত্রী না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দেখা দিলেও অনেক সময় যাত্রী ও মলামালসহ নৌকাগুলো ডুবে গিয়ে অনেক যাত্রীর প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। অনেকে আবার ব্যবসায়ী মালামাল হারিয়ে পথে বসেছেন। বিশেষ করে কাজিপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল মানুষের যমুনা নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার মোহাম্মাদ রায়হান ও কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহিদ হাসান সিদ্দিকী বলেন, এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে চরাঞ্চল মানুষের যোগাযোগ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,749FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles