রাজীব মুখার্জী, হাওড়াঃ প্রায় আট মাস ধরেই চলছে সম্পর্ক, রাজনীতি, দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যের মাঝে ঘোষিত যুদ্ধ তিনপক্ষের। তারই জের দেখা গেলো ২০শে নভেম্বর মঙ্গলবার বিধানসভায়। বিধানসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিতে ওই দিন সকালেই বিধানসভায় হাজির হন আবাসন দফতরের দায়িত্ব প্রাপ্ত মন্ত্রী শোভন দেব।
ইতিমধ্যে বিধানসভায় পৌঁছে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও। প্রশ্নোত্তর পর্বের আগে বিধানসভা স্পিকারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মুখোমুখি হন আবাসনমন্ত্রী। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কাছে জানতে চান যে তিনি উত্তর দেওয়ার নথি পত্র ঠিকঠাক তৈরি করে এসেছেন কি না। সাধারণ দুই একটি কথাবার্তার পরে দুইজনেই অধিবেশনকক্ষে চলে যান। সরকারি আবাসন প্রকল্পের কাজ নিয়ে নির্দিষ্ট প্রশ্ন করেন উপস্থিত বাম বিধায়ক সমর হাজরা। তারই জবাব দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সামগ্রিক পরিকল্পনা রূপায়ণে রাজ্যে ২৫ লক্ষ বাড়ি অনুমোদন করে কাজ চলছে।” তার এই জবাবের পরই কয়েক সারি পিছনে বসে থাকা মুখ্যমন্ত্রী কিছুটা বিরক্তি দেখিয়েই উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, “এই তথ্য সঠিক নয়। ২৫ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হয়ে গিয়েছে। সরকার অনুমোদন করেছে ৪০ লক্ষ বাড়ি।”
এই ঘটনার সময়ই শাসক শিবিরের মধ্যেই চূড়ান্ত অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, প্রথমার্ধের অধিবেশন শেষ হলে শোভন কিছু বলতে মুখ্যমন্ত্রীর আসনের কাছে যান কিন্তু তাঁকে হাত দেখিয়ে উঠে যান মমতা ব্যানার্জী। তারপর বেরনোর আগে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সামান্য কিছু কথা হয় শোভন দেবের। এরপর দুপুরে অধিবেশন শেষে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে তাঁর কাজ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন মমতা ব্যানার্জী। অভিযোগ করেন যে তিনি নিজের কাজ ফেলে শাড়ি-চুড়ির দোকানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। পরোক্ষ মমতা ইঙ্গিত করেন যে তাঁর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে, তা বুঝতে পেরে এদিন কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করেছেন শোভন।
তৃণমূল উচ্চ নেতৃত্ব সূত্রে খবর, এরপরেই মমতা তাঁকে দল বা বৈশাখীর মধ্যে কোনও এক দিক বেছে নিতে বলেন। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ সচিব গৌতম সান্যালের হাতে গিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসেন শোভন। ঘটনার পরে শোভন তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে বলেন, “এ ভাবে অপমানিত হয়ে আর কাজ করা যাচ্ছিল না। আমার ব্যক্তিগত জীবনে নিয়ে নাক গলানোর অধিকার কারও নেই। অনধিকার চর্চা চলছে। এটা বন্ধ হওয়ার দরকার।” গতকালের আগেও মেয়রের বান্ধবী বৈশাখীকে নিয়ে শোভনকে অনেকবারই প্রকাশ্যে সতর্ক করেছেন মমতা। বিভিন্ন সময়ে ধমক ও দিয়েছেন তিনি। তবে, এভাবে শোভনকে কখনও তেমন ভাবে উষ্মা প্রকাশ করতে দেখা যায়নি বলেই তৃণমূল সূত্রে খবর।
‘দিদি’র ধমকের প্রেক্ষিতে “ভাই কানন ” কখনও কখনও নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন কিন্তু, এ দিন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে শোভনের কথায় কিছুটা উষ্মা দেখে রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করেছেন দলনেত্রী। “আমার মাথা গরম করে দিস না,” এই মন্তব্য করতেও শোনা যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গতকাল। ইঙ্গিত কার দিকে তা বুঝতে পেরে এর পরেই বিরক্তি প্রকাশ করেন শোভন। মেয়রের ঘনিষ্ঠ ওই সূত্র জানিয়েছে, শোভন দলনেত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি বৈশাখীকে শাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলছেন কি না?একই সঙ্গে দলনেত্রীকে তিনি বলেন, তাঁর কাছ থেকে শাড়ি নেওয়ার প্রয়োজন বৈশাখীর পড়ে না। দলনেত্রী তখন শোভনকে জানান, তাঁর কাছে সব খবর আছে এবং ছবিও আছে।
শোভনের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে দাবি, মেয়র তখন ক্ষোভের সঙ্গে দলনেত্রীকে জানান, ” আমি বুঝতে পারছি দলে আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তাই আমার উপর নজরদারিও চলছে। কোনও নজরদারির মধ্যে আমি থাকতে চাই না” সরাসরি মমতাকে মেয়র জানান, আরো বলেন “প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে মনে করলে বা তাঁকে না চাইলে সেটা আপনি বলে দিন। তাহলে আমি সব পদ ছেড়ে দেবো”। এরপরেই শোভন বিধানসভা ছেড়ে পুরসভায় চলে যান। তার আগেই যদিও স্পিকারের ঘর থেকে বিরক্তি প্রকাশ করতে করতে বেরিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে
পরে নবান্নে দমকল দফতরের একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেখানেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভনের দেখা হয়। সেই অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই শোভন চট্টোপাধ্যায় তাঁর পদত্যাগপত্র দিয়ে আসেন গৌতম সান্যালের কাছে।
[espro-slider id=14795]
দলীয় সূত্রে খবর, সেখানে শোভন লিখেছেন, “মন্ত্রিত্ব এবং মেয়রের পদ ছাড়তে আমি বাধ্য হলাম।” এদিন নবান্ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শোভন পদত্যাগ করেছে। আগেও কয়েকবার দিয়েছিলেন। ভেবেছিলাম শুধরে যাবে। এদিন আবার করেছে। বিধানসভা চলছে। কাল ছুটি। পরশু খুলবে। তাঁকে মেয়র পদও ছাড়তে বলা হয়েছে।” নতুন মেয়র দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত কমিশনারই কাজ দেখে নেবেন বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “কলকাতার মানুষ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। উনি এত দিন ছিলেন কেন? কার দয়ায় ছিলেন? ওঁরও কষ্ট হচ্ছিল, মানুষেরও কষ্ট হচ্ছিল।”
এই ঘটনায় বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান। তিনি বলেন, “বিধানসভার অধিবেশন চলাকালীন এই ঘটনা ঘটেছে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর আচমকা পদত্যাগের কারণ বিধানসভার জানার অধিকার আছে।”
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বলেন, “নারদ-কাণ্ড থেকে শুরু করে নানা বাবে তিনি পদের মর্যাদা খুইয়েছিলেন। তারপরেও পদে ছিলেন। এভাবেই যদু বংশ ধ্বংস হবে।”
আপাতত দলের অভ্যন্তরে এটাই মনে করা হচ্ছে যে , শোভন ‘প্রেমের বলি’ হলেন। অনেকেরই বিশ্বাস, বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তাঁর এই পরিণতির জন্য প্রধানত দায়ী। সত্যি বললে, বিষয়টিকে বিশ্বাসের স্তরে উন্নীত করেছেন শোভন নিজেই তার কাজের মাধ্যমেই। বৈশাখী-নির্ভরতা বাড়ার পাশাপাশি নিজেকে দিন-দিন গুটিয়ে নেওয়া, কাজ-পালানো মানসিকতা, সব কিছু মিলিয়ে শোভন এমন এক অবস্থান নিয়ে ফেলেছিলেন, যেখানে তিনি কেন আছেন, সেই প্রশ্ন উঠছিল বারবার।
এমনকি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোভনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করছেন কেন, গুঞ্জন ছিল তা নিয়েও। এটা ঘটনা যে, ব্যক্তিগত জীবনযাপনকে বাজারের খোরাক করে তুলে শোভন তৃণমূলকে বিড়ম্বনায় ফেলেছিলেন। তবু ব্যবস্থা নেওয়ার আগে মমতা তাঁকে সংশোধনের প্রচুর সুযোগও দিয়েছেন। দলে প্রভাবশালী কোনও কোনও নেতা-সাংসদের ঘোর আপত্তি সত্ত্বেও তাঁকে পুরোপুরি ক্ষমতাচ্যুত করেননি তিনি বরং শোভনের দফতর ছেঁটে, দলীয় দায়িত্ব কমিয়ে, নিরাপত্তা কাটছাঁট করেও তাঁকে মন্ত্রী-মেয়র দুই পদেই রেখে দিয়েছিলেন মমতা। বারবার নিজে বুঝিয়েছেন। শুভার্থীদের দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। ভর্ৎসনা করেছেন, এমনকি মঙ্গলবারেও তাই ঘটেছে, কিছুতেই কাজ হয়নি।
শোভন তাঁর ‘প্রিয়’ বান্ধবী বৈশাখীকে ‘প্রাধান্য’ দিয়েছেন সবার উপরে। তথাপি তাঁর বিরুদ্ধে অকস্মাৎ এমন কঠিন পদক্ষেপ করার অভিপ্রায় এ দিনও মমতার ছিল না। হয়তো তিনি আরও অপেক্ষা করতেন। হয়তো স্নেহের প্রশ্রয়ে আরও কিছুদিন তাঁর দীর্ঘদিনের সঙ্গী ‘কানন’কে কোনও না কোনও পদে রেখে দিতেন কিন্তু শোভনের পদত্যাগের ভঙ্গি এবং চিঠির ভাষা মমতার কাছে অত্যন্ত অশোভন ঠেকেছে তাই তিনি কার্যত অপমানিত বোধ করেছেন। আর সেটাই হল।
মঙ্গলবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একটি সরকারি বৈঠক করার পরে সাংবাদিক বৈঠকেও শোভনের থাকার কথা ছিল কিন্তু তিনি যাননি। উল্টে পদত্যাগপত্র দিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি গৌতম সান্যালের কাছে। একটি ছোট্ট খামে। ভিতরে চিঠিতে লেখা, ‘আন্ডার কম্পালশন’ (বাধ্য হয়ে) তিনি মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিচ্ছেন। এ ভাবে চিঠি দিয়ে চলে যাওয়া এবং ‘কম্পালশন’ শব্দটি মমতার কাছে অসম্মানজনক মনে হয়। তিনি তৎক্ষণাৎ সম্মতি দিয়ে নোট দেন, ‘ইয়েস প্লিজ’ এবং মুখ্যসচিবকে লেখেন, অবিলম্বে রাজ্যপালের কাছে ফাইলটি পাঠিয়ে দিন। শোভনের মন্ত্রিত্ব এভাবেই শেষ হয় গতকালকে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে কয়েক দিনের মধ্যে কলকাতা নতুন মেয়রও পেয়ে যাবে।
তবে শোভন যে ইদানীং মমতাকে এড়িয়ে চলতে চাইতেন, সেটা কারও দৃষ্টি এড়াত না। যেমন, এ বার মমতার বাড়ির কালীপুজোয় এবং ভাইফোঁটার অনুষ্ঠানে শোভনের তাৎপর্যপূর্ণ অনুপস্থিতি। তবু অপার স্নেহে নেত্রী কিছু দিন আগেও ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, “কাননের কাজে মন নেই। তবু একটা পদে ওকে রাখব। তাতে ওর একটু মর্যাদা থাকবে। ও আমার বহু সুখ-দুঃখের সঙ্গী। সব সময় পাশে থেকেছে।” এটা নিশ্চিত বোঝাই যাচ্ছে, মঙ্গলবার চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে তাই মমতাও স্বস্তিতে নেই। স্বস্তিতে আছেন শোভন? তিনি ধরা ছোঁয়ায় আসেননি।
যদিও প্রশ্ন ঘুরছে, সারদা-নারদে ‘বিদ্ধ’ শোভনের রাজনৈতিক জীবন কি এ বার অন্য কোনও বাঁক নেবে? রাজনীতিতে শেষ কথা কিছু নেই। তবু শোভনকে যাঁরা জানেন, তাঁরা আপাতত এই সম্ভাবনা নস্যাৎ করতে চান। শোভন নিজেও বহু বার বলেছেন, মমতাকে ছেড়ে দিতে হলে তিনি রাজনীতিই করবেন না এবং অবশেষে এটা বুঝিয়ে দিয়েছেন, ভালোবাসার জন্য সবকিছু ছাড়া যায় কিন্তু ভালোবাসা ছাড়া যায় না কোনো কিছুর বিনিময়ে।
মূলত যে ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে মন্ত্রী শোভন চ্যাটার্জীর জীবনে এতো কিছু ঘটে গেলো তিনিও মেয়রের সাথে “সুস্থ ও স্বাভাবিক বন্ধুত্বপূর্ণ ” সম্পর্কের কথা আগেও অস্বীকার করেননি। বরং খুব ভালো পারিবারিক বন্ধু বলেই উল্লেখ করেছিলেন অতীতেও, কিন্তু মেয়রের কাল ইস্তফা পরবর্তীতে বৈশাখী ব্যানার্জীর থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে গতকাল প্রতিক্রিয়া দিলেন আরেকপক্ষ, তার স্ত্রী। যদিও বর্তমানে স্বামী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলছে তাঁর। যা নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে নানা বিতর্কও তৈরি হয়েছে। সেই রত্না চট্টোপাধ্যায়, শোভনের ইস্তফার প্রসঙ্গ শুনে মঙ্গলবার বললেন, “এমনটা হওয়ারই ছিল।” তিনি কলকাতাতে ছিলেন না। তিনি ছেলেকে নিয়ে মুম্বই গিয়েছেন। টেলিফোনেই বললেন, “ইস্তফার খবরটা পেয়েছি। আসলে শোভনবাবু নিজেই নিজের রাজনৈতিক জীবন শেষ করে ফেললেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে অনেক সুযোগ দিয়েছিলেন কিন্তু উনি তাঁর পরেও নিজেকে শুধরে নেননি। তাই তাঁকে মন্ত্রীর পদ খোয়াতে হল।”
রত্না জানান, মঙ্গলবার রাতেই তিনি কলকাতায় ফিরছেন। তাঁর আক্ষেপ, শোভনবাবু নিজের বিবেক মেনে কাজ করলে ভাল করতেন। হয়তো শোভন তাঁর বিবেক নিয়েই কাজ করেছেন যেটা রত্নাদেবী বা মমতা ব্যানার্জী বোঝেননি। রত্নার কথায়, “বাইশ বছর ধরে ঘর করেছি শোভনের সঙ্গে। ওঁর ভাল, খারাপ সব জানি। কত রাতে বাসন্তী, ক্যানিং ছুটে গিয়েছেন রাজনীতির টানে। আগুন লাগলে সারা রাত কাটিয়েছেন কর্তব্যরত মন্ত্রী হিসেবে। সে সব চোখের সামনে দেখেছি। কত দায়িত্ববান ছিলেন তখন! বিশেষ একজনের পাল্লায় পড়ে সেই মানুষটাকেই পাল্টে যেতে দেখলাম। তখন দিনের পর দিন পুরসভায় গরহাজির। কাজে মন নেই।’
তিনি জানান,” মুখ্যমন্ত্রী শোভনকে খুব স্নেহ করেছেন বরাবর। এমনকী শোভনের ‘বিচ্যুতি’ ঘটার পরও দিদি বলেছিলেন, তুই মন দিয়ে কাজ কর কানন। তবুও নিজেকে বদলাননি শোভন। অনেক সুযোগ তাঁকে দিয়েছেন দিদি কিন্তু তা রক্ষা করতে পারেননি শোভন।” আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবেরাও শোভনকে ‘সুবুদ্ধি’ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বলে রত্নার দাবি। তাতেও কান দেননি, বরং ওই শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছেন। অনেককে বাড়িতে ঢুকতেও দিতেন না। রত্না বলেন, “ওঁর যাত্রার শুরুটা দেখেছিলাম। আবার সর্বনাশটা পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে দেখলাম, আমি কিছু করার সুযোগ পেলাম না।”
মেয়র পুত্র ঋষি ও প্রতিক্রিয়া জানাতে বললেন, ” বাবা একজন অত্যন্ত সন্মানীয় ব্যক্তি। যা ঘটেছে তাঁর জন্য আমিও অত্যন্ত ব্যথিত। গতকাল তিনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা হয়তো সবদিক বিবেচনা করে নেননি। আবেগের বসে নিয়েছেন। তিনি আমার মায়ের সাথে কথা বলে করতে পারতেন। এর ফলাফল যাই হোক এর দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে। তবে আমি বিশ্বাস করি তাঁর শুভবুদ্ধি ফিরবে এবং তিনি অবশ্যই ফিরবেন”।
নবান্ন সুত্রে পাওয়া শেষ খবরে জানান, যে দু’টি দফতর থেকে শোভন ইস্তফা দিয়েছেন তা আপাতত সামলাবেন পুর ও নগরোয়ন্নন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এবং আপাতত পুর কমিশনার খলিল আহমেদ পুরসভার দায়িত্ব সামলাবেন। প্রশ্ন যতই উঠুক ভালোবাসার সামনে, নিজের আবেগ অনুভূতির সামনে রাজনীতি, সামাজিক প্রতিষ্ঠা সব কিছু যে গৌণ হয়ে যায় সেই কথাটা শোভন আবারও প্রমান করলেন। ভালোবাসাহীন সমাজের এটা বোঝার মতো মানসিকতা কতজনের আছে এটাও একটা প্রশ্ন এই মুহূর্তে উঠছে।