Thursday, March 23, 2023
spot_img

প্রতিবাদী যুবকের আত্মহত্যার দায় কার?

 

রাজীব মুখার্জী, নবান্ন, হাওড়াঃ গত শুক্রবারে নবান্নের হাই সিকিউরিটি জোনের মধ্যেই নিজের গায়ে আগুন দিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন গোলাবাড়ি থানার অন্তর্গত সালকিয়ার ত্রিপুরা লেনের বাসিন্দা চল্লিশ বছর বয়সী বাপন সাহা। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ঘটনার দিন রাতেই এস.এস.কে.এমে. তাঁর মৃত্যু হয়। প্রসঙ্গত গায়ে আগুন লেগে শরীরের ৯০% পুড়ে যায় বাপন সাহার।

২রা নভেম্বর ঘটনার পরেই স্থানীয় মানুষ, এমনকি বাপনবাবুর স্ত্রীও মুখ খুলতে না চাইলেও তার ভাই পরিষ্কার জানিয়েছিলেন ” আমাদের বাড়ির পাশেই একটি জমি প্রোমোটারের হাতে প্রোমোটিং হচ্ছে। সেই প্রোমোটিংকে কেন্দ্র করে অনেকবার আমার ভাইকে হেনস্থা ও অপমান করা হয় সবার সামনেই। এমনকি ১লা নভেম্বর মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। শনিবার বাপন সাহার বাড়ি লোকেরা বাপনবাবুর মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ওই স্থানীয় প্রোমোটারের অবিলম্বে কঠোর শাস্তির দাবি তোলেন। স্থানীয় বিজেপির পক্ষ থেকেও গোলাবাড়ি থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। যদিও ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত প্রোমোটারের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আর তার মোবাইল নম্বর বন্ধ আছে বলছে তার নম্বর ডায়াল করলে।”

এলাকাবাসীরা অভিযোগ জানাচ্ছেন, বাপনবাবুর সালকিয়ার ৪৫ নম্বর ত্রিপুরা লেনে বাড়ির ঢোকার মুখেই সাত তলা ফ্ল্যাট বানাচ্ছিলেন এই প্রোমোটার। যার জন্য বাপনের বাড়ি ঢোকার সমস্যা হচ্ছিলো। ওই দিন প্রতিবাদ করায় প্রোমোটারের পাঠানো একদল যুবকের হাতে বৃহস্পতিবার চরম হেনস্থা হতে হয় তাঁকে। এই প্রোমোটার শাসক গোষ্ঠীর খুব কাছের লোক বলেও অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। এই ঘটনার পরে ওই দিনই সকলের চোখের সামনে কেরোসিন তেল ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি কিন্তু এলাকার লোকেরা তাঁকে ধরে ফেলায় সে যাত্রায় বেঁচে যান। তার পরের দিন থেকেই তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান কিন্তু আর ফেরেননি। শুক্রবার তাঁকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় নবান্নের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয়। বাপনবাবুর ১০ মাসের একটি শিশুপুত্র রয়েছে।

বাপনবাবুর স্ত্রী শর্মিষ্ঠা সাহা বলেন, ‘‘ওই দিন যে ভাবে প্রোমোটারের লোকজন ওঁকে মারধর করল, আমাকে ঠেলে ফেলে দিল, আমার শাশুড়ির নামে গালিগালাজ করল তা উনি সহ্য করতে পারেননি। চাকরি না পাওয়ার জন্য মানসিক যন্ত্রণায় আমার স্বামী আত্মহত্যা করার চেষ্টার করেছেন এই অভিযোগ মিথ্যা। আমার স্বামী অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই নবান্নের সামনে গায়ে আগুন দিয়েছিলেন।’’

অপরদিকে পুলিশ শর্মিষ্ঠাদেবীর অভিযোগ মানতে রাজী নয়। তাদের মতে, ওই যুবক চাকরি না পাওয়ায় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। কিন্তু হাওড়া সিটি পুলিশের এক উচ্চ পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ওই পরিবারের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’’

এই ঘটনার পর থেকে নবান্নের নিরাপত্তা কঠোর করা হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, নবান্নের সামনের সেতুর রাস্তায় পুলিশ পিকেট আরো বাড়ানো হয়েছে এবং সেতুর নীচে গাড়ি রাখা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বাপনের মৃত্যুর দায় কার? কে নেবে? যে অভাবের সংসার পেছনে পরে রইলো তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে?  তাঁর ১০ মাসের ছোট সন্তানের কি হবে? এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর কে দেবে তারও কোনো উত্তর কারও কাছে নেই।

Related Articles

Stay Connected

0FansLike
3,743FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles