37 C
Kolkata
Tuesday, April 16, 2024
spot_img

গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কবলে পরে স্তব্দ উন্নয়ন

 

রাজীব মুখার্জী, উলুবেড়িয়া, হাওড়াঃ গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের থেকে ইতিমধ্যেই গোপন রিপোর্ট জমা পড়েছে নবান্নে। বারুদের স্তুপের উপরে বসে আছে জগৎবল্লভপুর এলাকা। স্থানীয় সূত্রে খবর পরিস্থিতি পুলিশ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাই নিজেদের পিঠ বাঁচাতেই পুলিশ রিপোর্ট জমা করেছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। স্থানীয় তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, এখনো অব্দি দলীয় নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অশান্তি কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সদ্য হয়ে যাওয়া ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের পরে হাওড়ার অন্যান্য জায়গাতে যেভাবে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে তার মধ্যে ব্যতিক্রম এই জগৎবল্লভপুর।

স্থানীয় বিবাদমান তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে এখনো অব্দি কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন করা যায়নি। উল্টে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে দলের অভ্যন্তরীণ বিবাদ গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। এই অশান্তির জট কবে কাটবে তার ভরসা কেউ দিতে পারছেন না। এই অবস্থায় জগৎবল্লভপুরের বিভিন্ন প্রকল্পের অনুমোদন না পাওয়ার জন্য এই পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত বহু পঞ্চায়েতও কাজে হাত দিতে পারছে না।

উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক তথা হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূল সভাপতি পুলক রায়ের থেকে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি জানান, " ১লা নভেম্বর বৃহস্পতিবার আমি এই বিষয়ে বিবাদমান দুই পক্ষের নেতৃত্বকে নিয়ে বৈঠকে ডেকেছি। দুই পক্ষের সাথেই আজ কথা বলবো। দলের রাজ্য নেতৃত্বের পক্ষ থেকে গোষ্ঠী-বিবাদ মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকেই। সামান্য কিছু বিষয় নিয়ে সমস্যা হয়েছে, আজকেই মিটে যাবে সব সমস্যা। "

মূলত পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি এবং সহ-সভাপতি নির্বাচনের সময় থেকেই শুরু হওয়া তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে এখন। এই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের একদিকে রয়েছেন দলের সদ্য প্রয়াত নেতা ও এই বিধানসভা কেন্দ্রের পূর্ব সভাপতি বিমান চক্রবর্তীর অনুগামীরা এবং অন্যদিকে জগৎবল্লভপুরের এই মুহূর্তের স্থানীয় বিধায়ক আব্দুল গনির অনুগামীরা। দলের অভ্যন্তর থেকেই অভিযোগ উঠেছে যে দলীয় নির্দেশ উপেক্ষা করেই ভোটাভুটিতে সমিতির সভাপতি ও সহ-সভাপতি পদে জিতে যান বিধায়ক অনুগামীরা। সেই থেকেই পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে ওঠে আরো। পরবর্তীকালে আরো ৯ টি স্থায়ী সমিতির নির্বাচন‌েও দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্যমত না হওয়ায় বাধ্য হয়েই ভোটাভুটি করতে হয়। এই ক্ষেত্রেও ওই ৯ টি স্থায়ী সমিতির ভোটাভুটিতেও জিতে যান বর্তমান বিধায়কয়ের অনুগামীরাই। আর তারপরেই দফায় দফায় উভয় গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ হয়। সেই পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশ প্রশাসনকে নাজেহাল হতে হয়েছিল। ফলে চিত্র কিছুই বদলায়নি।

স্থানীয় এক কর্মী কাশেম শেখ বলেন, "দলের রাজ্য নেতৃত্ব এই স্থায়ী সমিতির সব সদস্যকে পদত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলো কিন্তু সেই নির্দেশকেও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। কেউ পদত্যাগ করেনি।" গত ৬ ই অক্টোবর কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বের সুপারিশ মেনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচনও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে।

দলের রাজ্য নেতৃত্বের সেই পদত্যাগের নির্দেশকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়েই গত ১০ ই অক্টোবর কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন বিধায়ক-গোষ্ঠীর লোকজন। তাঁদের আইনজীবী মারফত আবেদনে তাঁরা কোর্টে জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ আইন মেনেই স্থায়ী সমিতি গঠন করা হয়েছিল অথচ বিনা কারণে জেলা প্রশাসন এই কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন স্থগিত করে রেখেছে। অবিলম্বে যাতে কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য জেলা প্রশাসনকে যাতে নির্দেশ দেওয়া হয়, এই মর্মে আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে।

এই মামলার আবেদনকারীদের মধ্যে স্থানীয় তৃণমূল নেতা মঞ্জুর মুন্সি বলেন, ‘‘স্থায়ী সমিতির নির্বাচিত সদস্যেরা সুবিচার চেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।’’ হাওড়া সদর মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচন নিয়ে মামলার কাগজপত্র তাঁরা আদালতের থেকে হাতে পেয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আদালতের কোনও নির্দেশ এখনো অব্দি তাঁদের হাতে আসেনি। তাই বিষয়টি যেহেতু আদালতের বিচারাধীন এই বলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। প্রসঙ্গত মামলার কথা কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন তৃণমূলের হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি পুলক রায়ও।

Related Articles

Stay Connected

17,141FansLike
3,912FollowersFollow
21,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles