রাজীব মুখার্জী, হাওড়াঃ হাওড়া শহরাঞ্চলে টোটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছিল হাওড়া সিটি পুলিশ-সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন আধিকারিকেরা। হাওড়া সিটি পুলিশের হিসেবে শুধুমাত্র হাওড়া পুরসভা এলাকাতেই প্রায় ২৫ হাজার টোটো চলছে এই মুহূর্তে এবং তার জেরে সমগ্র হাওড়া শহরের যানবাহনের গতি কমে গিয়েছে। হাওড়া সিটি পুলিশের কাছ থেকে এই রিপোর্ট পাওয়ার পরেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। পরিবহন দফতর থেকে অবিলম্বে হাওড়ায় ই রিকশা চালবার জন্য পুলিশ ও জেলার প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন, হাওড়া পুরসভা ও পুলিশের দেওয়া প্রায় আট হাজার টোটোর ‘টেম্পোরারি আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ বা ‘টিন নম্বর’ দেখে টোটোমালিকদের ই- রিকশার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে। বেআইনি টোটো বন্ধ করে রাজ্য সরকার স্বীকৃত ই-রিকশা শহরে চালানোর পথে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলো হাওড়া জেলা প্রশাসন।
৩০ শে অক্টোবর মঙ্গলবার থেকেই হাওড়া শহরে বেআইনি টোটো ভাঙার কাজ চালু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ মতো টোটো ভেঙে টোটোর মালিককে লোহার স্ক্র্যাপের সার্টিফিকেট প্রশাসনের থেকে সংগ্রহ করতে হবে। তারপরে রাজ্য সরকার স্বীকৃত ডিস্ট্রিবিউটরের থেকে ই-রিকশা কিনতে পারবেন টোটো মালিক। ই – রিক্সা নেওয়ার পরে হাওড়া ময়দানে অবস্থিত আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের থেকে গাড়ির নম্বর পাবেন। রাজ্যে তাঁরাই প্রথম টোটো বন্ধ করে ই-রিকশা চালুর ব্যাপারে এত দূর এগিয়েছেন বলে দাবি করেছেন হাওড়া জেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা।
প্রসঙ্গত বছর দুয়েক আগে থেকেই টোটোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এই রাজ্য পরিবহণ দফতর। তারপরেও হাওড়ায় বেআইনি টোটোর দাপট কমেনি উল্টে বেড়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলগুলোর থেকে চাপ থাকায় পুলিশ প্রশাসন থেকেও এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষ শক্ত মনোভাব দেখানো যায়নি কিন্তু দীর্ঘ টালবাহানার পরে অবশেষে নবান্ন থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরেই টোটো বাতিল করে ই-রিকশা নামাতে জোড়াজুড়ি শুরু করেছে এই মুহূর্তে হাওড়া জেলা প্রশাসন। চলতি বছরে পুজোর আগেই হাওড়ায় প্রায় ৮ হাজার টোটো মালিককে ই-রিকশা দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করেছিল হাওড়া জেলা পরিবহণ দফতর। এ দিন থেকে শুরু হয়েছে টোটো ভাঙার কাজ।
আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানান, এখন থেকে প্রতিদিনই এই কাজ চলবে এবং স্ক্যাপ সার্টিফিকেট না দেখে ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেবে না পরিবহণ দফতর। ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার টোটো মালিক টোটোর পরিবর্তে ই- রিকশা কেনার জন্য আবেদন করেছেন চলতি বছরের প্রথম দিকে পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছিল, হাওড়ায় মোট ৮০ টি রুট তৈরি করা হয়েছে টোটো চলার জন্য। যাঁরা ই- রিকশা কেনার যোগ্য হবেন তাঁদের যেমন ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে, তেমনই রাজ্য সরকারের গতিধারা প্রকল্পের আওতায় ঋনের জন্যে আবেদন করতে পারবেন। তবে গাড়ি কেনার আগে পুরনো টোটোকে ভেঙে দিয়ে স্ক্র্যাপ করে দেওয়া হবে।
হাওড়ার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা এই প্রক্রিয়ায় কোনও ফাঁক রাখতে চাইছি না. টোটো ভাঙা থেকে শুরু করে মালিকের স্বাক্ষর- সহ সব কিছুরই ভিডিও করা হচ্ছে “।
আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের ওই কর্তা আরও জানান, শহরের বিভিন্ন অংশে ডিস্ট্রিবিউটরেরা টোটো ভাঙার কাজের জায়গা নির্ধারণ করছেন। সেই সব জায়গায় ভাঙার কাজ চলবে। এখনও পর্যন্ত ৭০০ জনকে অফার লেটার দেওয়া হয়েছে, বাকিদের খুব শীঘ্রই দেওয়া হবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, শুধুমাত্র একটি রুটের জন্য দু’হাজার আবেদন পত্র জমা পড়েছে। তবে কারা পারমিট পাবেন তার জন্য লটারি করা হবে।