শান্তনু বিশ্বাস, হাবড়াঃ কথা দিয়ে কথা রাখেনি তার আগে সব শেষ হয়ে গেল। সিকিম ঘুরে এসে কালী পুজো করবে একটু অন্য রকম ভাবে। সিকিম থেকে ফেরা হল ঠিকই। কিন্তু কফিন বন্দি হয়ে শববাহী গাড়িতে চেপে। রেজি বাজারে কাছে কুলাকের পাহাড়ি খাদেই পরে নিভে গেল পাঠক বাড়ির সব সপ্নের সাথে ৪ টি তরতাজা প্রাণ। সাথে প্রাণ যায় এক আত্মীয়ও-র। মছলন্দপুর সহ নতুনপল্লির গোটা এলাকায় এদিন যেন অন্ধকার নেমে রয়েছিল। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থানার অন্তর্গত মছলন্দপুরের নতুনপল্লিতে গত ৪০ বছর ধরে বসবাস করছেন পাঠক পরিবার। ব্রজেন্দ্র পাঠক (৭৪) রাজ্য জনস্বাস্থ্য কারিগরী দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী, স্ত্রী আশালতা পাঠক (৬৫) ইছাপুর গান-শেল কারখানায় কর্মরত ছিলেন।ছেলে বিভাস পাঠক (৪১) বেশ জনপ্রিয় চিকিৎসক ছিলেন, যখন বাড়ি আসতেন কোন মানুষ কে চেখআপ করলে ভিজিট নিতেন না। মেয়ে লিলি পাঠক (৪৬) রাজারহাট একটি বিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষার পেশায় শিক্ষিকা। লিলি পাঠকের স্বামী তুষার পাঠক, তিনিও একি গাড়িতে ছিলেন। কপালের জোরে বেচেঁ যান। পুজোর ছুটিতে বিভাস বাবু সহ বাবা, মা, দিদি, স্ত্রী ও দুই মেয়ে তিন্নি (৬), গুঞ্জানা (১১) কে নিয়ে সিকিম বেড়াতে গিয়েছিল একাদশীর দিন। সঙ্গে গেছিলেন বিভাস বাবুর মামা নীহারেন্দু বিশ্বাস। তিনি বারাসতের বাসিন্দা। সিকিমের রেজি বাজার কুলাকে পাহাড়ি পথের বাক ঘুরাতে গিয়ে প্রায় ৩০০ ফুট গভীর খাদে গাড়ি পড়ে যায় এবং তাতে মৃত্যুর কলে ধলে পড়ে পাঠক পরিবারের ৪ জন সহ এক আত্মীয়র। বিভাস বাবুর স্ত্রী ও দুই মেয়ে ছিলেন সামনের গাড়িতে, তাই তাঁরা সুরক্ষিত রয়েছেন।
২৪শে অক্টোবর সকাল থেকেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে মছলন্দপুর এলাকায়। দেহ ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রতিবেশীরা। লক্ষ্মী পুজোর আয়োজন নেই কোনও বাড়িতে। আত্মীয় সুজয় মণ্ডল বললেন, "কথা ছিল সিকিম থেকে ফেরার পর মামার (ব্রজেন্দ্র পাঠক) পঁচাত্তর বছরের জন্মদিন পালন হবে ধুমধাম করে। গ্রামজুড়ে নিমন্ত্রণ করা হবে। সবাই আসবে। মামার আর ফেরা হল না। জন্মদিনও আর হবে না।" স্থানীয় বাসিন্দা, রুমা ব্যানার্জী বলেন, "অষ্টমীর দিন এক সাথে খিচুড়ি প্রসাদ খেয়ে দাদা বলে (বিভাস পাঠক), এ বছর এই টা হলো, সামনে বার ফ্রাইডরাইস আর আলুর দম হবে। দশমির দিন অনেক আনন্দ সাথে মা কে বিদায় জানিয়েছি। কিন্তু আজ এনাদের এ ভাবে বিদায় জানতে হবে ভাবতে পাবিনি।" গত কাল রাত ৯ থেকে ৯:৩০ পযর্ন্ত পাঠক পরিবার কে শ্রদ্ধা জানাতে আধ ঘন্টা নতুন পল্লী এলাকার সকল ঘরের আলো বন্ধ থাকবে এলাকাবাসীর তরফ থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।