রাজীব মুখার্জী, শিয়ালদহ, কলকাতাঃ মহাকাশ থেকে নৌসেনা সমস্ত জায়গাতেই নিজেদের প্রতিষ্ঠা করে চলেছে বাঙালী তথা ভারতীয় মহিলারা। সেই গৌরবের এক উজ্জ্বল নিদির্শন এই রাজ্যের প্রথম মহিলা হিসেবে রেলগাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখেছেন বাঙালী কন্যা সৌমিতা রায়। পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা সৌমিতা গত ২০শে সেপ্টেম্বর ২০১৮ তে লোকো পাইলটের পদে অধিষ্ঠিত হন। সৌমিতা রায় একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন এবং আমরাও সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকলাম। পূর্ব রেলের পূর্ব শাখার প্রথম মহিলা ড্রাইভার রূপে তার আবির্ভাব। তিনি এই পূর্ব রেলের ৩১৬০১ শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট মাতৃভূমি লোকালের প্রথম মহিলা চালক। যিনি কৃতিত্বের সাথে শিক্ষনবিশ হিসাবে রেলের স্বাভাবিক ক্ষমতা প্রদর্শন ও বিরূপ পরিস্থিতিতে কার্য সম্পাদন করার পরীক্ষায় স্বসম্মানে উত্তীর্ন হয়েছেন। শুধু তাই নয় তার কাজের মাধ্যমে তিনি রেলের উচ্চ পদস্থ কর্তাদেরকেও অবাক করেছেন ও তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার কাজে সফল হয়েছেন। ৬ই অক্টোবর শনিবার সেই ঐতিহাসিক সন্ধ্যাতে তিনি পূর্ব রেলওয়ের সুবারবান ই.এম.ইউ. ট্রেন শিয়ালদহ থেকে রাণাঘাট পর্যন্ত ৩১৬০১আপ মাতৃভূমি লোকালের দায়িত্ব নিয়ে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছেছিলেন।
শিয়ালদহের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে রানাঘাট পর্যন্ত সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত মাতৃভূমি স্পেশাল ট্রেন চালাচ্ছে পূর্ব রেল। ট্রেনটি শিয়ালদহ থেকে রাণাঘাট পর্যন্ত প্রায় ৭৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সন্ধ্যে ৭ টা ৪০ মিনিটে রানাঘাট পৌছায়। এবার থেকে মাতৃভূমি স্পেশালে ট্রেনের চালক থেকে শুরু করে নিরাপত্তাকর্মী সবই মহিলা দ্বারা পরিচালিত হবে সেই ঘোষণায় করলো পূর্ব রেল দফতর।
গত রবিবার পূর্বরেলের জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “যে সমস্ত মহিলারা এই পেশায় আসতে চান সৌমিতা তাদের সবার অনুপ্রেরণা। এবার থেকে মাতৃভূমি স্পেশালে ট্রেনের চালক থেকে শুরু করে নিরাপত্তাকর্মী সবই মহিলা দ্বারা পরিচালিত হবে। রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্সের সাব-ইন্সপেক্টর শিবানী মজুমদার সহ ৭ জনের মহিলা কনস্টেবলের একটি প্রমীলা বাহিনীর
টিম গঠন করা হয়েছে।”
[espro-slider id=12960]
রেলের এক পদস্থ কর্তা বললেন ” সৌমিতা দেখিয়ে দিলো মেয়েরা চাইলে সব করতে পারে ” এই ট্রেনের গার্ড সবিতা শাউ থেকে শুরু সমস্ত কর্মী মহিলা। এই ট্রেনের আর. পি. এফ. এর সহকারী ইন্সপেক্টর শিবানী মজুমদার সহ আরো ৭ জন মহিলা রয়েছেন। এরা প্রতিদিন ৭৩.৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন। শিয়ালদহ থেকে এই ট্রেন রোজ
বিকেল ৫. ৫২ মিনিটে যাত্রা শুরু করে রানাঘাট পৌছায় সন্ধ্যা ৭.৪০ মিনিটে।”
পূর্ব রেলের আধিকারিক আরও জানান “লোকাল ট্রেন চালানো খুব বিপদজনক কাজ। কারন কেবিনে চালক একাই থাকেন কোনো সহকারী ব্যতীত। কাজেই খেয়াল রাখতে হয় একদিকে সিগন্যাল খোলা আছে কিনা অপরদিকে নির্ধারিত সর্বোচ্চ গতি নিয়ে যাওয়া, সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো ও সিগন্যাল না থাকলে সেখানেই ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেওয়া। এটা একই সঙ্গে অনেক রকমের কাজ। যাতে ধৈর্য, একাগ্রতার ভীষন দরকার.”
প্রসঙ্গত শহরতলীর ট্রেন অনেক জনবহুল এলাকা দিয়ে যাতায়াত করে। অনেক সময় ফটক বন্ধ থাকলেও লোকেরা জীবন হাতে নিয়ে রেলের লাইন পেরোন। তাই সেখানে নিত্যদিন দুর্ঘটনা ঘটার ভয় থাকে। যারা লাইন পার করছে বা গাড়ি পার করছেন তাদেরকে হাজার বলা সত্ত্বেও তারা কথা কানেও তোলেন না।
সুমিতা আমাদের জানালেন, “এটা একটা খুব চ্যালেঞ্জিং রোল। খুব এনজয় করছি। ছোট বেলা থেকে ডাকাবুকো ছিলাম। খুব ইচ্ছা ছিল জীবনে এমন কিছু একটা করার যাতে একটা রোমাঞ্চ থাকে। এতদিনে বোধহয় নিজের পছন্দ মতো একটা কাজ পেয়েছি। আমরা এই মুহূর্তে যে প্রমীলা বাহিনী দেখতে পাচ্ছি রেলের ইতিহাসে যুক্ত তাদের নাম মৌমিতা বিশ্বাস, পায়েল মুড়ে সহ চালিকা সুরুচি কুমারী, বিনা টোপ্পো, রিঙ্কি সাহা, লক্ষ্মী মাহাতো, প্রিয়াঙ্কা সিং, পূজা কুমারী প্রমুখ।
কথায় বলেন সংসার সুখী হয় রমণীর গুনে। আজ রেলের সাথেই জুড়ে থাকা এই নারী বাহিনীর কাছে পূর্ব রেল তাদের আরেকটি সংসার এবং আমরা কামনা করি তাদের ছোয়াতে ভারতীয় রেল নতুন জীবন ফিরে পাক। যাত্রী পরিষেবায় উজ্জ্বল সাক্ষর রাখুক ভারতীয় রেল।”