অরিন্দম রায় চৌধুরী, নয়াদিল্লিঃ মোট ৩৮দিন শুনানির পরে আবার এক ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিপ কোর্টের। আধারের সাংবিধানিক বৈধতাকে স্বীকৃতি দিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে বিচারপতিদের বেঞ্চ আধার মামলায় এই রায় দিয়েছে। ‘সমাজের প্রান্তিক মানুষকে শক্তিশালী করে আধার’, এই কথা জানিয়ে আধার মামলায় কেন্দ্রের পক্ষেই রায় দেয় প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে বিচারপতিদের বেঞ্চ।
সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের বিচারপতির ডিভিশান বেঞ্চ রায় দিয়ে জানিয়েছে, কেন্দ্র সরকারের তৈরি ২০১৬ সালের আধার আইনকে পুরোপুরি বাতিল করা না হলেও তার বেশ কয়েকটি ধারা বাতিলের কথা বলেছেন বিচারপতিরা। এদিন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বে বিচারপতিদের বেঞ্চের বিচারপতি একে সিকরি রায় শোনাতে গিয়ে বলেছেন, আধার অন্য পরিচয় পত্রের চেয়ে আলাদা। কারণ এটিকে ডুপ্লিকেট করা যাবে না। ফলে আধার কার্ড ও অন্য পরিচয়পত্রের মধ্যে মৌলিক বিভিন্নতা রয়েছে। খুব নামমাত্র অবস্থান, পরিচয় ও বায়োমেট্রিক ডেটা নাগরিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আধার নম্বর একটি ইউনিক নম্বর ও তা কারও সঙ্গে মেলানো যাবে না।
প্রসঙ্গতঃ মোট ২৭টি আধার মামলাকে একত্রিত করে সুপ্রিম কোর্ট মোট ৩৮দিন শুনানির পরে এদিন রায় দিল। ১২ সংখ্যার এই ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর ইতিমধ্যে অন্তত ১০০ কোটি ভারতবাসী ব্যবহার করতে শুরু করেছেন। ব্যাঙ্ক, মোবাইল, গ্যাসের সংযোগ থেকে শুরু করে নানা জায়গায় আধারের তথ্য বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হয়েছিল। তবে এদিনের রায়ে তা আর বাধ্যতামূলক রইল না।
প্রসঙ্গতঃ মোবাইলে আধারের সংযুক্তি নিয়ে প্রথম থেকেই সরব ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি ছিল, বায়োমেট্রিক তথ্য তিনি কিছুতেই কোনও মোবাইল সংস্থার হাতে তুলে দেবেন না। তাই নিজের মোবাইল নম্বরের সঙ্গে তিনি আধার কার্ডের সংযুক্তি করেননি। এদিন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ থেকে স্পষ্ট, কোনও বেসরকারী সংস্থাই আর আধারের তথ্য ব্যবহার করতে পারবে না।
আধার কার্ডের সাংবিধানিক বৈধতাকে স্বীকৃতি দিলেও বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় উঠে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে। এদিন একদিকে যেমন আধার নিয়ে কেন্দ্রের প্রয়াসকে আদালত সাধুবাদ জানিয়েছে, তেমনই সাধারণ মানুষের যে উৎকণ্ঠা ছিল, তাও নিরসন করার চেষ্টা করেছে। এবার একনজরে দেখে নেওয়া যাক, ঠিক কী বলেছে আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ
- আধার কার্ডে নাগরিকদের খুব সামান্য কিছু অবস্থানগত ও বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হয়েছে।
- এটিকে ডুপ্লিকেট করা যাবে না। ফলে একজনের আধার অন্যজন ব্যবহার করতে পারবেন না। তাই গোপনীয়তা রক্ষা হবে না, এই দাবি খারিজ।
- বেসরকারি সংস্থাগুলি আধার কার্ড চাইতে পারবে না।
- স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে আধার কার্ড বাধ্যতামূলক নয়।
- সিবিএসই, এনইএফটি, ইউজিসি০র মতো সংস্থা আধারের দাবি করতে পারবে না। আধার নেই বলে কোনও শিশুকে সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
- আধার-প্যান সংযুক্তিকরণকে মান্যতা দেওয়া হয়েছে।
- আধারের সঙ্গে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংযুক্তিকরণ করতেই হবে, এই দাবি খারিজ।
মোবাইল-আধার সংযুক্তিকরণের দাবিও সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করে দিয়েছে। - আধারকে অর্থ বিল হিসাবে পাশ করা যেতে পারে বলে সুপ্রিম কোর্ট সুপারিশ করেছে।
- অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা যাতে আধারের তথ্য না জোগাড় করতে পারে, তাঁরা যাতে আধার কার্ড না করতে পারে, সেক্ষেত্রে সরকারকে কড়া হাতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।