32 C
Kolkata
Friday, April 19, 2024
spot_img

বিপর্যয়ের গ্রাসে বাগরি মার্কেট, নিরাপত্তায় গাফিলতির চিত্র

 

রাজীব মুখার্জী, বাগরি মার্কেট, কলকাতাঃ রাত তখন প্রায় ২:৩০, বাগরি মার্কেটের ভিড়ের সেই চেনা চিত্র নেই তখন। ফাঁকা শুনশান গলি। দিনে হাড় ভাঙা খাটুনির পর অনেকেই ফুটপাথেই ঘুমোচ্ছে। হঠাৎ সানি চেঁচিয়ে উঠলো "আগ! আগ! আগ লাগে গয়া।" চিৎকার করে উঠলো বাকিরাও। ৩ তলা থেকে আগুনের শিক্ষা দেখা যাচ্ছে। বিপর্যয় যেন এই রাজ্যের পিছু ছাড়ছে না। একের পর এক বিপর্যয়ে নাজেহাল সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসন। শনিবার রাত ২:৩০ নাগাদ আগুন লাগে বাগরি মার্কেটের উপরের তলায়। আস্তে আস্তে সেই আগুন ভয়াবহ আকার ধারণ করে। দমকলের ৩০ টি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার কাজ করছে। ভয়াবহতা এতটাই যে, আগুনের তাপ বাগরি মার্কেট-এর সামনের গলিতে দাঁড়িয়েও পাওয়া যাচ্ছে। এখনো অব্দি আগুন লাগার প্রকৃত কারন জানাই যায়নি। তবে দমকল ও পুলিশ সূত্রে অনুমান করা হচ্ছে, প্রচুর পরিমান দাহ্য বস্তু মজুত থাকার কারণেই এই আগুন এতো ভয়ালো রূপ নিয়েছে। এখন দোকানদারদের চোখে শুধুই আতঙ্ক, মুখ থমথমে।

এলাকার প্রতক্ষদর্শীদের বয়ান থেকে জানা গিয়েছে, আগুনের গ্রাস এতটাই ভয়াবহ যে, একদম উপরের তলার জানলার বেশ কিছু কাছে আগুনে গলে বিকট শব্দ করে ভেঙে নিচে পড়েছে। মাঝে মাঝে ভেতর থেকে বিস্ফোরণের আওয়াজ আসছে, সম্ভবত মিটার ঘরে আগুন পৌঁছে সেখানে থেকে বিস্ফোরণ ঘটছে। তবে এখনও অব্দি সবটাই পূর্ব অনুমান ভিত্তিক। প্রায় ১০ ঘন্টার পরেও দমকল বা পুলিশের কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারে নি। এখনও অব্দি কোন প্রাণ হানির খবর নেই, কিন্তু রাতে এই মার্কেটের ভিতরে অনেকেই ঘুমায়, তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসা অব্দি বলা যাচ্ছে না হতাহতের বিষয়টি। এই ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই ঘটনা স্থলে এসে পৌঁছন, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় সহ কলকাতায় পুলিশের কমিশনার সহ উচ্চ পদস্থ কর্মচারিরা। মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং এই ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত ২০১৩ তে এই এলাকারই নন্দরাম মার্কেটে আগুন লাগার পরে রাজ্য সরকার উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করেছিলেন, যার প্রধান কাজ ছিল কলকাতায় এই সমস্ত পুরানো বিল্ডিঙের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও অগ্নি নির্বাপন ব্যাবস্থাকে সুরক্ষিত করা। যাতে দাহ্য পদার্থ না জমিয়ে রাখা হয়, ফাইয়ার এক্সটিঙ্গুসার পর্যাপ্ত ভাবে রাখা হয়, আগুন লাগলে এক্সিট পয়েন্ট অব্দি লোকেরা বেরিয়ে আস্তে পারে, পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা যেন রাখা হয়। কিন্তু বলাই বাহুল্য, সেই কমিটির কোন প্রভাব যে পরেনি তা বাগরি মার্কেট অগ্নিকান্ড ঘটনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক সৃষ্ট হয়েছে। আগুনের ধোঁয়া গোটা এলাকাতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আগুন নিয়ন্ত্রণে না এলে ছড়িয়ে পড়তে পারে গোটা বাগরি মার্কেট এলাকায়। এই ঘটনায় নন্দরাম মার্কেটের ছায়া দেখতে পাচ্ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।

রাত থেকে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়তেই অনেক ব্যবসায়ী যাদের দোকান এই মার্কেটে আছে তারা জড়ো হয়েছে। কাউকে রাস্তায় বসে পড়তে দেখা গেলো। আমরা কথা বলেছিলাম এক ব্যাবসায়ী, গিয়াসুদ্দিনের সাথে, ওনার দোকান এই মার্কেটের ৩ তোলাতে। চোখের জল মুছতে মুছতে বললেন "ইয়া আল্লাহ! এই কেয়া হো গ্যায়া। সব কুছ খাতাম হো গয়া, মে বারবাদ হো গায়া"বলতে বলতে কেঁদে উঠলেন, তাকে সামলাচ্ছেন ওই বিল্ডিঙেরই আরেক দোকানদার। তার দোকান ৩ তলাতেই। তার কথায়, "এখনো জানি না কী কী ক্ষতি হয়েছে, দোকানের কী অবস্থা"।পুরানো বিল্ডিং-এ এখনও একি ভাবে মজুত করা হয় দাহ্য বস্তু ব্যবসার স্বার্থে। প্রশাসনেরও টনক নড়ে যখন কোন ঘটনা ঘটে যায়। এখন দেখার এ বিষয় কি পদক্ষেপ নেয় প্রশাসন।

Related Articles

Stay Connected

17,141FansLike
3,912FollowersFollow
21,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles