রাজীব মুখার্জী ও অরিন্দম রায় চৌধুরী, মাঝেরহাটঃ মঙ্গলবার বিকেল ৩ঃ৪৫-৪টা নাগাদ আচমকাই হুড়মুড়িয়ে প্রচন্ড আওয়াজ করে ভেঙে পড়ে মাঝেরহাটের আর.ও.বি-টি। তখন ব্রিজের নিচেই মেট্রো রেলের কাজ করছিলেন বেসরকারি সংস্থার ঠিকা শ্রমিকেরা। তাদের মদ্ধ্যে থেকে কেউ নিজের ফোন থেকে পুলিশের সাথে সংযোগও করে বলে সূত্রের খবর। বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেলেও উদ্ধারকাজ সে ভাবে শুরু হয়নি। ব্রিজ ভেঙে পরার সময় ব্রিজের উপরে বেশ কিছু গাড়িও ছিল। ভাঙা ব্রিজের নীচে আটকে পড়েছে বেশ কয়েকটি গাড়ি। এলাকায় প্রবল উত্তেজনার ও যানজটের সৃষ্টি হয়। ধ্বংসস্তূপের নীচে বহু মানুষ চাপা পড়ে রয়েছেন, এমনটাই আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ইতিমধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ঘটনা স্থলেই। ৯ জন কে ভর্তি করা হয়েছে এস. এস. কে. এম হাসপাতালে।
ট্রাফিক আধিকারিকদের সূত্রের খবর, মাঝেরহাট ব্রিজের খারাপ অবস্থা নিয়ে ট্রাফিক পুলিশ একাধিকবার সতর্ক করেছিল পূর্ত দপ্তরকে, কিন্তু অভিযোগ পাওয়ার পরেও ব্রিজ মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেয়নি তারা। দুদিকের জয়েন্ট পিলার থেকে মাঝের স্ল্যাব খুলে ভেঙে পরেছে। ওই স্ল্যাবেই রাস্তার বিটুমিনের আস্তরণ উঠে ব্রিজের মধ্যে গভীর গর্ত তৈরি হয়েছিল, লোহার বিম বেরিয়ে এসেছিল। তার মধ্যেই দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টির জল জমে থেকেছে। মেরামতির অভাবেই ব্রিজটি ভেঙে পড়েছে বলে মনে করছেন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা বিশেষজ্ঞরা। অপরদিকে, লাল বাজার ট্রাফিক কন্ট্রোল ইতিমধ্যেই দ্বিতীয় হুগলী ব্রিজ থেকে আসা সকল পণ্যবাহী জানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে। এমনকি, এন এইচ ৬, চন্দননগর, হুগলী গ্রামীণ, পূর্ব বর্ধমান, ডাইমন্ড হারবার (এন এইচ ১১৭) ও বারুইপুর থেকে আসা জানবাহনের ওপরও কিছু বিধিনিশেধ জারী করেছে। কোন পণ্যবাহীযান যাতে তারাতলা বা মাঝেরহাটের দিকে না যেতে পারে, তাই তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। যেকোনো অসুবিধায় যাতে লালবাজার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। তার জন্য একটি কন্ট্রোল রুমও খোলা হয়েছে, যার হেল্পলাইন নম্বর হল ০৩৩-২২১৪-৩৬৪৪। লালবাজার সুত্রে খবর, উদ্ধার অভিযানে যাতে কোনরূপ বাধাবিঘ্নতা না আসে, তার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ব্রিজের নীচে চাপা পরা লোকজন কে উদ্ধার করতে নেমেছে আধাসামরিক বাহিনী ও পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী।
আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে বজবজ শাখার রেল পরিষেবাও। ব্রিজ ভেঙে যাওয়ার ফলে এলাকাতে প্রবল যানজট সৃষ্টি হয়েছে এবং ছরিয়ে পরেছে প্রবল উত্তেজনা। উপস্থিত এলাকার বাসিন্দারা উগ্রে দেয় চাপা ক্ষোভ। যদিও বা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার কাজ শুরু হয়, কিন্তু সন্ধে হয়ে যাওয়াতে এবং বৃষ্টির জন্য উদ্ধার কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতে মেটাল আলো জ্বালানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসনিক কর্তারা। মেটাল কাটার যন্ত্রপাতি ও এই কাজের পারদর্শী লোকেদের ইতিমধ্যে আনা হয়েছে ও ধ্বংসাবশেষ সরানোর কাজ শুরু হয়েছে।
এই দুর্ঘটনার ফলে সমস্ত পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ফেলে দার্জিলিং থেকে জরুরি ভিত্তিতে কলকাতায় ফিরছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি দ্রুত আর্তদের সেবা ও উদ্ধার কার্যের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর গুলিকে এবং এই বিপদে প্রশাসন কে মাথা ঠান্ডা রেখে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।