34 C
Kolkata
Friday, March 29, 2024
spot_img

বাস্তব সমাজে কি ফিল্মি ছোঁয়া পড়ছে, টিটাগড়ে উবের ঘটনার পর্দা ফাঁস

 

অরিন্দম রায় চৌধুরী, ব্যারাকপুরঃ এ যেন হিন্দি ফিল্মের প্লট। পুরো ঘটনাই এক্কেবারে প্ল্যান মাফিক হয়েছিল। কিন্তু অবশেষে সেই পুলিশের বুদ্ধির কাছে হার স্বীকার করতে হল। ঘটনা প্রবাহ সেই এক মাস আগে ১৬ মে। ব্যারাকপুর মহকুমার টিটাগড় অঞ্চলের বৌবাজার এলাকার বাপের বাড়িতে এসেছিলেন সুমন অর্থাৎ রাজেশ স্বর্ণকারের সহধর্মিণী সুমন স্বর্ণকার ও তার আনুমানিক ১৪ বছরের মেয়ে তানিশা। শ্বশুর বাড়ি ঝাড়খন্ডের গিরিডিতে। সেখান থেকেই তিনি গরমের ছুটি কাটাতে আসেন বাপের বাড়িতে। মাস দেরেক বাপের বাড়ীতে গরমের ছুটি কাটিয়ে গত ২৪ শে জুন সুমন, তানিশাকে নিয়ে ঝাড়খণ্ডে শশুরবাড়ি যাওয়ার জন্য রওনা দেন তিনি। সুমনদেবীর বাপের বাড়ী লোকজন টিটাগড় বিটি রোড থেকে একটি উবের গাড়ি ভাড়া করে দেন তাদের। তাতে চড়েই কোলকাতা স্টেশনের উদ্যেশে রওনা দেয় মা এবং মেয়ে। কিন্তু আশ্চর্য রকম ভাবে এরপর থেকেই দুজনের কারও সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে পারেনি সুমনের বাপের বাড়ীর লোক। বার বার ফোনে চেষ্টা করলেও নম্বরটি পরিষেবা সীমার মধ্যে উপলব্ধি নেই বলে জানাচ্ছিল। অন্তত এমনটাই জানিয়েছিলেন সুমনের ভাই সুনীল শেঠ।

এদিকে স্ত্রী এবং মেয়ের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে স্বামী রাজেশ কুমার স্বর্ণকার যোগাযোগ করেন টিটাগড়ে শ্বশুর বাড়িতে। শ্বশুর বাড়ি থেকে বিষয়টি জানার পরেই পেশায় স্বর্ণ ব্যাবসায়ী রাজেশ কুমার স্বর্ণকারের উদ্বিগ্নতা আরো বেড়ে যায় ও তিনি সোজা টিটাগড়ে শ্বশুর বাড়িতে চলে আসেন স্ত্রী এবং মেয়ের খোঁজে। অনেক খোঁজাখুজির পর তাদের না পেয়ে গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ২৬ শে জুন রাতেই অভিযোগ জানান টিটাগড় থানায়। এই মর্মে একটি মিসিং ডাইরিও করা হয়ে টিটাগড় থানায়। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সেইমত অপহরণের ঘটনার তদন্ত শুরু করে টিটাগড় থানার পুলিশ।

অবশেষে টিটাগড় থানার পুলিশে তৎপরতায় উদ্ধার হল উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর মহকুমার অন্তর্গত টিটাগড় থেকে নিখোঁজ হওয়া মা সুমন স্বর্ণকার ও তার ১৪ বছরের মেয়ে তানিশা স্বর্ণকারকে। গতকাল অর্থাৎ ২৮ শে জুন বিকেলে দমদম এয়ারপোর্টের কাছে একটি হোটেল থেকে টিটাগড় থানার পুলিশের একটি দল সুমন ও তানিশাকে উদ্ধার করে। অপরদিকে হাওড়ার সাঁতরাগাছি থেকে ঝাড়খণ্ডের মায়াঙ্ক মৃণাল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে টিটাগড় থানার পুলিশের অপর একটি দল।

[espro-slider id=10641]

এই ঘটনার পরিপেক্ষিতে তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, সুমনদেবী ও তানিশাকে কোনও গাড়ির চালক বা অন্য কেউ অপহরণ করেনি। ঝাড়খণ্ডের দ্বারভাঙ্গা জেলার রাইয়াম থানার পাছারহি এলাকার বাসিন্দা মায়াঙ্ক মৃণাল নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন সুমনদেবী। গতকাল ২৮শে জুন তাদের দমদম এয়ারপোর্ট এলাকার একটি হোটেল থেকে উদ্ধার করা হয় এবং মায়াঙ্ককে সাঁতরাগাছির একটি হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জেরায় সুমনদেবীর স্বীকার করেন প্রায়ই সুমনদেবীর উপর অত্যাচার করতেন স্বামী রাজেশ। তা সহ্য করতে পারছিলেন না সুমনদেবী। তখনই সোশাল সাইটে মায়াঙ্কের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। পরিচয় পর্বের পর গড়ে ওঠে প্রেম। এরই মাঝে বেশ কয়েকবার ফোনেও কথা হয়েছে সুমন ও মায়াঙ্কের মধ্যে। এরপর স্বামীর অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান তৈরি করেন সুমনদেবী। সেই মত টিটাগড়ে আসতে বলেছিলেন মায়াঙ্ককে। তখনই মেয়েকে নিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে উবের-এ করে পালিয়ে যান সুমনদেবী। অবশেষে ধরা পড়ার পর আজ তাঁদের ব্যারাকপুর এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁদের জামিন দেন।

Related Articles

Stay Connected

17,141FansLike
3,912FollowersFollow
21,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles