36 C
Kolkata
Friday, April 19, 2024
spot_img

চাকরী ও মাধ্যমিকের পাস সার্টিফিকেট দেওয়ার নাম করে প্রতারনায় ধৃত ১ মহিলা

অরিন্দম রায় চৌধুরী ও শর্বাণী দে, বেঙ্গল টুডে

মাঝে মধ্যেই নানা জায়েগা থেকে ধরা পড়ে নকল ডাক্তার যাদের সার্টিফিকেটও পাওয়া যায় নকল, এমনকি কিছুদিন আগেই কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিল সুদূর আসাম থেকে নকল ডাক্তার। আর এবার ধরা পড়লো এই নকল সার্টিফিকেটের মিডিয়েটর তাও খোদ ব্যারাকপুর থেকে। প্রসঙ্গত ব্যারাকপুর পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের জে.আর. আর রোড, পূর্ব কালিয়ানিবাস, ইউ গলির বাসিন্দা টুম্পা সাহা নামে এক মহিলার বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল, স্থানীয় গরীব মানুষদের অস্বচ্চল আর্থিক অবস্থার সুযোগ নিয়ে চাকরী দেওয়ার নাম করে এলাকার বহু গরীব মানুষের থেকে টাকা আত্মসাদ করার কথা, আর এই চাকরী দেবেন এলাকারই নামি-দামি বেসরকারি হাসপাতালে ও তাই চাই অন্তত পক্ষে মাধ্যমিক পাস সার্টিফিকেট।

অভিযোগ এই মাধ্যমিক পাস সার্টিফিকেটও তিনি দিতেন ১০,০০০/- ও ১৫,০০০/- টাকার বিনিময়। আরও অভিযোগ এই কাজে সুদক্ষ টুম্পা সাহা স্থানীয় ভুক্তভোগী কিছু ক্লাস এইট ও নাইন পাস মহিলাকে কিছুদিন ধরেই  চাকরী দেওয়ার কথা বলেন। তবে যেহেতু বেসরকারি হাসপাতালে চাকরী তাই অন্তত মাধ্যমিক পাস হতেই হবে বলে জানান তিনি আর তাই এর জন্য তিনি তার যথাযথ পারিশ্রমিক হিসাবে কারোর থেকে ১০ হাজার আবার কারোর থেকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময় বানিয়ে দেবেন মাধ্যমিক পাস সার্টিফিকেট। টুম্পা সাহার পাতা ফাঁদে পাও দিয়ে দেন এলাকারই তিন মহিলা।

গরীব হওয়ার তাড়নায় প্রথমে তারা মনে করেন যদি একটি চাকরী পেয়ে যান তাহলে হয়েতো হাল ফিরাতে পারবেন তাদের সংসারের, তবে ঘোর কাটে যখন চাকরী না দিয়ে টুম্পা সাহা তাদের একজনের হাতে তুলে দেন নকল সেই মাধ্যমিক পাস সার্টিফিকেট। ওই মহিলা সার্টিফিকেট দেখেই সন্দেহ হওয়ায় এলাকার কাউন্সিলর স্বপন ভট্টাচার্যের কাছে গিয়ে বলেন পুরো ঘটনার কথা। মহিলার কাছে সব শুনে ও সার্টিফিকেট দেখে কাউন্সিলর স্বপন ভট্টাচার্য সহজেই বুঝে যান যে টুম্পা সাহার দেওয়া সার্টিফিকেট ১০০% নকল। স্বপন বাবু ওই মহিলাকে বলেন তিনি টুম্পা সাহা থেকে মহিলার দেওয়া টাকা ফেরত করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন এবং ওই ঘটনার পূর্ণ বিবরণ সহ স্থানীয় টিটাগড় থানায় একটি অভিযোগ করারও পরামর্শ দেন। যথারীতি ১৬ই এপ্রিল ২০১৮ রাত্রে মূল তিন জন ভুক্তভোগী মহিলা স্থানীয় টিটাগড় থানার দাবাং অফিসার ইন চার্জ শঙ্কর চৌধুরীর কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।

অভিজ্ঞ শঙ্কর বাবু সময় নষ্ট না করে একটি স্পেশাল টিম তৈরি করেন যার মধ্যে একদিকে যেমন টিটাগড় থানার পুলিশ কর্মীরা ছিলেন আবার অপরদিকে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েদা দফতরের কর্মীরাও ছিলেন।

পুলিশ সূত্রে খবর ১৭ই এপ্রিল ২০১৮ সকাল আনুমানিক ৭টা নাগাদ সাদা পোশাকে পুলিশের এই স্পেশাল টিমটি টুম্পা সাহার বাড়ীতে হানা দেয়। সেখানে টুম্পা সাহা মারফৎ জানা যায় যে তার স্বামী প্রসেঞ্জিৎ সাহা কলকাতা বিদ্যুৎ সরবারহ কোম্পানিতে কর্মরত এবং সপ্তাহে একদিন করে বাড়ীতে আসেন ও বছর পাঁচেক আগে ব্যারাকপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের জে.আর. আর রোড, পূর্ব কালিয়ানিবাস, ইউ গলি এলাকায় বাড়ি কিনে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের এক কন্যা সন্তানও আছে। তিনি নিজেকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের উচ্চপদস্থ কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেকারদের কাছ থেকে চাকরী দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে টাকা তুলতেন। এরই পাশাপাশি তাদের নকল মাধ্যমিকের পাস সার্টিফিকেটও দিতেন। এভাবেই লক্ষাধিক টাকা তুলেছিলেন বলেও জানা গেছে।

এই দিন ভোরে পুলিশের স্পেশাল টিমকে নেতৃত্ব দেন থানার লেডি সাব ইন্সপেক্টর দেবিকা মণ্ডল, সাথে ছিলেন থানার অপর সাব ইন্সপেক্টর কৌশিক ঘোষ এবং ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা দফতরের সাব ইন্সপেক্টর প্রীতম দত্ত, প্রশান্ত দাস সহ আরও বেশ কিছু পুলিশ কর্মী। এনাদেরই উপস্থিত বুদ্ধি বলে অবশেষে ধৃতকে তার নিজের বাড়ি থেকে হাতেনাতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ধৃতের কাছ থেকে উদ্ধার হয় জাল অর্থাৎ নকল মাধ্যমিক পাস সার্টিফিকেট সহ আরও বেশ কিছু জাল নথি-পত্র। ১৭ই এপ্রিল ধৃতকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে ধৃতকে ৪দিনের পুলিশ হেপাজতের নির্দেশ দেয় আদালত।

সর্বশেষে এই ঘটনা সম্পর্কে ব্যারাকপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর স্বপন ভট্টাচার্য বেঙ্গল টুডের টিমকে জানান "পুলিশ যে ভাবে ধৈর্য ধরে ওৎ পেতে এই ধরনের সমাজের নিকৃষ্টতম অপরাধীকে ধরলো তাতে বলবো পুলিশের এই অভিযান যথেষ্টই প্রশংসনীয়"। তিনি আরও বলেন "বর্তমানে দেখা যাচ্ছে বর্তমান পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ব্যারাকপুর পুলিশ যথেষ্টই তৎপর ও ভাল কাজ করছে। সমাজে এই ধরনের অপকর্মের সাথে যারাই যুক্ত থাকবে, আমি আশা করি পুলিশ আগামীদিনেও এই ধরনের অপকর্মকে শক্ত হাতে দমন করবে। সেই ক্ষেত্রে আমার সহযোগিতা সব সময় প্রশাসনের সাথেই থাকবে। যারা গরীব মানুষকে প্রতারিত করে টাকা আত্মসাৎ করে তাদের আমি ঘৃণার করি ও ঘৃণার চোখে দেখি। আইনত তাই এই মহিলার যা হবার তাই হয়েছে তার জন্য আমি পুলিশের কাছে কৃতজ্ঞ এবং যে সব গরীব মহিলারা এই ধৃত টুম্পা সাহার অপকর্মের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তাদের আমি কুর্নিশ জানাই ও তাদের পাশে আমি সব সময় আছি ও থাকবো। তারা যখনই আমায় ডাকবেন তখনই আমায় পাশে পাবে"

Related Articles

Stay Connected

17,141FansLike
3,912FollowersFollow
21,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles