30 C
Kolkata
Friday, March 29, 2024
spot_img

অমানবিক আচরণ শিক্ষিত সমাজের শিক্ষিত শিক্ষক দম্পতির!

রাজীব মুখার্জী, বারাকপুরঃ ঘরে তালা ঝুলিয়ে মাকে বারান্দায় ফেলে রেখে বেড়াতে চলে গিয়েছে সস্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে। গত বৃহস্পতিবারের এই ঘটনা ঘিরে কয়েকদিন ধরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে বারাকপুরের কালিয়ানিবাস এলাকায়। কথায় আছে ভাগের মা গঙ্গা পায় না। ৩ ছেলের মা ভাগীরথী দেবীর অবস্থাও এইটাই। রায়মনি ভট্টাচার্যের ৩ ছেলে। ছোট ছেলে রতন বেশি আদরের। তাই তাঁকেই সর্বস্ব দিয়ে দেন মা। সেই রাগে দুই ছেলে ফিরেও তাকায় না বৃদ্ধা মায়ের দিকে। মাকে ঘরের থেকে বাইরে বের করে আসাম ঘুরতে গেলেন ছেলে ও বৌমা। বিষয়টি প্রকাশ্যে হয়তো আসতো না যদি টানা দুদিন না খেয়ে, খিদের জ্বালাতে না কাঁদতেন। ২ দিন শুধু শুকনো মুড়ি খেয়ে কাটিয়েছেন, তৃতীয় দিনে সেই মুড়িও শেষ হয়ে যাওয়ার পরে খিদের জ্বালায় আর চোখের জল ধরে রাখতেপারেননি এই অশীতিপর বৃদ্ধা। রাসমণি কে রাস্তায় বসে কাঁদতে দেখে কৌতূহল বসত পাড়ার লোকেরা এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করলে ফাঁস হয় ছেলের কীর্তি।

অসহায় বৃদ্ধার কান্না শুনে অবশেষে এগিয়ে আসেন বাড়ির মালিক ও এলাকার মানুষজন। খবর পেয়ে বৃদ্ধার ২ বেলার খাবারের দায়িত্ব নেন রতনের স্কুলের প্রিন্সিপাল কুণাল ঘটক। নিজের ছেলেরা দেখে না। বাইরের লোকজন কত যত্ন নিচ্ছে। এই আবেগ ধরে রাখতে পারেননি অশীতিপর এই বৃদ্ধা, হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি৷ অভিযোগ, বৃদ্ধার উপরে ছেলে বৌমার শারীরিক অত্যাচার চলে। গত বছরে শীতকালে রাতের বেলায় ঘর থেকে বের করে দিতেও কুন্ঠা বোধ করেন নি পেশায় শিক্ষক পুত্র। গরমে তার ঘরের পাখা বন্ধ রাখা হতো যাতে ইলেক্ট্রিকের বিল বেশি না আসে। ছেলের সন্মান নষ্ট হওয়ার ভয়ে কাউকে কিছু জানাননি এই মাতৃস্নেহে আপ্লুত মা। ৭০ বছরের রাসমণি দেবীর স্বামী মারা গেছেন অনেক বছর আগেই। ৩ ছেলে কে নিয়ে অনেক কষ্টের সংসারে তাদের বড়ো করেছেন। দুই ছেলে থাকে ইছাপুরে। যোগাযোগ সেভাবে রাখে না।

এলাকার পৌর প্রতিনিধি অজবীথি বিশ্বাসের তৎপরতায় আপাতত তার ঠাঁই হয়েছে এক স্কুল শিক্ষিকা প্রতিবেশীর বাড়িতে। ব্যারাকপুরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কালিয়ানিবাসে ছোট্ট ছেলে রতন ও তার স্ত্রী স্বাতীর সাথে থাকেন তিনি। রতন এবং তার স্ত্রী দুজনেই একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতা করার যোগ্যতা এদের আছে কিনা!, স্বাভাবিক ভাবেই এই প্রশ্নতা তুলছে স্থানীয়রা। এই দম্পতি ১০ দিনের জন্য আসাম ঘুরতে যাওয়ার আগে মায়ের কোনো বন্দোবস্ত করতে পারেন নি। তাই মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘুরতে যাওয়াটাই তাদের কাছে সহজ সমাধান লেগেছে। এরম অমানবিক ব্যবহার এই সমাজের একজন শিক্ষকের থেকে আসা করা যায়না, আগামী ভবিষ্যতের শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে এই শিক্ষক দম্পতি। অজবীথি বলেন, “শনিবার ঘটনাটি জানতে পারি। রতন ও স্বাতীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওরা ফিরলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ব্যারাকপুরের পৌর প্রধান উত্তম দাস বলেন, “ঘটনাটি খুব নিন্দনীয়, পুলিশ কে বলেছি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে।” টিটাগড় থানার এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখে হবে এবং বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপাতত সকলেই ছেলে আর বৌমার ফেরত আসার অপেক্ষায়। ঘটনাটি নজরে আসে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের৷ এরপরই দলের দুই যুবনেতাকে তিনি নির্দেশ দেন বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ানোর৷ সোমবার রাতেই বৃদ্ধার বাড়িতে ফল, মিষ্টি ও শাড়ি পাঠান অভিষেক৷ সমাজ আমরা তৈরি করেছি, আর যে সামাজিকতার দোহাই দিয়ে আমরা জীবন কাটাচ্ছি। সেই সমাজ কে কতটা মানবিক করে তুলতে পেরেছি? একজন শিক্ষক দম্পতির থেকে যে অমানবিক আচরণ প্রকাশ্যে এলো, তাতে যথেষ্ট লজ্জার মুখে পরতে হল শিক্ষকতা কে।

Related Articles

Stay Connected

17,141FansLike
3,912FollowersFollow
21,000SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles