শর্বাণী দে, ব্যারাকপুরঃ যেমন কথা তেমনই কাজ। গত ১০ই জুন, রবিবার ব্যারাকপুর সদরবাজার নয়াবস্তি এলাকায় একাধারে যেমন ঈদ উপলক্ষে সংখ্যালঘুদের হাতে নতুন জামাকাপড় তুলে দেওয়া হয়েছিল আবার তেমনই এলাকার গরিব ঘরের মেয়েদের ৩মাসের সেলাই শিক্ষান্তে তুলে দেওয়া হয় সার্টিফিকেট। আর সেখানেই উপস্থিত ব্যারাকপুর এর মহকুমা শাসক পিযুস গোস্বামী বলেছিলেন, “আমার আশা এই কর্মকাণ্ড ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই মহিলারা তাদের জীবনে নিজেরা স্বনির্ভর হয়ে উঠবেন।” এছাড়া তিনি আরও জানান “রাজ্য সরকার এই ধরনের কাজের জন্য যে কোন সাহায্যর জন্য এগিয়ে আসবে। উদ্যোগতারা যদি চান এই বিষয়ে যোগাযোগও করতে পারেন।”
এরপরই সময় নষ্ট না করে উদ্যোগতারা গিয়ে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট দফতরের সাথে আর তারপরই ১৮ই জুন ব্যারাকপুর সদরবাজার নয়াবস্তির মহাবীর সমিতির ক্লাব প্রাঙ্গণে মহাবীর সমিতি ও বাল্মীকি সমাজ কল্যাণ সমিতির যৌথভাবে আয়োজিত হয় এই সমস্ত মানুষদের সুবিধার্থে তাদের অনগ্রসর শ্রেণী ভুক্ত সাটিফিকেট তৈরির জন্য বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করার এক বিশেষ শিবির। সহযোগিতায় ছিল মহকুমা শাসক পীযুষ গোস্বামীর আদেশনুসারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনগ্রসর শ্রেণী কল্যাণ বিভাগের কর্মীরা।
এই বিশেষ শিবিরে উপস্থিত এডিশনাল ইন্সপেক্টর অশোক কুমার মজুমদার বলেন, “এই পরিকল্পনায় এদিন এলাকার সমস্ত অনগ্রসর শ্রেণীর গরীব মানুষদের থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং ১ মাস অর্থাৎ ৪ সপ্তাহের মধ্যে সেই সার্টিফিকেট মানুষদের হাতে তুলে দেওয়া হবে।” এছাড়া তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে এই সমস্ত সংখ্যালঘু মানুষদের আরও সচেতন হয়ে উঠতে হবে। যাতে রাজ্য সরকার এই সমস্ত মানুষদের সুবিধার জন্য দিন দিন যে সমস্ত নতুন নতুন প্রকল্প গড়ে তুলেছেন তার সঠিক প্রয়োগ করা যেতে পারে। এদিন এই শিবিরে বেলা ১টা পর্যন্ত প্রায় বেশিরভাগ সংখ্যালঘু মানুষ তাদের সার্টিফিকেট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য জমা করে গেছেন।”
এরই পাশাপাশি তিনি জানান, “আজ এখানে বেলা ১২টা থেকে শুরু হয়েছে এই বিশেষ শিবির ও বিকেল ৪টে পর্যন্ত এই শিবিরে সার্টিফিকেট তৈরির জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এরপর বাকি যারা থাকবেন তাদেরকে অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে। প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার ব্যারাকপুরে মহকুমা শাসকের অফিসে ১৯নং ও ২৬নং ঘরে সার্টিফিকেট তৈরির জন্য এই তথ্য জমা নেওয়া হবে।”
অশোক বাবু বেশ আক্ষেপের সুরেই বলেন, “সরকার থেকে এতো সুযোগ-সুবিধা এই অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য দিচ্ছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত বহু মানুষ এই বিষয়ে সচেতনই নন। আর এই বিষয় পৌরসভা গুলিরও কোন হেলদোল নেই, তাই প্রতিটি পুরসভার পক্ষ থেকে এই বিষয়ে উদ্যোগ নিলে প্রকৃত যারা গরীব পিছিয়ে পড়া মানুষ আমাদের সমাজে আছেন তাদের অনেক সুবিধা হবে।”
[espro-slider id=10104]
অশোকবাবু যদিও এই মহাবীর সমতির সদস্য ও কর্মকর্তাদের প্রতি দেখা গেল বেশ আশাবাদী। তিনি বলেন, “এনারা যে উদ্যোগ আজ নিয়েছেন তা সত্যি সাধুবাদের যোগ্য। এনারা আমাদের আজ এই শিবিরে সবরকম ভাবে সহযোগিতা করছেন। বিশেষ করে আমি সাধুবাদ জানাই মহাবীর সমতির কর্মকর্তা শিবু যাদব ও বাল্মীকি সমাজ কল্যাণ সমিতির কর্মকর্তা সুজিত বাল্মীকিকে। এনারা যে এই সব গরীব পিছিয়ে পড়া মানুষদের কথা ভাবছেন তা ভেবেই ভাল লাগছে।”
যে সুশৃঙ্খলভাবে দেখা গেল সকল মানুষ অপেক্ষা করে অনগ্রসর জাতীর শংসাপত্র পাওয়ার স্বপক্ষে নিজেদের তথ্য পেশ করছিল তা চোখে পড়ার মত। যারা নির্দিষ্ট ফর্ম ফিলাপ করতে পারছিলেন না তাদের সহযোগিতার জন্য পাশে স্বহাস্যে গিয়ে দাঁড়াচ্ছিল মহাবীর সমিতির সদস্যরা। এই গরমে যাতে মানুষের কষ্ট না হয়ে তার জন্য দেখা গেল পর্যাপ্ত পাখা ও বসার আসনের ব্যাবস্থা করা হয়েছিল মহাবীর সমিতির তরফ থেকে।
আজকের এই কর্মকাণ্ড যার নেতৃত্বে হলো সেই শিবু যাদব ও সুজিত বাল্মীকিকে আর যাই বলা যাক সমাজের এই পিছিয়ে পড়া মানুষদের উন্নতি সাধনের ক্ষেত্রে তাদের জুড়ি যে মেলা ভার তা বলাই বাহুল্য।